মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই স্বাধীন, গতিশীল ও সৃষ্টিশীল জীব। পরিবর্তন তার স্বভাবজাত ধর্ম। সে স্থবির, অচল, অসার হয়ে বসে থাকতে পারে না। সে চিন্তা করবে, মতামত দিবে, যুক্তি উত্থাপন করবে, যুক্তি খণ্ডণ করবে, পর্যবেক্ষণ করবে, ভুল সংশোধন করবে, সিদ্ধান্ত নিবে। এই সিদ্ধান্তের উপর আবার জোর চলবে না। যে যেমন সিদ্ধান্ত নিবে সে তেমন প্রতিফল বা পরিণতি লাভ করবে।
কিন্তু অন্ধ অনুকরণ মানুষের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেড়ে নেয়। মানুষের যুক্তিবোধ নষ্ট করে দেয়, গতিশীলতার রাশ টেনে ধরে, পরিবর্তনকে ভয় পেতে শেখায়। ফলে মানুষ জীবনধর্ম হারিয়ে মৃতপ্রায় প্রাণীতে পরিণত হয়। মানবসভ্যতা থমকে দাঁড়ায়।
পৃথিবীর ইতিহাস বলছে- যখনই মানুষ তার জীবনধর্ম হারিয়েছে, নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক ও যুক্তিবোধকে কাজে না লাগিয়ে অন্যের হাতে বন্ধক রেখেছে, অনুকরণকেই নিজের ধর্ম সাব্যস্ত করে নিয়েছে তখনই স্রষ্টা মানবজাতিকে উদ্ধারহেতু কোনো না কোনো মহামানব পাঠিয়েছেন। এই মহামানবরা মানুষের বানানো শৃঙ্খল ভেঙ্গে পরাধীন মানুষকে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যুগের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। মানুষকে শিখিয়েছেন কীভাবে চিন্তা করতে হয়, কীভাবে যুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হয়, কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং কীভাবে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হয়।
যেহেতু সকল ধর্ম এক উৎস থেকে এসেছে সুতরাং সকল ধর্মমতেই অন্ধ অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। মানুষ ও স্রষ্টার মধ্যে কোনো মধ্যসত্তভোগী শ্রেণির অস্তিত্ব ধর্ম স্বীকার করে না। এর প্রয়োজন নেই। যা প্রয়োজন তা হচ্ছে দৃষ্টি। ধর্মের উদ্দেশ্য মানুষকে দৃষ্টি দান করা। যাতে করে সে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, ধর্ম-অধর্ম পার্থক্য করতে পারবে। সঠিক দৃষ্টি পেলে মানুষ নিজেই বুঝতে সক্ষম হবে কোন পথে তার কল্যাণ, কোন পথে অকল্যাণ। তারপর সে কোন পথ বেছে নেয় তা একান্তই তার নিজের সিদ্ধান্ত। যে বীজ সে বপন করবে সেই গাছেরই চারা গজাবে। এক সময় সে চারা ডাল-পালা গজিয়ে বিরাট মহীরূহে পরিণত হবে। ফল ধরবে। সেই ফলের নামই জান্নাত ও জাহান্নাম।
No comments:
Post a Comment