Tuesday, September 6, 2016

গালাগালি নয়, আলোচনা হোক নির্মোহ

মৃত্যুপরবর্তী প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত? এ প্রশ্নের বোধহয় কোনো বাঁধাধরা উত্তর নেই। কারণ সব মৃত্যু এক নয়। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া হতে পারে এক রকম, আবার অপরাধের দণ্ডজনিত মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া অন্য রকম। তাছাড়া সব সমাজের মানুষের চিন্তা-ভাবনা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা প্রকাশের ভাষাও এক নয়।
.
যা হোক আমরা দেখছি- যুদ্ধাপরাধের দায় প্রমাণিত হওয়ায় যখন কাউকে ফাঁসিতে ঝুলানো হচ্ছে, তখন একদিকে মানুষ মিষ্টি খাচ্ছে, কাচ্চি বিরিয়ানি খাচ্ছে, আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ছে, অন্যদিকে আরেকটি শ্রেণি বিষয়টিকে ইসলামের প্রতি আঘাত হিসেবে উপস্থাপনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বলতে চাচ্ছে দণ্ডপ্রাপ্তরা ইসলামী দল করার কারণে ইসলামবিরোধী শক্তির রোষানলে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে। তারা শহীদ হচ্ছে, জান্নাতে যাচ্ছে।
.
একই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় উভয়শিবিরের সম্পূর্ণ বিপরীত এই চিত্র আমাকে অবাক না করলেও চিন্তিত করেছে। আমার মনে হয় বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ আছে। যারা বলছেন ইসলামী দল করার কারণে হত্যা করা হচ্ছে তারা ‘যুদ্ধাপরাধ’ ইস্যুটিকে ভুলেও উল্লেখ করছেন না। কেন করছেন না? এ ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট মতামত জানতে চাচ্ছি।
.
আবার যারা যুদ্ধাপরাধীকে দণ্ড প্রদানে খুশিতে আত্মহারা হচ্ছেন তারাও ধর্মভীরু মানুষের পালসকে অবজ্ঞা করে চলেছেন নির্দ্বিধায়। তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মভীরু মানুষের মনোভাবকে মোটেও আমলে নিচ্ছেন না। ফলে ভুল বুঝাবুঝির বিরাট একটি সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এর ফল কিন্তু শুভ হবার নয়।
.
একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যার সাথে জাতির জন্ম-ইতিহাস জড়িয়ে আছে, তার সম্পর্কে ১৬ কোটি মানুষের পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। যে যার মতো অর্থ করে নিবে, সরকার বলবে যুদ্ধাপরাধের দণ্ড অথচ জনগণকে বোঝানো হবে ইসলামী দল করার কারণে ‘হত্যা’, সরকার বলবে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী অথচ জনগণকে বোঝানো হবে ইসলামের ‘শহীদ’, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
.
আসুন মতামত জানাই, বিশ্লেষণ করি, যুক্তি উত্থাপন করি, যুক্তি খণ্ডণ করি, ঐক্যমতে আসি। আবেগ ও ঘৃণানির্ভর বাতুলতা পরিহার করে নির্মল সত্যটাকে তুলে আনি।

No comments:

Post a Comment