Monday, May 7, 2018

মুসলিম সঙ্কট

- আমি চেরাগের দৈত্য বলছি: হুকুম করুন মালিক। মুহাহাহা।
- আমি যা হুকুম করব তুমি তাই করে দিবে?
- জ্বি মালিক। তবে একটা সমস্যা আছে। মুহাহাহা।
- শোনো দৈত্য, তোমার মুখে সমস্যার কথা মানায় না। তোমার মুখে থাকবে শুধু সমাধানের কথা।
- মালিক, সমস্যা হলো জীবনের অক্সিজেন। সমস্যা আছে বলেই মানুষ বেঁচে আছে, দৈত্যরা বেঁচে আছে। যেদিন দেখবেন কোনো সমস্যা নাই, সেদিন দেখবেন জগতও নাই। আপনিও নাই, আমিও নাই।
- দার্শনিক উক্তি ছেড়ে আসল কথা বলো। কী সমস্যা আছে?
- মালিক! আগে আমি তিনটা ইচ্ছা পূরণ করতে পারতাম। কিন্তু কলি যুগে আমার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়। আমি আপনার মাত্র একটি হুকুম তামিল করতে পারব। মুহাহাহা।
- এতে হাসির কী হলো? কথায় কথায় এত মুহাহাহাহা করবা না।
- আচ্ছা মালিক। আপনার যা মর্জি তা-ই হবে।
- শোনো দৈত্য! আমি মুসলমানের ঘরের সন্তান। স্বার্থপর, বেঈমানের মত নিজের জন্য কিছু চাইব না। আমি চাই ইসলামের কল্যাণ হোক, হক্বপন্থী মুসলমানের উপর নির্যাতন বন্ধ হোক এবং ইসলামের শত্রুরা ধ্বংস হয়ে যাক। চারদিকে ইসলামের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা নস্যাত হোক।
- মারহাবা মারহাবা! তা আমায় কী করতে হবে মালিক?
- বেশি কিছু না। আমাদের দেশে একটা বাতিলপন্থী মাওলানা আছে, লক্ষ লক্ষ তার অনুসারী। এই লোক কোর’আন হাদিসের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে, এই ফাসেকের কল্লা ফেলে দাও।
- এইটা তো আমার বাম হাতের কাজ। আপনি কোনোই চিন্তা করবেন না মালিক। আমি চললাম. . .
- অ্যায় দৈত্য দাঁড়াও দাঁড়াও। ওরে মারতে হবে না। আমি চিন্তা করে দেখলাম ওর চেয়ে বেশি ক্ষতি করে সেক্যুলার দলগুলা। আমি একজন সেক্যুলার নেতার নাম বলছি। তুমি তাকে উপরে পাঠিয়ে দাও। একটা কাফের কমল, ইসলামপন্থী দলেরও সুযোগ বাড়ল- কী বলো তুমি?
- মালিক! বিশ্বের বহু দেশে ইসলামপন্থী দল ক্ষমতায় গেছে। কোথাও নির্বাচনের মাধ্যমে, কোথাও জোরপূর্বক শক্তি প্রয়োগ করে। তাতে কিন্তু আপনাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় নাই।
- (ঈষৎ চিন্তিত হয়ে) তা অবশ্যি ঠিক। তাহলে কী করা যায়?
- মালিক, আপনাকে ইসলামের আসল শত্রুকে চিনতে হবে।
- তাহলে তুমি শিয়াদের প্রধান ইমামকে হত্যা করে ফেলো। এই বজ্জাতগুলা ইসলামকে বিকৃত করে ফেলছে।
- মালিক, শিয়ারা যদি সমূলে ধ্বংসও হয়ে যায় তাতেই কী? সুন্নিদের মধ্যেও তো হাজার হাজার দল-উপদল, ভাগ-উপভাগ, তরিকা-উপতরিকা, ফেরকা-মাজহাব আছে। একেক ভাগের কাছে একেক রকম ইসলাম। এক ভাগ আরেক ভাগরে কাফের বলে।
- বুঝেছি, তাহলে তুমি নাস্তিকদের মধ্যে সবচাইতে বড় ব্লগারটাকে খতম করে দাও। এরা ইসলামকে বড্ড গালাগালি করে।
- মালিক, এরা থেমে গেলেই কি ইসলাম শত্রুমুক্ত হয়ে যাবে? মুসলমানদের দেশগুলোকে তো নাস্তিক ব্লগাররা হামলা করে ধ্বংস করছে না। ওই হামলা তো চলতেই থাকবে।
- তা অবশ্যি ঠিক। একটা কাজ করলে কেমন হয়, ফিলিস্তিনের ভাই-বোনেরা সত্তর বছর ধরে নির্যাতিত হচ্ছে। ওদের ইহুদি প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহু একটা পাক্কা কাফের। ওইটারে ফালাই দাও।
- ‍মালিক, এক নেতানিয়াহু ইন্তেকাল করলে হাজার নেতানিয়াহু আছে ওদের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মত পরাশক্তিরা ওদের ইয়ার-বন্ধু লাগে। কী লাভ হবে? রাখাইনে তো নেতানিয়াহু নাই। এখানেও মুসলমানরা গণহত্যার শিকার হচ্ছে। বড় বড় পরাশক্তিরা তাতে মদদ দিচ্ছে।

- তাইলে ট্রাম্পের কল্লা ফেলো। সিরিয়াতে এই কাফেরের বাচ্চা অতিরিক্ত মাতব্বরী করছে।

- মালিক! কথায় আছে, থোড় বড়ি খাড়া/খাড়া বড়ি থোড়। ট্রাম্পের আগেও তো কত প্রেসিডেন্ট এসেছে-গেছে। তাদের কেউই মুসলমানদের প্রতি মমতা দেখায়নি। ট্রাম্পের পরে যে আসবে সেও তেমনি হবে না তার নিশ্চয়তা কী?

- তাহলে মুসলমানের প্রকৃত শত্রুটা কে শুনি? কাকে খতম করলে মুসলমানরা মুক্তি পাবে? আমি তো কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না। একবার মনে হচ্ছে সবাই শত্রু, আরেকবার মনে হচ্ছে, এদের মধ্যে কেউ না, অন্য কেউ আছে। সেই ‘অন্য কেউ’টা কে তাও ভেবে পাচ্ছি না। তোমার কি জানা আছে? 

- মালিক! আমি সেই মহাশত্রুকে ভালোমত চিনি। কিন্তু তা ফাঁস করার স্পর্ধা আমার নেই। একমাত্র কোনো মনুষ্যসন্তানই পারবে তা প্রকাশ করতে। তার জন্য মনুষ্য-সন্তানকে মনের দুয়ার উন্মোচন করতে হবে। দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে হবে। চিন্তাকে রাখতে হবে যাবতীয় ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতামুক্ত। এতদিন আপনারা যাকে-তাকে ইসলামের শত্রু আখ্যা দিয়েছেন। রক্তপাত পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু আসল যেই শত্রু- সে আড়ালেই রয়ে গেছে। তাকে আপনারা চিনতেই পারেন নি, প্রতিরোধ করবেন কীভাবে? অদূর ভবিষ্যতে কোনোদিন সেই মহাশত্রুকে যদি চিনতে পারেন তাহলে সেটা হবে আপনাদের সবচাইতে বড় সফলতা। তখন আপনারাই তাকে প্রতিরোধ করতে পারবেন। আমার প্রয়োজন পড়বে না। আর চিনতে না পারলে মহাসর্বনাশ! দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। কিছুতেই মুক্তি পাবেন না আপনারা। মানুষ তো বটেই, কোনো দেও-দানবও মুক্তি এনে দিতে পারবে না। কোনো মন্ত্রবলেই না।

No comments:

Post a Comment