Saturday, May 12, 2018

হক্কানী আলেম ও ভণ্ড আলেম!

- কথা কি সত্য?
- আলবৎ সত্য হুজুর। আল্লাহ সাক্ষী।
- তাইলে আজকের পর ওর কাছে যাইবা না। ব্যাটা এক নম্বরের জাহেল।
- হুজুর, সে তো আলেম মানুষ।
- কেমনে বুঝলা আলেম মানুষ?
- আলেম পাস।
- আলেম পাস করলেই আলেম হওন যায় নাকি? স্কুল-কলেজের মতন না বিষয়টা যে, ডাক্তারি পাস কইরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং পাস কইরা ইঞ্জিনিয়ার।
- হুজুর, বিষয়টা তাহলে কেমন? এতদিন তো জানতাম মাদ্রাসা পাস করলেই তিনি আলেম।
- আরে নাহ! বহুৎ মাদ্রাসা পাস ‘ভণ্ড আলেম’ আছে। এই যেমন তুমি যার কথা বলতেছো, সে হইল পাক্কা ভণ্ড। ওর কাছে আর যাওয়ার দরকার নাই।
- হুজুর, সে কিন্তু আরবিতে কথাও বলতে পারে। মুখে কোর’আন হাদিসের খই ফোটে।
- আরে বেকুব! যেইটা বোঝো না সেইটা নিয়া কথা বলো কেন? আরবিতে কথা তো আবু জাহেলও বলতে পারত। পাণ্ডিত্যের কথা কও? আবু জাহেল ছিল ওই সময়ের সবচাইতে বড় পণ্ডিত, সবচাইতে বড় আলেম!
- কী বলেন হুজুর?
- ঠিক কথাই বলতেছি। ঈমান নাই, আমল নাই, আলেম সাইজা বসছে। এইগুলা হইল আবু জাহেলের বংশধর। একশ’ হাত তফাৎ থাকবা।
- জ্বি হুজুর।
- এরা নিজেরাও জাহান্নামে যাইব, তোমারেও সঙ্গে লইব। আল্লাহ তাআলা সুরা ইয়াসীনের ২১ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেন, ‘অনুসরণ কর তাদের যারা বিনিময় নেয় না এবং সঠিক পথপ্রাপ্ত।’ কাজেই এই ভণ্ডদের অনুসরণ করা হারাম।
- হুজুর, ‘বিনিময় নেয় না’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে?
- এতকিছু জাইনা তোমার তো কাম নাই বাপু। আমি যেইটুকু বলছি সেইটুকুই মাথায় রাখো। ভণ্ডদের অনুসরণ করবা না। ব্যস।
- কিন্তু হুজুর, ভণ্ড চিনব কী করে?
- ভণ্ড চেনাও তোমার কাম না। এর জন্য উত্তম আলেম হইতে হয়। সমস্যা নাই কোনো। আমি চিনায়া দিব। আমি যারে বলব ভণ্ড তুমি তারে ভণ্ড জানবা, তার কথা শুনবা না, তার অনুসরণ করবা না। তার কথা মুখেও আনবা না।
- জ্বি হুজুর।
- অবশ্য তুমি আজ ওই ভণ্ডটার খবর দিয়া ভালোই করছো। আগেই সাবধান হওয়া যাইব।
- জ্বি।
- ব্যাটা নিশ্চিত জাহান্নামী! মানুষরে গোমরাহ করতেছে।
- তার মানে তো হুজুর, ওই আলেমের হাজার হাজার অনুসারীও জাহান্নামী। ওরা লোকটারে কতই না শ্রদ্ধা করে। বিশ্বাস করে। তার মুখের কথা কোর’আন-হাদিসের মতন মান্য করে।
- মান্য করে বইলাই জাহান্নামী হইব। এইটাই শাস্তি।
- হুজুর, গুস্তাখি মাফ হয়। যদি দেখা যায়, ওই হুজুরই ঠিক আছে, আপনিই সঠিক পথে নাই, তাহলে?
- তোমার তো সাহস কম না হে? কী বলতেছো এসব?
- হুজুর, মনে কিছু নিয়েন না। আমরা বে-বুঝ বে-এলেম মানুষ! আপনাদের মতন এতকিছু তো বুঝি না। বোঝার উপায়ও নাই। মস্ত মস্ত আরবি ফারসির কিতাব, কোর’আন, হাদিস, উসুল, ফিকাহ, মাসলা-মাসায়েল, ইসলামি সাহিত্য- এতকিছু পড়া আমাদের সাধ্যের বাইরে। তাই আপনাদের দ্বারস্থ হই। একেকজন একেক আলেমের কাছে ধর্ণা দিই। আপনারা যা করতে বলেন তাই করি।
- হুম।
- কিন্তু হুজুর, আপনি আজকে সাংঘাতিক সব কথা বললেন। মাদ্রাসায় পড়লেই নাকি আলেম হওয়া যায় না। আলেমদের মধ্যে বহু ‘ভণ্ড আলেম’ও আছে। আবু জাহেলও আলেম ছিল। আবু জাহেলমার্কা আলেমের কথা শুনলে জাহান্নামী হতে হবে।
- ঠিকই তো বলছি।
- তাহলে আপনি যে ‘ভণ্ড আলেম’ নন- তার প্রমাণ কী? আপনি যাকে ভণ্ড বললেন, আর তার অনুসারীদের জাহান্নামী বললেন, সেও আপনার ব্যাপারে একই কথা বলবে। ওই আলেমকে বিশ্বাস করে হাজার হাজার মানুষ। আপনাকেও বিশ্বাস করে হাজার হাজার মানুষ। আমরা এই ‘বে এলেম’ মানুষরা কী দোষ করেছি হুজুর?
- আহা, ওইটা তো অন্য বিষয়। কথাটা হইল. . .
- এইটা তো জুয়া খেলার মতন হয়ে যাচ্ছে হুজুর। একজন আলেমের অনুসরণ করব, তবে সেই আলেম ভণ্ডও হতে পারে হক্কানিও হতে পারে- এটা নির্ভর করবে ভাগ্যের উপর। আলেম যদি আলেম হয় তো ভাগ্য ভালো- গেলাম জান্নাতে। ভাগ্য মন্দ হলে জাহান্নামে। এ কেমন বিচার?
- না মানে হইছে কি, বিষয়টা একটু ইয়ে আর কি। আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি না হয় সব আলেমের কথাই শুনিও।

No comments:

Post a Comment