Monday, May 7, 2018

বেদাত

- শোনো হে মুসল্লিগণ! ইসলামে শবে বরাত নাই। এইটা নিঃসন্দেহে বেদাত।
- হুজুর বেদাত আবার কী বস্তু?
- বেদাত হইল ইসলামের মধ্যে নতুন কালচার চালু করা।
- নতুন কালচার মানে?
- আল্লাহর রসুল যেই ইসলাম নিয়া আসছেন সেইটা হইল পরিপূর্ণ ইসলাম। নতুন করে ওইটাতে কিছু যোগ করনের সুযোগ নাই। আল্লাহর রসুল সারাজীবন যেই কাজ কইরা গেছেন, তাঁর আসহাবরা কইরা গেছেন, সেইটা ছাড়াও নতুন কিছু চালু করলে সেইটাই বেদাত।
- ও আচ্ছা আচ্ছা।
- এই যে চারদিকে ধুমধাম কইরা উৎসবের মতন শবে বরাত পালন করা হইতেছে- ইহা কি নবীজীর জামানায় ছিল? কেউ ইতিহাস থেইকা দেখাইতে পারবা? আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। আবার দ্যাখো এই যে হাজার হাজার পীর, মাজার-দরগা, হুজরা-খানকা, এইসব কি নবীজীর আমলে ছিল?
- হুজুর এগুলোও কি তাহলে বেদাত?
- আলবৎ বেদাত। শেরকের সমান কবীরা গুনাহ।
- তাহলে তো বড়ই চিন্তার বিষয় হুজুর। কত মানুষ না জেনে পাপের ভাগী হচ্ছে।
- এজন্যই বাতিলের বিরুদ্ধে হুংকার দিতে হইব। শোনো বাবারা, তোমরা হইলা তরুণ প্রজন্ম, তোমাগোরেই আগায়া আসতে হবে। তাইলে দেখবা কোনো বাতিল মাজারপুজারী, পীরপূজারী, বেদাতী বাংলার জমিনে ঠাঁই পাইব না।
- ইনশা’আল্লাহ হুজুর, আমাদের জন্য দোয়া কইরেন।
- অবশ্যই দোয়া করি। ফি আমানিল্লাহ।
- আচ্ছা হুজুর, একটা কথা মনে পড়ল। আপনি বেদাতের যেই সংজ্ঞা দিলেন সেই মোতাবেক আরও অনেক কিছুই বেদাত হবার কথা। নবীজীর যুগে যেমন পীর-মুরীদ ছিল না, তেমনি তো ‘মাওলানা’ ‘মুফাসসির’ ‘মুহাদ্দিস’ ‘মুফতি’ এসবও ছিল না। কোনো সাহাবীর নামের আগে মাওলানা, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ‍মুফতি ছিল না। তাহলে নামের সাথে এই টাইটেল জুড়ে দেওয়ার কালচার কি বেদাত হয় না?
- আরে না না! তা হবে কেন? এইসব তো হইল গিয়া ডিগ্রি।
- ও আচ্ছা। আরেকটা বিষয় বলি। নামাজে ইমামতি করা, মুর্দা দাফন করা, বিয়ে পড়ানো, কুরবানির পশু জবাই দেওয়া, ওয়াজ করা, মিলাদ পড়ানো ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মীয় কাজের জন্য আমরা আপনাদের দারস্থ হই। বিভিন্ন ধর্মীয় মাসলা-মাসায়েল জানার জন্যও আপনাদের কাছে যাই। এই যে মুসলমান জাতির মধ্যে দুইটি ভাগ হয়ে গেল- এক ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ, আরেক ভাগ আলেম-মাওলানা শ্রেণি, এই ভাগাভাগি তো আল্লাহর রসুলের জামানায় ছিল না। কিছু মানুষ সারাজীবন ধর্মীয় বই-পুস্তক নিয়ে পড়ে থাকবে, পাণ্ডিত্য অর্জন করবে, মাসলা-মাসায়েল তৈরি করবে, আর বৃহৎ জনসাধারণ ওই শ্রেণির অনুসরণ করতে থাকবে এমন সিস্টেম রসুলের আসহাবদের মধ্যে ছিল কি?
- আরে বাপু, তুমি তো দেখি কিছুই বুঝ নাই।

- বুঝি নাই বলেই তো প্রশ্ন করছি হুজুর। প্রশ্ন আরও আছে।

- (হুজরের দীর্ঘশ্বাস)

- হুজুর, খ্রিষ্টানদের মধ্যে একটা নিয়ম ছিল যে, রাষ্ট্রের নেতা একজন, ধর্মের নেতা আরেকজন। এই খ্রিষ্টধর্মীয় কালচার কিন্তু রসুলের জামানায় ছিল না। ইতিহাসে আমরা পাই, রসুলাল্লাহ ও তাঁর আসহাবরা যখন জীবিত ছিলেন তখন যিনি ছিলেন সমাজের ইমাম, তিনিই ছিলেন মসজিদের ইমাম। রাষ্ট্রীয় নেতার বিপরীতে ‘ধর্মীয় নেতা’ নামে কোনো শ্রেণির অস্তিত্ব ওই ইসলামে ছিল না। তাহলে তো দেখা যাচ্ছে এই পুরোহিত শ্রেণিটি নিজেরাই ইসলামে গজিয়ে ওঠা নতুন কালচার অর্থাৎ বেদাত। তাই নয় কি?

- এই থামো থামো। তুমি তো . . .

- আরেকটা কথা হুজুর। টাকা দিয়ে মাওলানা ‘ভাড়া’ করে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করার কালচারও রসুল ও তাঁর সাহাবীদের জীবদ্দশায় ছিল না। এটাও কি বেদাত নয়? বলা হয়ে থাকে প্রত্যেক মুসলমানকে মাজহাব মানতেই হবে, অথচ রসুলের যুগে কোনো মাজহাবই ছিল না। শিয়া-সুন্নি-ওহাবী-আহলে হাদিস ইত্যাদি ফেরকাও ছিল না। এই সমস্তই রসুলের ইন্তেকালের বহু পরে চালু হওয়া কালচার। এগুলো তাহলে কেন ‘বেদাত’ হবে না? যেই যুক্তিতে আপনি শবে বরাতকে বেদাত বললেন, একই যুক্তি এখানেও তো খাটে।

- না না না। তুমি আসলে কিছুই বুঝ নাই। তোমারে অন্য এক সময় ভালোভাবে বুঝাইতে হবে। আপাতত তুমি চুপ থাকো। কোনো কথাই বলবা না আর। আমি অন্যদের বুঝাই।

No comments:

Post a Comment