১.
একটি জ্বালাময়ী সমাবেশের আয়োজন করেছে ‘নিখিল বঙ্গ মর্দে মুজাহিদ কমিটি’। তাতে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দানের কথা রয়েছে বিশিষ্ট ইসলামের খাদেম, মুফতিয়ে আজম, বাতেলের আতংক,পীরে আজম, মর্দে মুজাহিদ, তাগুদের কিরমনি, কুতুবে রাব্বানি, আলেম কুলের শিরোমণির।
একটি জ্বালাময়ী সমাবেশের আয়োজন করেছে ‘নিখিল বঙ্গ মর্দে মুজাহিদ কমিটি’। তাতে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দানের কথা রয়েছে বিশিষ্ট ইসলামের খাদেম, মুফতিয়ে আজম, বাতেলের আতংক,পীরে আজম, মর্দে মুজাহিদ, তাগুদের কিরমনি, কুতুবে রাব্বানি, আলেম কুলের শিরোমণির।
তিনি একপা দুইপা করে মঞ্চের দিকে এগোচ্ছেন। চারিদিকে লাখো জনতার চাপা নিঃশ্বাস। তারা একবার মঞ্চের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার পেছনের বটগাছটার দিকে তাকাচ্ছে। কারণ বটগাছের গোড়ায় আস্তানা গেড়েছে দাঙ্গা পুলিশ। তাদের মতিগতি সন্দেহজনক!
ভাষণ শুরু হয়েছে। ক্রমেই শক্ত হয়ে উঠছে মাওলানা সাহেবের চেহারা মোবারক। তিনি হঠাতই হুংকার দিয়ে উঠবেন তা সবাই জানে, কিন্তু কখন দিবেন তা কারো জানার কথা নয়। জনতা সেই সময়ের প্রতীক্ষায়।
২.
প্রতীক্ষার প্রহর বেশি দীর্ঘ হলো না। অচীরেই বাংলার সিংহপুরুষ সিংহনাদ দিতে লাগলেন। বাংঁলার মর্দে মুজাহিদ তওহীদী জঁনতার কাছে আমি জানতে চাই, ওঁহে মুসলমান ভাঁইয়েরা, তোমাদের গাঁয়ে কিঁসের রঁক্ত?
প্রতীক্ষার প্রহর বেশি দীর্ঘ হলো না। অচীরেই বাংলার সিংহপুরুষ সিংহনাদ দিতে লাগলেন। বাংঁলার মর্দে মুজাহিদ তওহীদী জঁনতার কাছে আমি জানতে চাই, ওঁহে মুসলমান ভাঁইয়েরা, তোমাদের গাঁয়ে কিঁসের রঁক্ত?
- মুসলমানের রক্ত হুজুর। (জনতা টগবগিয়ে উঠল)
- সেই মুসলমানের রঁক্তের নামে শঁপথ করে বলতে চাই, মাননীয় প্রঁধানমন্ত্রী, আঁপনি যদি রক্ত চান, আমরা রঁক্ত দিতে পারি। যদি লাশ চান, লাশ ফেঁলতে পারি। যদি হঁরতাল চান, হঁরতাল দিতে পারি। অঁবরোধ চান অঁবরোধ দিতে পারি। যদি এই মুসলমানের জমিন থেকে নাস্তিক মুঁরতাদদের বিঁতাড়িত না কঁরেন, তাঁহলে আমরা চুঁড়ি পরে ঘরে বসে থাকব নাঁ। বাংলার লক্ষ লক্ষ তঁওহীদী জনতা যদি রাঁস্তায় নেমে পেচ্ছাব করে দেয়- তাতেই সমস্ত নাস্তিক মুরতাদরা ভেঁসে চলে যাবে। ঠিঁক কিনা বলেন?
- ঠিইইইইইইইক (সমস্বরে মুজাহিদ জনতার চিৎকার/চেচামেচি)
- ভাঁইয়েরা আজকেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, বাংলার জমিনে কে থাকবে কে থাঁকবে না। আমি জানতে চাই, বাংলার জমিন থেকে নাস্তিক হঁডবে নাকি মুসলমান হঁডবে?
- নাস্তিইইইইইইক (দ্বিগুণ স্বরে চিৎকার)
জনতার চিৎকারধ্বনি শুনে দাঙ্গা-পুলিশের জনৈক অফিসার হাই তুলে একটা পান মুখে দিলেন। অদূরে কারেন্টের তারে বসে ছিল দু’টো দাঁড়কাক। তারাও সমস্বরে বলে উঠল- কা কা কা।
হুজুর জ্বালাময়ী বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছেন। জনতার তরঙ্গ থেকে মুহুর্মূহ তর্জন-গর্জন ভেসে আসছে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারী দলের নীতি-নির্ধাকরা প্রথমে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার তালে ছিলেন। তওহীদী জনতা অর্থাৎ লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসাছাত্রের তর্জন-গর্জন দেখে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে গেছেন। পুলিশ লাগানো ঠিক হবে কিনা ভাবছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদি পরিস্থিতি অন্যদিকে যায়?
পরিস্থিতি বোধহয় অন্যদিকেই যাচ্ছে। হুজুর এক মুহূর্তও থেমে নেই। তবে শ্রোতাদের চিৎকার চেচামেতিতে তিনি কী বলছেন তা বোঝা যাচ্ছে না, মাঝে মাঝে দুই একটা শব্দ বোঝা যাচ্ছে শুধু। যেমন- ওমরের বংশধর, কতল, মুজাহিদ, জমিন, নাস্তিক, সরকার ইত্যাদি। পুলিশের অফিসার পান খাওয়া বন্ধ রেখেছেন। তবে হাই তোলা অব্যাহত আছে। তিনি রিল্যাক্স ভঙ্গিতে আছেন কারণ তাকে ঝামেলায় জড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে হুজুরের সাথে যোগাযোগ করা হবে অচীরেই। প্রয়োজনে কিছু দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে হলেও ঘরের ছেলেকে ঘরে পাঠানো হবে।
৩.
হঠাৎ বিকট আওয়াজ। শব্দ পেয়েই পুলিশ সদস্যরা এদিক-সেদিক ছিটকে যেতে লাগলো। পুলিশের অফিসার পান মুখে দিতে যাচ্ছিলেন। তড়িঘড়ি করে পান ফেলে রিভলবার হাতে নিতেই খেয়াল করলেন- তার সামনে বিরস বদনে এক ট্যাক্সি ড্রাইভার গাড়ির চাকার দিকে তাকিয়ে আছে। টায়ার বার্স্ট হওয়াতে তাকে যথেষ্ট মর্মাহত দেখাচ্ছে। অফিসারের উদ্বেগ কেটে গেল, তবে পরোক্ষণেই রাজ্যের বিস্ময় তাকে ভর করল।
হঠাৎ বিকট আওয়াজ। শব্দ পেয়েই পুলিশ সদস্যরা এদিক-সেদিক ছিটকে যেতে লাগলো। পুলিশের অফিসার পান মুখে দিতে যাচ্ছিলেন। তড়িঘড়ি করে পান ফেলে রিভলবার হাতে নিতেই খেয়াল করলেন- তার সামনে বিরস বদনে এক ট্যাক্সি ড্রাইভার গাড়ির চাকার দিকে তাকিয়ে আছে। টায়ার বার্স্ট হওয়াতে তাকে যথেষ্ট মর্মাহত দেখাচ্ছে। অফিসারের উদ্বেগ কেটে গেল, তবে পরোক্ষণেই রাজ্যের বিস্ময় তাকে ভর করল।
অফিসার তাকিয়ে দেখলেন মঞ্চে কেউ নেই। তওহীদী জনতা যে যেদিকে পারছে ছুটে পালাচ্ছে। একটি ছেলে পড়ে আছে, তার কপালে চাপ চাপ রক্ত। সাদা টুপি লাল হয়ে গেছে। হন্তদন্ত হয়ে পালাতে গিয়ে প্যান্ডেলের খুঁটির সাথে ধাক্কা খেয়েছে মনে হয়। সমাবেশ মাঠে এখন কোনো তওহীদী জনতা নেই। তবে শত শত স্যান্ডেল পড়ে আছে।
ট্যাক্সি ড্রাইভার বুঝতে পারছে না ব্যাপারটা কী ঘটল। একবার ভাবল পুলিশটাকে জিজ্ঞেস করে দেখবে কিনা। পরোক্ষণেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলো- কারণ পুলিশ অফিসার তার দিকে রাগে কটমট হয়ে তাকিয়ে আছে। সেই রাগ অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন তিনি।
No comments:
Post a Comment