Saturday, May 12, 2018

এলেমের মূল্য!

- হুজুর, বিষয়টা কিন্তু গুরুতর। শুধু আমার না, প্রশ্নটা সবার মনেই উঁকি দিচ্ছে।
- উঁকি তো দিবেই। ইবলিস তো বইসা নাই। ইবলিসের প্রধান কাজ হইল আলেমদের বিরুদ্ধে পাবলিকের মনে সন্দেহ ঢুকায় দেওয়া।
- সেজন্যই হুজুর, আপনার মুখ খোলা দরকার।
- শোনো বাবা! আমার মুখ খোলাই আছে। কিন্তু একজন ইমাম সাহেব নামাজ পড়াইলে তারে বেতন দিতে হয়- এইটাও কি সবাইরে শিখাইতে হইব? বড়ই দুঃখজনক কথাবার্তা!
- হুজুর, আমরা গুনাহগার মানুষ। বোঝেনই তো!
- বুঝি বইলাই তো বিপদ হইছে। সবকিছু আমারেই বুঝতে হয়, আবার তোমাগোরেও বুঝাইতে হয়। যাই হোক- মন দিয়া শোনো আল্লাহর বান্দারা। এই যে আমি তোমাদের নামাজ পড়াই, এর ন্যায্য মূল্য তোমরা কোনোদিনই দিতে পারবা না। ধরো, দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ একদিকে আর নামাজ আরেকদিকে- কোনটা বেশি ভারী হইব কও দেহি?
- হুজুর, অবশ্যই নামাজ বেশি ভারী হবে।
- তাই যদি হয়, তাইলে ইমাম সাহেবের হাতে কয়েক হাজার টাকা দিয়াই কেন ভাবো নামাজের বেতন দিয়া দিলাম? এইটা ফাসেকী চিন্তা-ভাবনা। নামাজের বেতন তোমরা কোনোদিনই দিতে পারবা না। আকাশের চাঁদ আইনা দিলেও পারবা না। হীরার পাহাড় কাইটা দিলেও পারবা না।
- তা অবশ্য ঠিক।
- পাঁচ/দশ হাজার যা পাই, সেইটারে বেতন বলা হইলেও বেতন কিন্তু না। ওইটা হইল হাদিয়া। সমাজের দশজন মানুষের নামাজে ইমামতি করি। আমারও তো ঘর-সংসার আছে, বউ বাচ্চা আছে, নাকি নাই?

- তা তো আছে হুজুর।
- তারা কি না খাইয়া থাকব? তাগো ক্ষুধা লাগে না? পরনের কাপড় চোপড় লাগে না? বাড়িঘরে থাকা লাগে না? এইটা যদি সমাজের দশজনে না দেখে তাইলে কেমনে চলব?
- কিন্তু হুজুর! নামাজ তো সারাদিনের কাজ না। মাত্র কয়েক মিনিটের কাজ। বাকি সারাটা দিন তো পড়েই থাকে রোজগার করার জন্য।
- আমি রোজগার করব?
- হুজুর, মনে কিছু নিয়েন না। আপনাকে রোজগার করতেই হবে তা বলিনি। তবে করলে ভালো হয়। আপনি হুজুর মানুষ, সবার সম্মানের পাত্র। আপনার মত একজন সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব অন্যের দয়া-দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করে থাকলে ভালো দেখায় না!
- হায়রে মুসলমান! এজন্যই তো কই! তোমরা এখনও এলেমের মূল্যই বুঝলা না। এইখানে দয়া-দাক্ষিণ্যের কী আছে। এই যে আমি জীবনের অর্ধেকটা সময় দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে এলেম অর্জন কইরা আলেম হইলাম, আমি কি পারতাম না অন্য কিছু হইতে?
- তা অবশ্য পারতেন।
- আমি ডাক্তারও তো হইতে পারতাম। ইঞ্জিনিয়ার হইতে পারতাম। ইংরেজি মাধ্যমে পইড়া সরকারি অফিসার-টফিসার হইতে পারতাম। রোজগার পাতি নিয়া আমারে কোনো চিন্তাই করতে হইত না। কিন্তু আমি কী হইলাম? আলেম হইলাম। সারাজীবন কোর’আন হাদিস শিখলাম, ফিকাহ শিখলাম, আরবি ফারসি শিখলাম। জানি এইগুলা দিয়া ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওন যায় না, লাখ লাখ টানা ইনকাম করন যায় না। তারপরও শিখলাম ইসলামের জন্য। এইটা কি আমার অপরাধ?
- হুজুর, গুস্তাখি মাফ করবেন। আমি অপরাধের কথা বলি নাই। আমি চাই আপনি অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকুন। তাছাড়া রোজগারের জন্য আপনাকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এমন তো কথা নেই। মানুষ তো কায়িক শ্রম দিয়েও পরিবারের ভরণ-পোষণ করছে। তারা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েও নিজের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারে, আপনি কেন পারবেন না?
- কী সাংঘাতিক কথাবার্তা! সবার সাথে তুমি আমারে মিলাইতেছো? একজন আলেম রাস্তায় রাস্তায় হকারী কইরা বেড়াইব, জুতা সেলাই করব, চটপটি বেইচা বেড়াইব! তোমার মাথা ঠিক আছে?
- হুজুর, কোনো কাজকেই কিন্তু ছোট করে দেখা উচিত নয়। আমাদের নবীজী বকরি চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন, তার কিন্তু আত্মসম্মানে আঘাত লাগেনি। সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে, আপনাকে নামাজের ইমামতি করাতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ এই কাজ তো আপনার জন্য ফরদ নয়। ফরদ হচ্ছে পরিবারের মুখে হালাল রোজগার করে খাবার তুলে দেওয়া। ফরদ ছেড়ে দিয়ে নফল নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? আপনি আলেম মানুষ, আপনিই ভালো জানেন বিষয়টা।
- সেইটাই মাথায় রাইখো। আলেম হিসেবে আমি অনেক কিছুই জানি, যেইটা তোমরা জানো না। আর এই কারণেই আলেম হইয়া পড়ছি এক বিপদে। কথায় কথায় প্রশ্ন, কথায় কথায় সন্দেহ। একজন আলেমের জন্য দশটা হাজার টাকা খরচ করতে তোমাগো কলিজা ফাইটা যাইতেছে- আখেরী জামানায় আরও কত কী দেখতে হইব কে জানে! 😒

No comments:

Post a Comment