Tuesday, September 6, 2016

ইউরোপ-আমেরিকায় শোষিত মানুষ ও ইসলাম

ইসলাম কাকে কী মর্যাদা দিয়েছে, কাকে কতখানি অধিকার দিয়েছে- এখন এসব আপ্তবাক্য কপচিয়ে লাভ নাই ভাইজান। ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, চীনে যখন মানুষের ন্যুনতম অধিকার ছিল না, শক্তিমানের চাবুকে ক্ষত-বিক্ষত মানবতা যখন ত্রাহী সুরে চিৎকার করছিল, মানুষ মানুষের প্রভু সেজে দুর্বলের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিম রোলার চালাচ্ছিল, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সৃষ্টির সেরা মানুষ দাসত্বের ঘানি টেনে বেড়াচ্ছিল, খাওয়ার স্বাধীনতা ছিল না, বলার স্বাধীনতা ছিল না, চলার স্বাধীনতা ছিল না, তখন আপনি কোথায় ছিলেন? আপনার শ্রেষ্ঠ ধর্ম, আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম (?) কোথায় ছিল? কেন আপনারা নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য এগিয়ে গেলেন না? কেন আপনারা নির্যাতিত, শোষিত, আর্তপীড়িত মানুষকে ইসলামের সাম্য, মৈত্রী ও মানবতার বাণী শোনাতে পারলেন না? কেন তাদেরকে বলতে পারলেন না যে, নির্যাতিত-নিপীড়িত ক্রীতদাস বেলালকে আল্লাহর রসুল ক্বাবার ঊর্ধ্বে উঠিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন- সবার উপরে মানবতার স্থান। কেন তাদেরকে বলতে পারেন নি- আমরা মুসলিমরা, আমরা শেষ নবীর উম্মতরা শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে কেবল প্রাপ্য অধিকার ও মর্যদাই দেই না, তাদেরকে মাথায় তুলে রাখি। তারা আমাদের ভাই।
আমরা শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও মানুষ কিন্তু বসে ছিল না। আদর্শের শূন্যতা বেশিদিন থাকে না। মানবতাবাদী চিন্তাশীল মানুষ তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের মুক্তির পথ তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছিল। আবিষ্কার করেছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। কোটি কোটি শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত ও দলিত মানুষ, যাদের জীবনের দুই পয়সা দাম ছিল না, তাদের সামনে যখন বলা হয়েছে- "All men are created equal", কেউ খাবে কেউ খাবে না- তা হবে না তা হবে না, “Democracy is the government of the people, by the people, for the people” তখন তারা মুক্তির নেশায় পঙ্গপালের মত ওইসব আদর্শের পিছে ছুটেছে। ইসলামের মাহাত্ম্য-শ্রেষ্ঠত্ব অর্থহীন হয়ে গেছে সেদিনই।
ইউরোপে যখন আদর্শের শূন্যতা চলছে, দিশাহারা মানুষ মুক্তির নেশায়, স্বাধীনতার আশায় যখন পাগলপারা, তখন মুসলিম বিশ্বের রাজা, বাদশাহ, সম্রাট, সুলতান ও খলিফারা হেরেমখানা নির্মাণে ব্যস্ত ছিল। আর ইসলামের পণ্ডিত শ্রেণিটি ব্যস্ত ছিল কত হরফ আরবি পড়লে কত নেকি লেখা হবে সেই হিসাব-নিকাশে। আর্তপীড়িতের কান্নার ধ্বনি তাদের কারও কানে পৌঁছেনি, হৃদয়কে ব্যথিত করে নি, অন্তরে আলোড়ন তোলে নি।
সুতরাং আজ একবিংশ শতাদ্বীতে এসে যারা গণতন্ত্র কুফর, সমাজতন্ত্র কুফর, আব্রাহাম লিংকন কাফের ইত্যাদি ফতোয়া দিচ্ছেন, তাদের বোঝা উচিত- এসব ফতোয়ার দুই পয়সা দামও মানুষের কাছে নেই। মানুষ যখন বিপদে পড়েছে, মানবতা যখন পদদলিত হয়েছে তখন ইসলাম কেন, কোন ধর্মই এগিয়ে আসে নি। এগিয়ে এসেছে সমাজতন্ত্র, এগিয়ে এসেছে গণতন্ত্র। কাজেই নিপীড়িত মানুষ ওসব আদর্শকেই তাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করেছে। আবেদন হারিয়েছে ইসলামসহ সকল ধর্ম। এমতাবস্থায়, যতই ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব গেয়ে বেড়ান, ধর্ম কাকে কী মর্যাদা দিয়েছে বলে বেড়ান লাভ নেই। অতীত কৃতকর্মের ফল এত সহজে এড়ানো যাবে না।

No comments:

Post a Comment