মুসলমানদের মধ্যে একটা বিশেষ সমাজ রয়েছে, যারা বেশ-ভূষায়, কথাবার্তায়, আচার-আচরণে, পেশাবৃত্তিতে- সমস্ত দিক দিয়ে সাধারণ মুসলমান থেকে আলাদা। তারা হচ্ছেন ‘আলেম সমাজ’। এই সমাজের দায়িত্ব মূলত: ধর্মের রক্ষাণাবেক্ষণ করা। মানুষকে ধর্মের বয়ান দেওয়া। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নেতৃত্বে দেওয়া এবং কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তের দরকার পড়লে কোর’আন-হাদিস-ফিকাহ-তাফসির ঘেঁটে সিদ্ধান্ত প্রদান করা।
এই ‘আলেম সমাজের’ একটি অংশ ইদানীং সাধারণ মুসলমানদের একাংশের প্রতি বেজায় নাখোশ হয়েছেন। তাদের অভিযোগ- ওই সাধারণ মুসলমানরা কোর’আন হাদিস সম্পর্কে বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন না করেই হাটে বাজারে, চায়ের দোকানে, যত্রতত্র ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করছে! অথচ দুই পাতা বাংলা অনুবাদ ছাড়া তাদের জ্ঞানের থলিতে কিছুই নেই। তারা আলেম সমাজের মত কোর’আন-হাদিসের ব্যাপক এলেম অর্জন করেনি, ধর্মগ্রন্থের হাজারো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পড়েনি, তারা ভলিউম ভলিউম ফিকাহ পড়েনি, এমনকি কোনো বড় আলেমের শিষ্যও হয়নি- শুধুই নিজেদের যুক্তিবুদ্ধি খাটিয়ে যাচ্ছেতাই বলে বেড়াচ্ছে। আলেমদের তোয়াক্কা করছে না। বড় বড় আলেম সাহেব যে মতামত দিয়ে রেখেছেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে! কত্তবড় বেয়াদবী!
আমি বলব ভাই পণ্ডিত সমাজ! আপনারা একটু ঠান্ডা হোন। মানুষ আপনাদেরকে পাশ কাটিয়ে নিজেরাই কেন ধর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করল- আগে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন। চোখ রাঙানোর আগে চোখ মেলে বাস্তবতাটা দেখে নেওয়া দরকার।
আপনারা হলেন বিশিষ্ট আলেম সমাজের অংশ, যাদের প্রত্যেকটি ফতোয়া মানুষ যুগ যুগ ধরে বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করেছে, যাদের কোর’আন হাদিসের ব্যাখ্যা মানুষ বিনা প্রশ্নে মেনে নিয়েছে। বড় বড় বিষয়গুলো তো তারা আপনাদের উপরেই ছেড়ে রেখেছে, ও নিয়ে প্রশ্ন করতেও ভয় পায়; এমনকি অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েও মানুষ আপনাদের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া এক পাও বাড়াতে সাহস করেনি। নবজাতকের জন্ম হলো- তারা ছুটে যায় আপনাদের কাছে। বৃদ্ধের মৃত্যু হলো- তখনও তারা ছুটে যায় আপনাদের কাছে।
এত ভক্তি, সম্মান আর নেতৃত্বের আসনে তারা আপনাদের বসিয়ে রাখল শতাব্দীর পর শতাব্দী! বিনিময়ে আপনারা তাদেরকে কী দিলেন সেটা একটু বলুন। আপনারা এই জাতিকে কেমন পথ দেখালেন- যে পথে হাঁটতে হাঁটতে জাতি একেবারে যমের দুয়ারে পৌঁছে গেল! মুসলমানরা আজ সারা পৃথিবীতে গোলাম জাতিতে পরিণত হলো কেন? তাদের দেশগুলো বহিঃশত্রুর আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে! তাদের নারীরা বেইজ্জতী হচ্ছে! শিশুর আর্তচিৎকারে খোদার আরশ কেঁপে ওঠে। এই অবস্থার জন্য আপনাদের কোনোই দায় নেই? এই গজব তো তাদের ভোগ করার কথা নয়। তাদের পৃথিবীতে নেতৃত্বে দেওয়ার কথা ছিল। তারা কেন কাতারে কাতারে মৃত্যুর মিছিলে শমিল হলো?
আমরা জানি চিকিৎসা বিজ্ঞানের হাজারো বই-পুস্তক পড়ে একজন মানুষ ডাক্তার হয়। তার কাছে রোগ নিরাময়ের জন্য রোগীরা ভিড় করে। আপনারা নিজেদেরকে ডাক্তারের সাথে তুলনা করেন, কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আপনারা যে চিকিৎসা করে আসছেন তার ফলাফল দাঁড়িয়েছে এই জাতির মৃত্যুসঙ্কট! এ কেমন চিকিৎসক আপনারা?
যতই উৎসাহের সাথে আপনারা চিকিৎসা চালিয়েছেন রোগের প্রকোপ ততই বেড়ে গেছে! এতেই বোঝা যায় চিকিৎসক হিসেবে আপনারা ব্যর্থ! তাহলে কেন মানুষ আপনাদের প্রতি আস্থা হারাবে না? তারা চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলবে, চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, এমনকি চিকিৎসক সত্যিকার অর্থেই চিকিৎসক কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। প্রশ্ন তোলা অস্বাভাবিক নয়, খুবই স্বাভাবিক। এই প্রশ্ন তারা চায়ের দোকানে, হাটে বাজারেও তুলতে পারে আবার মসজিদ মাদ্রাসায় বা ওয়াজ মাহফিলেও তুলতে পারে।
তবে প্রশ্ন যখন উঠতে শুরু করেছে- জবাব কিন্তু দিতেই হবে! আজ নয়ত কাল।
No comments:
Post a Comment