- আসেন ইসলামের ছায়াতলে।
- কেন ভাই, কুপাকুপি করতে?
- এইটা কী বলেন ভাইজান? কুফরি কথাবার্তা!
- দেখুন ধর্মের নামে কুপাকুপি হচ্ছে তো, নাকি মিথ্যা বলছি?
- তা হচ্ছে।
- হচ্ছে মানে ভালোমতই হচ্ছে। আপনারা শিয়া হয়ে সুন্নি মারেন, নয়ত সুন্নি হয়ে শিয়া মারেন। এক দল আরেকদলকে বোম মারেন। এক ফেরকা আরেক ফেরকার উপর হামলা করেন। এক পীরের মুরিদ আরেক পীরের মুরিদকে রাস্তায় ফেলে পিটান- তাতে কিছু হচ্ছে না, আমি সত্যটা বললেই কুফরি কথা হয়ে গেল?
- ভাইজান ইসলামে কুপাকুপি নাই। ইসলামের ছায়াতলে আসেন। দেখবেন ইসলাম কত শান্তির ধর্ম।
- তাহলে শান্তি নেই কেন?
- শান্তি নেই মানে? কী বলেন আপনি? অবশ্যই শান্তি আছে। মসজিদে আসেন। নামাজ পড়েন। হালকায়ে জিকির করেন।
- তার মানে মসজিদের বাইরে শান্তির দরকার নাই?
- ভাইজান, সবখানেই শান্তি পাইবেন। আগে আল্লাহর মহব্বতে দিল মশগুল করেন। দেখবেন দিল হালকা হবে।
- আরে ভাই, দিল হালকা তো গাঁজা খেলেও হয়। দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকা যায়। আমি ওই শান্তির কথা বলিনি। আমি বলছি সমাজের শান্তির কথা। ওই যে ভুখা-নাঙ্গা মানুষ দেখছেন, আমি বলছি তাদের কথা। ওদের পকেটে পয়সা নাই, পরনে বস্ত্র নাই, পেটে খাদ্য নাই, মাথার ওপর ছাদ নাই। খোদার প্রেমে মশগুল হলেই ওরা শান্তি পাবে? মসজিদে আসলে ওদের খাবার দিবেন আপনারা? বস্ত্র দিবেন? বাসস্থান দিবেন? সামান্য টয়লেটের দরজাতেই যেখানে তালা ঝুলিয়ে রাখেন।
- ভাই, ওইসব তো সরকারের কাজ। মসজিদ তো সরকার চালায় না।
- শান্তি দেওয়াও তো সরকারের কাজ। তাহলে শান্তির ধর্ম বলেন কেন? বলবেন মসজিদের ধর্ম। মেডিটেশনের ধর্ম!
- ভাই ইসলামের ছায়াতলে আসলে আপনি. . .
- রাখেন আপনার ছায়াতল। সেই ছায়াতলে মানুষ কেন যাবে যেখানে অনাহারীকে ক্ষুধা চেপে রেখে কোটিপতির পাশে নামাজে দাঁড়াতে হয়?
- ভাইজান, কিছু মনে কইরেন না। আপনি কি নাস্তিক?
- এই তো আসল কথায় আসলেন। আমাকে নাস্তিক সন্দেহ হচ্ছে। কারণ আমি যুক্তি দেখাচ্ছি। নিপীড়িত মানুষের কথা বলছি। অথচ এই নিপীড়িত মানুষ নিয়ে ভাবার কথা ছিল আপনাদের। আল্লাহর রসুল নিপীড়িত বেলালকে কাবার ছাদে উঠিয়েছিলেন! কুরাইশদের অহংকার চুর্ণ করে তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন- ‘সত্যনিষ্ঠ মানুষের সম্মান কাবারও ঊর্ধ্বে।’ সেই আদর্শ আপনারা খুইয়েছেন। ফিরে গেছেন আইয়ামে জাহেলিয়াতের পর্বে। ইসলামের আগে কুরাইশরা আপনাদের মতই খুব ধর্মকর্ম করত। আচার-প্রথা মেনে চলত। তারাও ঈশ্বরের উপাসনা করত। ওসব করে খুব আত্মার প্রশান্তি পেত। কিন্তু সমাজ ছিল অশান্তিময়। আল্লাহর রসুল সংগ্রাম করে দেখিয়ে দিলেন ধর্মের কাজ দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়কে তুষ্ট রাখা নয়, দুঃখ-কষ্টকে দূর করা। পারলে সেই ইসলামের দিকে মানুষকে ডাকুন, সেই ইসলামের ছায়াতলে শোষিত, বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, নিপীড়িত মানুষকে সমবেত করুন। তাহলে আস্তিক হিসেবে আমাকে তো পাবেনই, আমার ধারণা নাস্তিকদেরও পাবেন।
No comments:
Post a Comment