Tuesday, September 6, 2016

প্রসঙ্গ মানবজাতির ঐক্য: সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা

সিদ্ধান্ত:
1. নবী-রসুল আগমনের ধারাবাহিকতায় শেষ নবী হচ্ছেন বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.)। কেয়ামত পর্যন্ত কোনো নবী-রসুল আর আসবেন না। আসার দরকারও নেই।
2. মানবজাতিকে হেদায়াহ প্রদর্শনের জন্য শেষ কিতাব হচ্ছে আল কোর’আন। এটা পূর্বের সকল আসমানি কিতাবের সত্যায়ণকারী ও পরিপূর্ণতা প্রদানকারী গ্রন্থ।
3. শেষ ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে- সমস্ত মানবজাতিকে ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে একটি অখণ্ড, ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করা। এ জন্যই শেষ নবীর টাইটেল রহমাতাল্লিল আলামিন, অর্থাৎ বিশ্বজাহানের জন্য রহমতস্বরূপ।
4. শেষ কেতাব আল কোর’আন প্রাকৃতিক সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। সকল আবহাওয়ায়, সকল পরিবেশে, বিশ্বের সকল জাতি-গোত্র-ভাষার মানুষের জন্য সর্বদা প্রয়োগযোগ্য।
.
প্রস্তাবনা:
1. পবিত্র কোর’আনের প্রাচীন তাফসীরগুলো পুনঃপর্যালোচনা করতে হবে।
2. কোর’আনের পূর্বের যে অনুবাদগুলো করা হয়েছে সেগুলোকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি, যুক্তিশীলতা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জ্যশীল করে অনুবাদ করতে হবে। একটি শব্দের একাধিক অর্থ থাকতে পারে- সেক্ষেত্রে যে অর্থটি অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিগ্রাহ্য সেটা গ্রহণ করতে হবে।
3. যেহেতু সকল আসমানি কিতাব এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসেছে এবং আল্লাহ বলেছেন প্রত্যেক জনপদে আল্লাহ নবী পাঠিয়েছেন, কাজেই প্রত্যেক জনপদের অবশিষ্ট কেতাবসমূহ নিয়ে গবেষণা করে পারস্পরিক সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। মিলগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। ধর্মগ্রন্থগুলোতে ভাষাগত যে পার্থক্য আছে কিংবা সময়ের পরিক্রমায় অর্থগত যেসব পার্থক্য তৈরি হয়েছে সেগুলো নিয়ে একটু গবেষণা করলে ধর্মগ্রন্থগুলোতে স্পষ্ট আদীমিল লক্ষ করা যায়। যেমন- কোর’আন, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক, জেন্দাবেস্তা, গীতা, মনুসংহিতা ইত্যাদি প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলোতে বহু বিষয় মিল রয়েছে। ভাষাগত তারতম্যের কারণে মিলগুলো অধিকাংশ সাধারণ মানুষের অগোচরে থেকে যায়। এই মিলগুলোকে সকলের নজরে এনে সকল ধর্ম ও জাতির মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব।
4. প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে অনেক প্রক্ষিপ্ত ঢোকার কারণে মূল শিক্ষা, মূল বাণীগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আড়াল হয়ে গেছে। সেগুলোকে সহজবোধ্য করে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে।
5. সকল ধর্মের মানুষ শান্তি চায়। অশান্তি-রক্তপাত কারোই কাম্য নয়। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মতভেদ ভুলে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
6. পোশাক, খাবার-দাবার, স্থানীয় সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা চলবে না। কারণ কোনো গ্রন্থেই এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করাকে অনুমোদন করা হয় নি। এগুলো ভৌগোলিক পরিবেশ-পরিস্থিতিসাপেক্ষ বিষয়। ঐক্যের ক্ষেত্রে এগুলো যেন অন্তরায় হয়ে না দাঁড়াতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু একটি নীতি মেনে চলতে হবে, তা হচ্ছে- যা অশ্লীল ও শরীর-সাস্থ্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর তাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
.
সমস্ত বিশ্ব আজ যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখী এসে দাঁড়িয়েছে তাতে ধর্ম-গোত্র-ভাষা নির্বিশেষে মানবজাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের আর নির্বিকার থাকা চলবে না। আল্লাহর রসুল মোহাম্মদ (সা.) যে দায়িত্ব এ জাতির উপর অর্পণ করে গেছেন, অর্থাৎ সমস্ত মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, সেই দায়িত্বকে কাঁধে নিতে হবে এবার।

No comments:

Post a Comment