Tuesday, September 6, 2016

ধর্মীয় সম্প্রীতি সন্ধানে

মোরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান
 মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।

মোহাম্মদ আসাদ আলীঃ সাম্যের কবি, মানবতার কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত এই চরণ দুইটিই যথেষ্ট হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে। হাজার বছর ধরে এই উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে এসেছে। বিপদ ধর্মীয় সম্প্রীতি সন্ধানেআসলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করেছে। একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা ভাগাভাগী করে নিয়েছে। তাতে ধর্ম বাধ সাধে নি। অথচ আজ ধর্মের নামে কী ভয়াবহ বিদ্বেষ ও ঘৃণা বিস্তার করা হচ্ছে। ধর্ম রক্ষার হুজুগ তুলে এক সম্প্রদায় অপর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ধর্মভিত্তিক এই বিভক্তির বীজ বুনেছিল ইংরেজরা এটা সবার জানা। ইংরেজ অপশাসনের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় যাতে কোনোদিন একত্র হতে না পারে তারই সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র হিসেবে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আলাদা জাত্যবোধ সৃষ্টি করা হয়। প্রয়োগ করা হয় ‘উরারফব ধহফ জঁষব’ নীতি। সেই থেকে আজ অবধি সাম্প্রদায়িকতার করাল গ্রাসে বারবার অশ্রুসিক্ত হয়েছে আমাদের স্বদেশভূমি। ধর্মবিশ্বাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের খেসারত দিতে হয়েছে হিন্দু-মুসলমান উভয় জাতিকেই। মুসলমানের হাতে নির্বিচারে প্রাণ হারিয়েছে লাখো হিন্দু, হিন্দুর হাতে প্রাণ হারিয়েছে লাখো মুসলমান। লুণ্ঠিত-ভস্মীভূত হয়েছে উভয় জাতিগোষ্ঠীর নিরীহ মানুষের সম্পদ, সম্ভ্রম হারিয়েছে অনেক মা-বোন। এ নিয়ে উভয়ধর্মের মানুষের মধ্যেই রয়েছে সীমাহীন ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস। কথা ছিল সময়ের পরিক্রমায় সে ঘৃণা-বিদ্বেষ উবে যাবে, আবার হিন্দু-মুসলমান তাদের হারানো সম্প্রীতি ফিরে পাবে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে, ঐক্যবদ্ধ হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে তা তো হয়-ই নি, বরং মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ধান্দাবাজী ও স্বার্থের রাজনীতির কারণে এই বিদ্বেষ আরও বেড়েছে। বেড়েছে ব্যবধান। আর সেই ব্যবধানকেই কাজে লাগানোর পাঁয়তারা করে এসেছে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীগুলো।
বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের ব্যবধান কাজে লাগিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। ধারাবাহিকভাবে হিন্দু পুরোহিত, সেবক হত্যার ঘটনা ঘটছে, যার দায় স্বীকার করছে কোনো না কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী। বিভিন্ন মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যার হুমকি দিয়ে পত্র পাঠানো হচ্ছে। এদিকে দেশের ভেতর একটি মহল হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় সম্প্রতি ঢাকার গেন্ডারিয়ার একটি ঘটনায়। সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালানো হয়। বিষয়টি নিয়ে হিন্দু-মুসলিম উভয় শিবিরেই উত্তেজনা ছড়াতে থাকে, যা মোটেও শুভবার্তা দেয় না। একটি দুর্ঘটনা ঘটতে বড় কোনো ইস্যু লাগে না। ছোট্ট একটি ঘটনাও অনেক ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যেভাবে দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে এবং ধারাবাহিকভাবে ভিন্নধর্মাবলম্বীদেরকে হত্যার ঘটনা ঘটছে তাতে সচেতন মানুষমাত্রই বুঝতে পারছেন পরিস্থিতি কতটা সঙ্কটাপন্ন। অস্থির এই পরিস্থিতিতে সরকার অবশ্য বসে নেই। সরকারের পক্ষ থেকে মোটামুটি তিনটি কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে- ১. সাঁড়াশী অভিযান চালিয়ে গুপ্তহত্যাকারীদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা। ২. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাতে বাঁশ ও বাঁশি তুলে নিয়ে ঘাতক-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা। ৩. ধর্মীয় সম্প্রীতি সভা আয়োজন করে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। কিন্তু এই কমূসূচিগুলোর বাস্তবিক ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সাঁড়াশী অভিযান চালিয়ে জঙ্গি ধরতে গিয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হওয়া প্রায় দশ হাজারের বেশি আসামীর মধ্যে মাত্র দেড়শ জন আছে জঙ্গি- এ নিয়েও অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় প্রশাসনকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- সাঁড়াশী অভিযানের পরও আগের মতই গুপ্তহত্যা ঘটে চলেছে। আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাতে লাঠি-বাঁশি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আনতে ব্যর্থ হবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এতে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও সহিংসতাকেই আরও প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখতে হচ্ছে। অন্যদিকে তৃতীয় যে সিদ্ধান্তটি সরকার বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে অর্থাৎ ধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপন, তা করার মত আদর্শিক সাপোর্ট সরকারের পক্ষে নেই।
ধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদের নিয়ে জেলায় জেলায় ধর্মীয় সম্প্রীতি সভার আয়োজন নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ। তবে এর শতভাগ ফসল ঘরে তুলতে চাইলে সরকারকে আরেকটু উদ্যোগী হয়ে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যের কথাও প্রচার করতে হবে। যারা তা করবে তাদেরকেও আন্তঃধর্মীয় ঐক্যে বিশ্বাস রাখতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে ধর্মগুরুদেরকে মঞ্চে উপস্থিত রেখে সরকার সর্বধর্মীয় সম্প্রীতির বাণী প্রচার করছে, দেশের কল্যাণে একে অপরকে ভালোবাসার পরামর্শ দিচ্ছে- সেই ধর্মগুরুদের অবস্থা কি আমরা জানি না? তারা বড়জোর এক সারিতে বসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে সক্ষম, কিন্তু একজন আরেকজনের জন্য চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার মত ভ্রাতৃত্ববোধও তাদের অধিকাংশেরই নেই। তারা বাইরে যতই অসাম্প্রদায়িক ঠাটবাট দেখাক, ওই হিন্দু ধর্মগুরু জীবন গেলেও হয়ত যবন (!) ধর্মগুরুটির হাতে পানি পর্যন্ত খাবে না, মুসলমান ধর্মগুরুটিও জীবন গেলেও অপবিত্র-মালাউন (!) হিন্দু ধর্মগুরুর বাড়িতে পা রাখবে না। কারণ তারা উভয়েই বিশ্বাস করে একমাত্র তার ধর্মই ঠিক, তার ধর্মই সত্য, বাকি সব ভুয়া। সেই ভুয়া ধর্মের অনুসারীদের সাথে এক সারিতে বসে মন্ত্রী-এমপিদের আলোচনা শোনা যায়, কিন্তু ভাই বলে বুকে টেনে নেয়া যায় না। আমি বলব সাম্প্রদায়িকতার প্রাণভ্রমরা এখানেই। এই ব্যবধানকে কাজে লাগিয়ে যত অঘটন ঘটানো হয়। সকল ধর্মেই সত্য আছে- এ কথাটি যতদিন প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ থেকেই যাবে। হাজারো আইন-কানুন, লাঠি-বাঁশি ও সভা-সেমিনার করেও লাভ হবে না। তাহলে উপায়? উপায় আন্তঃধর্মীয় ঐক্য। সেটা কীভাবে সম্ভব ব্যাখ্যা করছি।
ক. কিছু সত্য আছে শাশ্বত-সনাতন। যা লক্ষ বছর আগেও সত্য ছিল, লক্ষ বছর পরও সত্য থাকবে। শান্তি-সমৃদ্ধিতে ভরপুর সমাজ বিনির্মাণের জন্য তেমনই কিছু শাশ্বত সত্য হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, নেতার আনুগত্য করতে হবে, বিশৃঙ্খল হওয়া যাবে না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে, অভাবীকে দান করতে হবে, শ্রমিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না, ন্যায্য মজুরি দিতে হবে, প্রতিবেশি-এতিম-মিসকিনের খোঁজ-খবর রাখতে হবে, মিথ্যা বলা যাবে না, মাপে কম দেওয়া যাবে না, মাদকসেবন থেকে বিরত থাকতে হবে, পরস্ত্রীগমন করা যাবে না, অশ্লীলতা পরিহার করতে হবে ইত্যাদি। আপনি যখনই শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে চাইবেন এই সত্যগুলো লাগবে। এগুলোকে অস্বীকার করে শান্তি আসবে না। এ কারণে আল্লাহ যুগে যুগে যত ধর্ম পাঠিয়েছেন, ধর্মগ্রন্থ পাঠিয়েছেন সবগুলোতেই এ সত্যগুলো দিয়ে দিয়েছেন। কীভাবে এর প্রয়োগ করতে হবে তাও নবী-রসুল, অবতারণ, মহামানবগণের মাধ্যমে প্র্যাকটিক্যালি শিখিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রচলিত সব ধর্মেই তাই সত্যগুলো আছে। ¯্রষ্টা প্রেরিত ওই সত্যগুলোকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রহণ করতে হবে। সকল ধর্মগ্রন্থের পাতাতেই যেহেতু এই প্রাকৃতিক ও শাশ্বত সত্যগুলো চাপা পড়ে আছে, সুতরাং কোনো ধর্মগ্রন্থকেই অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। যারা ঐক্য চায় তাদের উচিত সব ধর্মের শাশ্বত সত্যগুলোকে উদ্ভাসিত করে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতির পথ সুগম করা। এতে ধর্মের নামে বিভেদের প্রাচীর যেমন ভাঙ্গবে, স্রষ্টা প্রেরিত সত্য উদ্ভাসিত হওয়ায় সমাজও শান্তি-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। খ. ইসলামের ব্যাপারে একটি ভ্রান্ত ধারণা চালু আছে যে, ইসলাম তার পূর্বের সমস্ত ধর্মগ্রন্থকে বাতিল ঘোষণা করে। এটা ইসলামের উপর মিথ্যা অপবাদ। কেউ এর স্বপক্ষে দলিল দেখাতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, পূর্বের কিতাবগুলোতে যে অনেক প্রক্ষিপ্ত ঢুকেছে, বিকৃত হয়েছে, কোর’আনে সেটা ¯পষ্টভাবে বলা আছে। এর মানে এই নয় যে, কোর’আন ছাড়া অন্য সব ধর্মগ্রন্থ মিথ্যা হয়ে গেল। যারা অন্যসব ধর্মগ্রন্থকে মিথ্যা বলে দূরে সরিয়ে রাখল, সেগুলোকে অবজ্ঞা করল, তারা কার্যত স্রষ্টার প্রেরিত বিশাল এক সত্যের ভা-ার হারাল। দুর্ভাগ্য তাদের! বাইবেল, তওরাত, জিন্দাবেস্তা, গীতা, মহাভারত, ত্রিপিটক খুলে দেখুন। তাতে আজও অনেক শাশ্বত সত্য খুঁজে পাবেন যেগুলো ইসলামের বক্তব্যের সাথে হুবহু মিলে যায়। ধর্মগ্রন্থ পুরানো হলেও সত্য এখনও জীবন্ত। সেগুলো গ্রহণ করতে আপত্তি কোথায়? সত্যগুলো কোর’আনে আছে- এ কারণে কি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা সেটা গ্রহণ করবেন না? কিংবা বেদে, বাইবেলে, তওরাতে, জেন্দাবেস্তায় থাকলে মুসলমানরা গ্রহণ করব না? সত্যের গায়ে এহেন সাম্প্রদায়িকতার লেবাস মানায় না। পরম শত্রুও যদি সত্য বলে সেই সত্যকে স্বীকার করতে হবে- এটাই ধর্মের শিক্ষা।
গ. কবিগুরু লিখেছেন- ‘মূল ধর্ম এক বটে, বিভিন্ন আধার। জল এক ভিন্ন তটে, ভিন্ন জলাশয়।’ আজকে ধর্মগুলোকে যেভাবে আলাদাকরণ করা হয়েছে, আদতে কিন্তু বিষয়টা তেমন নয়। সব ধর্মের উৎসমূল এক জায়গাতেই। একই জল ভিন্ন ভিন্ন জলাশয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যুগে যুগে ¯্রষ্টা তাঁর প্রেরিত নবী-রসুল-অবতারগণের মাধ্যমে যে দ্বীন বা ধর্মগুলো পাঠিয়েছেন তার সবই হচ্ছে ‘ইসলাম’ অর্থাৎ শান্তি। তিনি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন পাঠান নি। ঈসা (সা.) যে দ্বীন প্রচার করেছিলেন সেটা যেমন ইসলাম (বর্তমানে খ্রিষ্টধর্ম), মুসা (আ.) যে দ্বীন প্রচার করেছিলেন সেটাও ইসলাম (ইহুদি ধর্ম), একইভাবে এই ভারতীয় উপমহাদেশে অবতার-মহামানবগণ ¯্রষ্টার পক্ষ থেকে যে দ্বীন প্রচার করেছেন সেটাও ছিল ইসলাম। কোর’আনে আল্লাহ ইসলামকে বলেছেন দ্বীনুল কাইয়েমা, অর্থাৎ শাশ্বত-সনাতন দ্বীন, যেটাকে ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হচ্ছে সনাতন ধর্ম। আমরা গোড়ায় গেলে দেখব- দ্বীন মূলত দুইটি। আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন ও মানুষের তৈরি দ্বীন। এর মধ্যে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন কোনটা? আল্লাহ বলছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম (সুরা ইমরান: ১৯), অর্থাৎ যেটা আল্লাহ পাঠিয়েছেন যুগে যুগে তাঁর নবী-রসুলদের মাধ্যমে। তাহলে মুসলমানরাই আল্লাহর মনোনীত জাতি, অন্যরা জাহান্নামে যাবে কিংবা হিন্দুরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, অন্যরা নরকে যাবে- এসব কথা বলার সুযোগ রইল কী? সব ধর্মই তো আল্লাহর প্রেরিত। আল্লাহ কোর’আনে বলেন- হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। (সুরা হুজরাত: ১৩)। সুতরাং বোঝা গেল- আল্লাহ জাতি গোত্র ইত্যাদি দেখেন না, তাঁর কাছে মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি একটাই- তাকওয়া অর্থাৎ ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করে চলা। যে যত ন্যায়নিষ্ঠ হবে আল্লাহর কাছে সে তত মর্যাদাবান হবে, ওই লোক যে গোত্র বা জাতিরই হোক না কেন।
এই সত্যগুলোকে মানুষের সামনে ব্যাপকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ধর্মব্যবসায়ীরা চায় না এগুলো মানুষ জানুক। তারা চায় কেবল অনৈক্য-সংঘাত-শত্রুতা। কারণ যেখানেই অনৈক্য সেখানেই তাদের স্বার্থ। এ কারণে যুগ যুগ ধরে তারা ধর্মের ঐক্যের দিকগুলোকে, সম্প্রীতির দিকগুলোকে অতি সযতেœ গোপন করে রেখেছে। তাই তাদের আশা ছেড়ে যারা শান্তি চায়, ঐক্য চায়, তাদেরকেই ধর্মের সত্যরূপটাকে উপস্থাপনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। প্রকৃত ধর্ম উদ্ভাসিত হলে সাম্প্রদায়িকতা বালির বাঁধের মত ধ্বসে পড়বে। ধর্মই হবে মানবজাতির ঐক্যসূত্র, ভ্রাতৃত্বের প্রেরণা।

No comments:

Post a Comment