Tuesday, September 6, 2016

প্রসঙ্গ সাম্প্রদায়িকতা

সাম্প্রদায়িকতার জন্মরহস্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়- একদল অতি ধার্মিকের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, অহংকার এবং ধর্মরক্ষার অযাচিত দায়বোধ থেকে জন্ম হয় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের।
সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন থাকায় এই লোকগুলো বুঝতে পারে না যে, আকাশের বৃষ্টি যেমন সব মানুষের জন্য, সূর্যের আলো যেমন সব মানুষের জন্য, তেমনই স্রষ্টার প্রেরিত ধর্মও সব মানুষের জন্য। ধর্মকে কুক্ষিগত করে রাখার অধিকার কাউকে দেওয়া হয় নাই।
আমার ধর্ম উচ্চমানের, তোমার ধর্ম নিম্নমানের- এমন দাবিও কেউ করতে পারে না, কারণ আমার ধর্ম-তোমার ধর্ম-তাদের ধর্ম সব ধর্মই এক উৎস থেকে উৎসারিত। একই পানি কোথাও জল নামে পরিচিত, কোথাও ওয়াটার। ওয়াটার ও পানির মধ্যে কোনটা বেশি ভালো- এই প্রশ্ন যতটা অযৌক্তিক, পৃথিবীর ধর্মগুলোর মধ্যে কার ধর্ম সত্য এ প্রশ্ন তোলাও অযৌক্তিক।
স্রষ্টা প্রেরিত সব ধর্মই সত্য। তবে সেই সত্যের কতটুকু অবিকৃত আছে, কতটুকু আমরা ধারণ করতে পারছি সেটাই আসল বিষয়। আলোচনা হোক এটা নিয়ে। যে জাতি সত্যকে যত দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে পেরেছে তারা তত সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে।
আমি যদি আমার ধর্মকে অপরাপর ধর্মগুলোর তুলনায় অধিক সম্মানের আসনে দেখতে চাই তবে হিংসা-বিদ্বেষ, সংকীর্ণতা ত্যাগ করতে হবে সবার আগে। আমি যদি আমার ধর্মকে সমুদ্রের মত বিশাল হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই তবে আমার মনটাকেও সমুদ্রের মত বিশাল হতে হবে।
আমরা কেউ সমুদ্র হতে পারি নি, কোনো ধর্মের অনুসারীরাই পারি নি। পারলে আমাদের সমাজের আজ এই হাল হত না। আমরা এত আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপর বস্তুবাদী হতাম না। আমরা এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের ক্ষতি করতে পারতাম না। অন্য ধর্মের মানুষকে খাটো করার মধ্যে মজা খুঁজে পেতাম না। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের জন্মই হত না।
বস্তুত ধর্ম নিয়ে অহংকার করা এবং ধর্মরক্ষা করা কোনোটাই মানুষের কাজ নয়। নিজেদের জ্ঞানের ফিতা দিয়ে ধর্মসমূহের সত্যাসত্য মাপাও নয়। মানুষের কাজ কেবল ধর্মকে ধারণ করা। সব ধর্মের গোড়ার কথা হচ্ছে- মানবতা, দয়া, ভালোবাসা, ত্যাগ, পরোপকারিতা, শান্তি। একে ধারণ করুন- দুনিয়া সুন্দর হবে, পরকাল সাফল্যমণ্ডিত হবে।

No comments:

Post a Comment