
‘‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামের একটা গ্রুপে এই পোস্টটি করা হয়েছে আবু জুনাইদ নামের একটি আইডি থেকে। সেখানে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘‘মশা মারার জন্য বাজারে এক ধরনের ইলেকট্রিক র্যাকেট পাওয়া যায়। এই ধরনের ইলেকট্রিক র্যাকেট দিয়ে মশা মারলে এক ধরনের স্ফূলিঙ্গ বের হয় এবং মশা মারা যায়। প্রশ্ন হলো- এই ধরনের বস্তু দিয়ে মশা মারা জায়েজ হবে কিনা।’’
এর জবাবে আইনশাস্ত্রের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়- ‘কোনো ক্ষতিকর প্রাণীকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা জায়েজ নাই। রসুলাল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ ব্যতীত আর কারো অধিকার নাই আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়ার। সহিহ আল বোখারী, হাদীস ৩০১৬। উক্ত ব্যাট দিয়ে আঘাত করলে যেহেতু মশা পুড়ে মারা যায় তাই তার দ্বারা মশা মারা জায়েজ হবে না।’ আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৩৬১; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/৩৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৫২
এই ফতোয়া ঠিক না বেঠিক সেটা মুফতি সাহেবরা দেখবেন, আমাদের কথা হচ্ছে, একটা মশা পুড়িয়ে মারার ক্ষেত্রে যাদের এত সতর্কতা, তারাই আবার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারেন কোন নীতিতে? ধর্মের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে নিরীহ মানুষকে পেট্রল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার সময় এই ফতোয়াগুলোর বিস্মরণ ঘটে যায় কীভাবে?
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় ২০১৬ সালের ১৪ মার্চের ঘটনা সবগুলো মিডিয়াতে এসেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো হেযবুত তওহীদের দুইজন সদস্যকে। ফেসবুকে শত শত পোস্ট দিয়ে সাধারণ মানুষকে উস্কানী দেওয়া হলো হেযবুত তওহীদের লোকদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য। মসজিদের মাইক ব্যবহার করে আলেম সাহেবরা ফতোয়া দিলেন হেযবুত তওহীদ খ্রিস্টান, হেযবুত তওহীদ গীর্জা বানাচ্ছে, কাজেই খৃস্টান মারো, গীর্জা ভাঙ্গো। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের দুইজন ভাইকে জবাই করে ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে হত্যা করল।
সেই ফতোয়াবাজরাই আজকে যখন মশা মারার ফতোয়া জানতে চায় তখন বুঝি আল্লাহর রসুল কেন এই ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপারে বলেছিলেন তাদের কথা হবে কোমল, মোলায়েম, কিন্তু অন্তর হবে হায়েনার মত হিংস্র। ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারা তাদের কাছে নাজায়েজ, কিন্তু মানুষ মারা খুব সওয়াবের কাজ!
একজন ইরাকী একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আব্দুল্লাহ, হজ্বের সময় যদি ভুল করে মশা মাছি বা এমন কিছু মেরে ফেলি তাহলে তার কাফফারা কী হবে? এই প্রশ্ন শুনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জবাব দিয়েছিলেন- যে ইরাকিরা আল্লাহর রসুলের নয়নের মনি হোসেনকে শহীদ করল সেই ইরাকীরা কিনা মাছি মারার কাফফারা জিজ্ঞেস করে!
এই প্রায়ান্ধ শ্রেণি অতীতেও ছিল, আজও আছে। বিরাট বিশাল পাহাড় তারা দেখতে পায় না। পাবে কীভাবে? তারা তো পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা ছোট ছোট বালুকণার গায়ে আতশী কাঁচ ঠেকিয়ে পাহাড় দেখার চেষ্টা করছে। ফলে পাহাড়ের গায়ে লেগে থেকেও সমগ্র পাহাড় তাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যাচ্ছে এবং ঐ ছোট ছোট বালুকণাকেই পাহাড় মনে করছে। এটার নামই আকীদার বিকৃতি। এদের এই মাসলা-মাসায়েল আর ফতোয়াবাজীর ইসলাম দিয়ে মশা-মাছির কোনো উপকার হবে কিনা জানি না, মানুষের কোনো উপকার অতীতেও হয় নাই আজও হবে না।
No comments:
Post a Comment