Wednesday, May 2, 2018

সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি

- হুজুর, একটা সিরিয়াস প্রশ্ন আছে। জবাবটা দিলে আমার বহুত ফায়দা হইত।
- মাশা’আল্লাহ! বলো বলো। আমি জবাব দিচ্ছি।
- হুজুর, আমরা মুসলমানরা তো আল্লাহর সবচাইতে প্রিয় বান্দা- কথা ঠিক কিনা?
- ঠিক মানে? মহাঠিক।
- কিন্তু আমার তা বিশ্বাস হয় না। মনে হয় কথাটা মিথ্যা।
- নাউজুবিল্লাহ। শোনো বাবা, এর চাইতে বড় সত্য আসমান-জমিনে নাই। অন্য সমস্ত জাতি নরকে যাবে, আমরাই আল্লাহর খাস বান্দা, মরণের সাথে সাথে জান্নাতে দাখিল। জান্নাতের অগণিত রহমত-নেয়ামত সব আল্লাহ কাদের জন্য সাজায়ে রাখছেন? আমাদেরই জন্য। সবাই বলো সুবহানাল্লাহ।
- সুবহানাল্লাহ। কিন্তু তাহলে সারা পৃথিবীতে আমরা মার খাচ্ছি কেন? যেনতেন মার না, যাকে বলে পাইকারি মার। ফুটবলের মত সবাই আমাদের লাথি মারে। এইটা তো হুজুর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির পরিচয় না, গোলাম জাতির পরিচয়।
- ও আচ্ছা, এই কথা?
- জ্বি, এটাই কথা। আমার মনে হয় কোনো ঘাপলা আছে।
- বাবারে, কোনো ঘাপলা নাই। ঘটনা আর কিছু না- আল্লাহর পরীক্ষা। তিনি তাঁর খাস বান্দাদের পরীক্ষা নিতেছেন। তিনি দেখেন তাঁর বান্দারা বিপদের সময় তাকে ভুলে যায় নাকি মনে রাখে।
- তাই বলে শতাব্দীর পর শতাব্দী অন্য জাতির গোলামী করিয়ে পরীক্ষা নিবেন? কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে মানুষকে ন্যায়ের আদেশ আর অন্যায় থেকে বিরত রাখার জন্য।’ এটাই যদি আমাদের জাতিগত দায়িত্ব হয় তাহলে আমাদের ভাগ্যে গোলামী কেন? গোলাম কখনও মনিবকে ন্যায়ের আদেশ দিতে পারে? অন্যায় থেকে বিরত রাখতে পারে?
- বাপুরে, এজন্যই কথায় আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকর। কোর’আনের আয়াত শোনাও আমারে, আমি কি কোর’আন না পইড়াই মাওলানা হইছি? মানুষ হুদাহুদিই আমারে ওয়াজের দাওয়াত দেয়? দুই পাতা বাংলা কোর’আন পইড়াই তোমরা মনে কর, সব বোঝা হয়ে গেছে। বড়ই দুঃখের কথা।
- হুজুর, মনে কষ্ট নিয়েন না। আর বাংলা কোর’আন আউড়ে আপনার এলেমের মর্যাদা নষ্ট করব না। আপনি জবাবটা দিয়ে দেন।
- শোনো বাবা, আল্লাহর রসুল বলেছেন, দুনিয়া মো’মেনের জেলখানা, কাফেরদের জান্নাত। কাজেই দুনিয়া কাফেরের, পরকাল আমাদের। মরণের পরে দেখবা আসল খেলা।
- কিন্তু হুজুর, ইতিহাস তো অন্য কথা বলে। আল্লাহর রসুল নিজেই ‘দুনিয়া’ করে গেলেন। যুদ্ধ করলেন, আরব উপদ্বীপ শাসন করলেন। বিচারকার্য করলেন। সেনাপতিত্ব করলেন। সারা আরবের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হলেন। তাঁর সাহাবীরা যুদ্ধ করে রোমান পারস্যের সৈন্যদের পরাজিত করলেন, অর্ধদুনিয়া শাসন করলেন। প্রবল প্রতাপ আর গতিশীল পদচারণায় সমস্ত পৃথিবীতে আলোড়ন ফেলে দিলেন। তাদের সমস্ত জীবনটাই তো কাটল দুনিয়া নিয়ে। তার মানে কি তাদের পরকাল নেই? (নাউজুবিল্লাহ)
- না মানে ব্যাপারটা হইল গিয়া . . .
- ও আরেকটা কথা, ওই জাতির মধ্যে এত ভালো ভালো ঈমানদার ছিলেন, তারা তো কারো গোলাম হলেন না। বরং যারা আগে গোলাম ছিলেন তারা মুক্ত হয়ে গেলেন। তাদের নারীরা ধর্ষিতা হলেন না। তাদের শিশুদের লাশ সমুদ্রে ভাসল না। দুনিয়ায় তারা পরিণত হলেন সবচাইতে সম্মানিত জাতিতে। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা নেবার প্রয়োজনবোধ করলেন না, পরীক্ষা নিচ্ছেন কিনা আমাদের মত দুর্বলচিত্তের মুসলমানের, তাও আবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে! কথাটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?
- দ্যাখো বাবা, সবকিছু বুঝতে যাওয়া উচিত না। সমস্তকিছু আল্লাহর এখতিয়ার, তার অনুমতি ছাড়া গাছের পাতাটাও নড়ে না। আল্লাহই ভালো জানেন কেন এমন হচ্ছে। যা হোক - তুমি এখন যাও। আমি জিকির করব।

No comments:

Post a Comment