- পেটে বোমা ফাটলেও শুদ্ধ কইরা একটা সুরা পড়তে পারবা?
- জ্বি না হুজুর। আমার উচ্চারণে সমস্যা আছে।
- অথচ তুমি আমারে জ্ঞান দিবার চাও!
- হুজুর, বেআদবী হলে মাফ করবেন। কথাগুলো কিন্তু মিথ্যা নয়।
- মিথ্যা নয় কীভাবে বুঝলা?
- কোর’আন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েই তো বলা হয়েছে, হুজুর।
- কোর’আন হাদিসের তুমি কী বোঝো হে? এইটা বোঝার জন্য এলেম লাগে, এলেম।
- জ্বি হুজুর।
- তাজ্জব ব্যাপার স্যাপার! একটা চটি বই পইড়াই তুমি কোর’আন হাদিস বুঝে যাইতেছো। আর আমরা হুদাই বিশ বছর ধইরা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করলাম। তোমার কাছে গেলেই হইত, তুমি দুই মিনিটে ইসলাম শিখায়া দিতা।
- হুজুর, বিষয়টা তা না। আপনারা আমার চাইতে অনেক ভালো জানেন। আর জানেন বলেই এখানে আসা। আমি সঠিক ব্যাখ্যাটা জানতে চাচ্ছি।
- ও আচ্ছা।
- তাছাড়া এটা আপনার দায়িত্বও বটে। যেহেতু অভিযোগের তীর আপনাদের দিকেই। ধর্মীয় কাজ করে অর্থোপার্জন যদি হারাম হয়, জাহান্নামের আগুন খাওয়ার সমান অপরাধ হয়, তাহলে পুরো আলেম সমাজই দোষী হয়ে যাচ্ছে।
- শোনো বাপু! হজরত আবু বকর (রা.) ইমামতি কইরা বেতন নিতেন। এইটাই কি যথেষ্ট না?
- হুজুর, ওই যুক্তিও খণ্ডণ করা হয়েছে।
- কীভাবে?
- তাদের কথা হচ্ছে, আবু বকর (রা.) তো বর্তমানের মতন মসজিদ কমিটির বেতনভুক্ত নামাজের ইমাম ছিলেন না। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ইমাম। সারা মুসলিম জাহানের ইমাম। তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। এজন্য রাষ্ট্র থেকে তাকে ভাতা দেওয়া হত। নামাজের জন্য নয়।
- আরে যেই জন্যই দিয়া হোক। দিয়া তো হইত।
- হুজুর, সেই ভাতার টাকাও তিনি মৃত্যুকালে পরিশোধ করে যান।
- তো? কী বলতে চাও তুমি?
- হুজুর, আমি কিছুই বলতে চাই না। আমি কেবল তাদের কথাগুলো বলতে এসেছি, আর আপনার ব্যাখ্যাটা জানতে এসেছি।
- (দীর্ঘশ্বাস)
- ওরা বলে, ইসলাম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য। এর সাথে যখনই শ্রেণিবিশেষের ‘স্বার্থ’ জড়িত হয়ে গেল, তখন থেকেই ইসলামের বিকৃতি শুরু। কথায় কিন্তু যুক্তি আছে হুজুর।
- যুক্তির মাথা খাই আমি। ধর্মকর্ম কি যুক্তির বিষয়? বিশ্বাসের বিষয়।
- বিষয়টা বুঝলাম না হুজুর।
- এলেম থাকলে তো বুঝবা। কও দেহি ইবলিস কী কারণে বিতাড়িত হইছে?
- ইয়াদ নাই হুজুর। কী কারণে?
- যুক্তি দেখাইতে গিয়া। আল্লাহ হুকুম করলেন- ‘ওহে ফেরেশতারা, সবাই আদমকে সেজদা করো।’ ভালো কথা। সুন্দরমত সেজদা করলেই হয়ে যায়। কিন্তু ইবলিস ব্যাটা যুক্তি দেখায়া বলল, আমি আগুনের তৈরি, আর আদম মাটির তৈরি। ওরে সেজদা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ব্যস! যুক্তি দেখানোর অপরাধে জাহান্নামী হইল।
- তার মানে তো হুজুর, ইবলিসের দুইটা অপরাধ। একে তো আল্লাহর হুকুম অমান্য, তার উপর আবার যুক্তি দেখানো।
- হুম। এই তো বুচ্ছ।
- জ্বি হুজুর। কিন্তু আমার খুব টেনশন হচ্ছে আপনাদের নিয়ে। যদি সত্যিই কোর’আনে আল্লাহ দ্বীনের বিনিময় হারাম করেন তাহলে আপনাদের কী দশা হবে? আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হচ্ছে এবং তার পক্ষে যুক্তিও দেখানো হচ্ছে। বিষয়টা কিন্তু গুরুতর।
- উফফ! কী বে-এলেম জাহেল ছেলে! আমারে নিয়া টেনশন কর, তাই না? তুমি গিয়া নিজের টেনশন কর। তোমারে আগেই বলা হইছে- ওদের লেখা পড়িও না। ঈমান চলে যাইব। এখন সেই লক্ষণই দেখা যাইতেছে। দেশটা ইহুদি নাসারার দালালে ভরে গেছে। নাউজুবিল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ!
No comments:
Post a Comment