Monday, July 11, 2016

আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ

মক্কা বিজয়ের পর আব্দুল্লাহ ইবনে সাদকে নিছক ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করার কারণে হত্যা করা হয়েছিল এমন তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। অবশ্যই তার কোনো গুরুতর অপরাধ ছিল, যেটা হয়ত কোনো কারণে ইতিহাসের বইগুলোতে স্থান পায় নাই। ইতিহাসে তার অপরাধটা উল্লেখ না হওয়ার একটি কারণ হতে পারে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ পরবর্তীতে ভালো মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন।
.
ওইদিন আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ ছাড়া আরও যাদেরকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাদের কাউকেই নিছক ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করা বা ইসলাম গ্রহণ না করার কারণে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হয় নি। আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ ছাড়া সিরাতে বাকি প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ দেখানো হয়েছে। তাহলে কেবল আব্দুল্লাহকেই বিনা অপরাধে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হলো, যেখানে শত শত মুশরিক ক্ষমাপ্রাপ্ত হলো যারা আল্লাহর রসুল ও তাঁর সাহাবীদের উপর এক সময় জঘন্যভাবে নির্যাতন চালিয়েছিল?

Sunday, July 10, 2016

তরুণদের বিপথগামিতা


যে জঙ্গিবাদ নিয়ে এতকিছু, সেই জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা ও ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে আজ পর্যন্ত শত শত মাদ্রাসা-মক্তব, এতিমখানার ছাত্র, গরীবের ঘরের সন্তান প্রাণ হারালেও মুখে কুলুপ এঁটে ছিল সবাই। ওদের জন্য কেউ লিখে নাই- আহা, আমাদের সন্তান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ওদের বাঁচাও, ফিরে আয় বাবা ইসলামের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে . . .। 
কেউ এসব বলে নি কারণ বিপথগামী ওই তরুণরা কোনো শিল্পপতি বা বড় কোনো রাজনীতিবিদের ঘরের সন্তান নয়, এমনকি প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থীও নয়, তারাঅশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত চাষাভূষার ছেলে। ওরা টাকার জন্য জঙ্গি, পিকেটার হয়েছে। আমাদের সমাজচিন্তকরা কিছুদিন পূর্বেও বই-পুস্তক ঘেঁটে জঙ্গিবাদের কারণ দর্শাতেন যে, দারিদ্র্যতাই হচ্ছে জঙ্গিবাদের একমাত্র কারণ। গরীব ঘরের কোমলমতি ছেলেদেরকে টাকার লোভ দেখিয়ে জঙ্গি বানিয়ে ফেলা হয়, সুতরাং বড়লোকদের চিন্তার কারণ নেই!
কিন্তু আজ তাদের মাথায় হাত পড়েছে। বিপদ পুষে রেখেছিলেন তারা, হয়ত ফল ভোগ করার সময় এসেছে।

আমাদের সন্তানদের বাঁচাব কীভাবে?



আমাদের সুশীলরা পত্রিকায় কলাম লেখেন- ‘আমাদের সন্তানদের বাঁচাব কীভাবে?’ তাদের প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয় সন্তানদের বিপথগামিতা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা এত দেরীতে প্রকাশ পাচ্ছে কেন? তরুণ প্রজন্মের নৈতিক অধঃপতন তো আজ হঠাৎ শুরু হয় নি।
.
মাদক, অশ্লীলতা, খুন-খারাবি, ছিনতাই, রাহাজানি ইতাদির সাথে জড়িয়ে আমাদের বিরাট সংখ্যক তরুণকে আমরা অনেক আগেই হারিয়েছি। আমাদের ঘরে জন্ম নিয়েছে ইয়াবা ঐশী, যে কিনা নিজ হাতে বাবা-মাকে জবাই দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে নি। তখন কেন আমাদের মনে সন্তানদের বাঁচাবার তাগিদ অনুভূত হয় নি?
.
বিবেক, মুনষ্যত্ব, ভালোবাসা, বড়দের সম্মান করা, শিক্ষককে মর্যাদা দেওয়া, ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করে চলার কোনো শিক্ষা আমরা সন্তানদের দেই নি। আমরা নিজেরা হয়েছি ভোগবাদী, আত্মকেন্দ্রিক, দো-পেয়ে জন্তু, সন্তানদেরও ভোগবাদী জন্তু বানাতে চেয়েছি।
.
আমাদের চোখের সামনেই আমাদের সন্তানরা বড়দের অসম্মান করেছে, শিক্ষককে মারধর করেছে, নাইট পার্টিতে রাত কাটিয়েছে, অসামাজিক কর্মকাণ্ড করে বেড়িয়েছে, পশুর মত ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত থেকেছে, কিন্তু এগুলোকে আমরা বিপথগামিতা মনে করি নি। তরুণ প্রজন্মের আত্মার এই অপমৃত্যুতে একটুও চিন্তিত হই নি।
তাহলে কেন আজ আত্মাকে মেরে দেহের জন্য মায়াকান্না করা?



জঙ্গিরা নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে যা নিঃসন্দেহে অন্যায় ও অতি গর্হিত কাজ। কিন্তু এই গর্হিত কাজ করে নি এমন রাজনৈতিক দল আমাদের দেশে একটাও নেই।
.
জঙ্গি হামলার কয়েকদিনের মাথায় যে দলনেত্রী বললেন, কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় যাবে সেটা এখন দেখার বিষয় নয় সেই দলটিই মাত্র একবছর আগে ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে কতজন নিরীহ মানুষকে পেট্রল বোমার আগুনে পুড়িয়ে কাবাব বানিয়েছে, সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মহোৎসব চালিয়েছে তা কি সবাই ভুলে গেল? নাকি প্রেট্রল বোমায় পুড়ে মরা মানুষগুলো বিদেশি ছিল না বলে সেটা জায়েজ হয়ে গেছে? আজ তারা জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ছবক দেয়। নৈতিক অধঃপতন কত গভীরে পৌঁছলে শত শত নিরীহ মানুষের দগ্ধ লাশের উপর দাঁড়িয়ে এমন বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলা যেতে পারে!
.
আবার কিছুদিন আগেই দলীয় ব্যানারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে শ’ খানেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাল তা কি গর্হিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ছিল না? আমাদের সরকার এ বিষয়ে কতখানি অনুতপ্ত, মিডিয়া কতখানি সোচ্চার, দেশবাসী কতখানি ক্ষুব্ধ? ওইসব নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমাদের গণভবনে কয়দফা বৈঠক হয়েছে? মিডিয়ায় কয়টা টকশো হয়েছে? পাড়ায়-মহল্লায় কয়টা কমিটি গঠিত হয়েছে?
.
নিরীহ মানুষ হত্যাকে যদি আমরা সত্যই নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য কাজ বলে মনে করতাম, নিজেরা যদি এতই সাধু হতাম, যদি সত্যিই আমরা জাতীয় চেতনার ধারক হতাম তাহলে গণতন্ত্রের নামে এসব হানাহানি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও জাতীয় ঐক্য আরও অনেক আগেই তৈরি হয়ে যেত। কিন্তু না, এসব হতাহতের ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারে নি, আমাদের সংকীর্ণতার মায়াজাল ভেদ করে পরিস্থিতির বিভীষিকা উপলব্ধি করাতে পারে নি, তাই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির প্রচেষ্টাও হালে পানি পায় নি।
.
এতেই বোঝা যায় নিরীহ মানুষ হত্যা আমাদের দুশ্চিন্তার আসল কারণ নয়, আসল কারণ ধর্ম। ধর্মের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা হয়েছে বলেই আমাদের যত দুশ্চিন্তা, যদি গণতন্ত্রের নামে হত তাহলে বিশজন কেন, চল্লিশজন মানুষ জবাইও জায়েজ করে ফেলতাম আমরা।

ভিন্নধর্মীরাও জান্নাতে যেতে পারে




আমার জানামতে কোর’আনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে- ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও জান্নাতে যেতে পারে। (আয়াতগুলো পড়ুন)
.
“আহলে কেতাবদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত হয়ে তাঁর এবং তিনি যা তোমাদের ও তাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তাতে অবশ্যই ঈমান আনে এবং আল্লাহর আয়াত তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে না। এরাই হচ্ছে সেই সমস্ত লোক যাদের জন্য আল্লাহর নিকট পুরস্কার রয়েছে। (সুরা ইমরান ১৯৯)।
.
আল্লাহ আরো বলেন, নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, সাবেয়ী বা খ্রীষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। [সুরা মায়েদা: ৬৯]
.
নিঃসন্দেহে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈনদেরও যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। (সুরা বাকারা ৬২)

অহেতুক বিতর্কের বেনিফিশিয়ারি কারা?

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পোস্ট করলে ইদানীং কিছু লোক এসে যে কোনো অজুহাতে বিতর্ক সৃষ্টি করে।
মোল্লা এসে বলে- আপনার দাড়ি কই, ইসলাম সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন, বাপ-মায়ে ধর্ম শিক্ষা দেয় নাই আপনারে? নাস্তিক বলে- ভাই, কোর’আন-হাদীস পড়েন, জঙ্গিরা ঠিকই করতেছে, নবীও জিহাদ করেছেন। প্রগতিশীলরা বলে- জঙ্গিবাদ লুকিয়ে আছে সব মু’মিনের অন্তরে, মডারেটরাও শয়তান।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় যুক্তি-প্রমাণের আলোকে পোস্ট করলেই এই যে লোকগুলো বাগড়া বাধাতে আসে, মূল প্রসঙ্গে কথা না বলে পোস্ট থেকে সুবিধামত একটা বিষয় বা শব্দ নিয়ে তার পোস্টমর্টেম করতে বসে, কিংবা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করে হলেও বিতর্ক চালিয়ে যায়, তাদের আসল মোটিভ কী? তাদের অহেতুক বিতর্কের বেনিফিশিয়ারি কারা?

ওটা ইসলাম নয়


জঙ্গিদের ইসলাম আর আল্লাহ-রসুলের ইসলাম যে এক নয় তা বোঝার জন্য রসুলের জীবনী থেকে দুইটি ঘটনাই যথেষ্ট।
একদিন আল্লাহর রসুল (সা.) ক্বাবা ঘরের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের নির্যাতন-অত্যাচার, যুলুম তখন চরম সীমায় পৌঁছেছে। এক সাহাবী এসে অত্যন্ত কাতরকণ্ঠে রসুলকে বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, আপনি দোয়া করুন যাতে এই মোশরেকরা ধ্বংস হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে ওই সাহাবীর এই ধ্বংসকামনা শুনে তিনি হেলান অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন। রিপুজয়ী মহামানব, মানবজাতির মুকুটমনি তাঁর জীবনে খুম কম সময়ই রাগান্বিত হয়েছেন। যে অল্প কয়েকটি ঘটনায় তাঁকে রাগতে দেখা গেছে তার মধ্যে এই ঘটনা একটি। সাহাবীর কথা শুনে রসুল (সা.) অনেক রেগে গিয়েছেলেন এবং বলেছিলেন- শিগগিরই এমন সময় আসছে যখন একটি মেয়ে লোক একা সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তার মনে এক আল্লাহ এবং বন্য পশু ছাড়া আর কিছুরই ভয় থাকবে না।
বিশ্বনবীর (সা.) এই কথাটির ভেতরে প্রবেশ করুন। ইসলামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায় একটি কথাতেই। তিনি কি বললেন? তিনি মূলত ইঙ্গিত দিলেন- এত বাধা, এত অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি সফল হবেন এবং যাদের ধ্বংস করার জন্য ঐ সাহাবা দোয়া করতে বলছেন তারাই এমন বদলে যাবে এবং তাদের দিয়েই এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে একা একটা মেয়ে মানুষ কয়েক শ’মাইল পথ নির্ভয়ে চলে যেতে পারবে।
এতে দুইটি বিষয় পরিষ্কার হয়। এক- ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, দুই- আল্লাহর রসুল এত অত্যাচারের মুহূর্তেও চান নি অত্যাচারী মোশরেকরা ধ্বংস বা বিনাশ হয়ে যাক। এর দ্বারা তিনি তাঁর উম্মতের জন্য শিক্ষনীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন যে, মানুষের বিনাশ নয়, মানুষের কল্যাণ সাধন করাই মুক্তির পথ, জান্নাতের পথ।
আরেকটি ঘটনা তায়েফের। মক্কায় বছরের পর বছর সত্যের আহ্বান করেও যখন অধিকাংশ লোকের পক্ষ থেকে নির্যাতন, নিপীড়ন আর অপমান ছাড়া কিছুই পেলেন না, তখন আল্লাহ রসুল (সা.) তায়েফের ব্যাপারে কিছুটা আশাবাদী হলেন। সেখানকার গোত্রপতিদের সাথে রসুলাল্লাহর নিজ গোত্রের সুসম্পর্ক ছিল। তাই আশা করেছিলেন দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলেও অন্তত অসৌজন্যমূলক আচরণ কেউ করবে না। কিন্তু বাস্তবে সেখানে তাঁকে আরও নির্মমভাবে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। তায়েফের নেতৃস্থানীয়রা অত্যন্ত অবজ্ঞার সাথে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হয় নি, তারা এলাকার বখাটে, গুন্ডা ও শিশু-কিশোরদের লেলিয়ে দেয় রসুলকে শারীরিক নির্যাতন করতে। তারা পাথর নিক্ষেপ করতে করতে রসুলের সারা শরীর রক্তাক্ত করে ফেলে। হাদীসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, সেদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে মালায়েক এসে রসুলকে বলেছিল- ‘হে মুহাম্মদ (সা.), আপনি আদেশ করুন আমি তাদের উপর মক্কার দু’দিকের পাহাড় একত্র করে চাপিয়ে দেই।’ কিন্তু সেই রিপুজয়ী মহামানব বললেন- ‘না না, আমি আশা করি তাদের ভবিষ্যৎ বংশধর সত্য গ্রহণ করবে।’
রসুলাল্লাহ সেদিন তায়েফবাসীর মুর্খতার জন্য নিজে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। বলেছিলেন- হে আল্লাহ, তারা অজ্ঞতাবশত এই কাজ করেছে, তাদেরকে পাকড়াও কর না। এই অতুলনীয় ক্ষমা ও উদারতার মাধ্যমে সেদিন পৃথিবীর ইতিহাসের বিস্ময়কর ওই মহামানব দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, ইসলাম ‘ধ্বংস’ নয়, শান্তির বার্তাবাহক।
আল্লাহর রসুলের ইসলাম আর মুফতি-ফকিহদের ইসলাম এক নয়। আজকে ইসলামের নাম করে যারা সমস্ত পৃথিবীতে বিনাশের প্রলয়নাচন শুরু করেছে তাদের ইসলাম আর আল্লাহর রসুলের প্রকৃত ইসলামের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে। আল্লাহ-রসুলের ইসলামে জান্নাত তাদের জন্য যারা মানুষকে শান্তি দিতে সংগ্রাম করবে, আর এরা সেই মানুষকেই বিনাশ করে নিজেরা জান্নাতে যেতে চায়। আল্লাহ রসুলের ইসলাম চায় ঐক্য, এরা চায় বিভক্তি-হানাহানি। আল্লাহ-রসুলের ইসলাম চায় মানবজীবনে সার্বিক নিরাপত্তা, এরা চায় আতঙ্ক-ভয়-ত্রাস। আল্লাহ-রসুলের ইসলাম চায় সম্প্রীতি, এরা চায় আক্রোশ-বিদ্বেষ আর রক্তপাত।
যারা এদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দেখে ভাবছেন ইসলাম এরকম সন্ত্রাসীপনা শিক্ষা দেয়, নিরীহ মানুষ হত্যা সমর্থন করে এবং এটা বিশ্বাস করে ইসলামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হচ্ছেন, ইসলামকে দোষারোপ করছেন, তাদেরকে বলব- আপনারা ভুল বুঝবেন না, ওটা ইসলাম নয়। আসলে যারা ইসলামকে ব্যবহার করে স্বার্থোদ্ধার করে ও বিধ্বংস ডেকে আনে, তারা কেবল মানবতার শত্রুই নয়, তারা ইসলামেরও শত্রু।

মুরতাদ ও যুদ্ধাপরাধী এক নয়

ইসলাম প্রত্যাখ্যান করার অধিকার যে কারও আছে। 
ইসলাম গ্রহণ না করার কারণে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে- এমন কোনো ঘটনা রসুলের জীবনে ঘটে নি। আমাদের নাস্তিক মহোদয়গণকে বুঝতে হবে- ইসলাম প্রত্যাখ্যান করা এক জিনিস, আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া অন্য জিনিস। 
মুসলমানরা পরাজিত গোত্রপতিকে শাস্তি দিয়েছে যুদ্ধ করার অপরাধে, ইসলাম গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান সেখানে মুখ্য বিষয় ছিল না।
বরং মুসলিম সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরাজিত হওয়া গোত্র ও গোত্রপতি ইসলাম গ্রহণের সুযোগ নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। যেমন- আবু সুফিয়ান মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও ওহুদ যুদ্ধ পরিচালনা করে অনেক মুসলমানকে হত্যা করার পরও কেবল ইসলাম গ্রহণের সুযোগ নিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বেঁচে যায়।

ওটা ইসলাম নয় (সংক্ষিপ্ত)


একদিন রসুল (সা.) ক্বাবা ঘরের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের নির্যাতন-অত্যাচার, যুলুম তখন তুঙ্গে। এমতাবস্থায় এক সাহাবী এসে অত্যন্ত কাতরকণ্ঠে রসুলকে বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, আপনি দোয়া করুন যাতে এই মোশরেকরা ধ্বংস হয়ে যায়। রিপুজয়ী মহামানব, মানবজাতির মুকুটমনি তাঁর জীবনে খুম কম সময়ই রাগান্বিত হয়েছেন। তিনি যে কয়টি কারণে রাগান্বিত হয়েছেন তার মধ্যে সাহাবীর এই ধ্বংস কামনা একটি।
সাহাবীর কথা শুনে রসুল (সা.) রেগে গিয়েছেলেন এবং বলেছিলেন- শিগগিরই এমন সময় আসছে যখন একটি মেয়ে লোক একা সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তার মনে এক আল্লাহ এবং বন্য পশু ছাড়া আর কিছুরই ভয় থাকবে না।
বিশ্বনবীর (সা.) এই কথাটির ভেতরে প্রবেশ করুন। ইসলামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায় একটি কথাতেই। তিনি কি বললেন? তিনি মূলত ইঙ্গিত দিলেন- এত বাধা, এত অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি সফল হবেন এবং যাদের ধ্বংস করার জন্য ঐ সাহাবা দোয়া করতে বলছেন তারাই এমন বদলে যাবে এবং তাদের দিয়েই এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে একা একটা মেয়ে মানুষ কয়েক শ’মাইল পথ নির্ভয়ে চলে যেতে পারবে।
এতে দুইটি বিষয় পরিষ্কার হয়। এক- ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, দুই- আল্লাহর রসুল এত অত্যাচারের মুহূর্তেও চান নি যে, অত্যাচারী মোশরেকরা ধ্বংস বা বিনাশ হয়ে যাক। এর দ্বারা তিনি তাঁর উম্মতের জন্য শিক্ষনীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন যে, মানুষের বিনাশ নয়, মানুষের কল্যাণ সাধন করাই মুক্তির পথ, জান্নাতের পথ।
.
যারা জান্নাত পাবার আশায় বিনাশের পথ বেছে নিয়েছে তাদের জন্য করুণা হয়।

বিষবৃক্ষে অমৃতফল ধরে না


আমাদের রাজনীতিকরা ধান্দাবাজের রাজনীতি করবেন, টাকা দিয়ে নমিনেশান কিনবেন, টাকা দিয়ে ভোট কিনবেন, নিজের গুণগান নিজে করবেন, কেউ যেন তার প্রতিপক্ষ না হতে পারে সেজন্য খুন করবেন অথবা মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ঘানি টানাবেন।
আমাদের ব্যবসায়ীরা লাভের জন্য ওজনে কম দিবেন, সিন্ডিকেট করে সংকট সৃষ্টি করবেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করবেন, ভেজাল মেশাবেন, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করবেন।
আমাদের ধর্মগুরুরা ধর্মকে বাণিজ্যের হাতিয়ারে ব্যবহার করবেন, যার যেমন ইচ্ছা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে ফেতনা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করবেন, ধর্মের নামে হুজুগ সৃষ্টি করে মানুষ খুন করবেন, জিহাদের নামে কোমলমতি তরুণদের হাতে পেট্রল বোমা-ককটেল বোমা ধরিয়ে দিবেন।
আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দুর্নীতি করে কুখ্যাতি কুড়াবেন, জনগণের মধ্যে নিজেদের আস্থা নষ্ট করবেন, ন্যায়-অন্যায় দেখবেন না, শক্তির জোরে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন, মামলার বাদি-বিবাদী উভয়ের কাছে টাকা খাবেন, সন্ত্রাসীদের মত চাঁদাবাজী করে বেড়াবেন।
আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষা-বাণিজ্য করবেন, ভর্তি বাণিজ্য করবেন, রাজনৈতিক দলাদলি করবেন, ছাত্রদেরকে সন্ত্রাসী ক্যাডার হিসাবে ব্যবহার করবেন।
আমাদের আমলারা চরম স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক, ভোগবাদী হবেন, বিদেশে সেকেন্ড হোম বানিয়ে রাখবেন, দেশের মাথায় বসে দেশের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র পাকাবেন।
আমাদের ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে রোগীকে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতাবেন, চিকিৎসাকে পণ্য বানিয়ে আলু-পটলের মত বিক্রি করবেন, দরকষাকষি করবেন।
শাসকশ্রেণি ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রদর্শন অনুসরণ করে রাজনীতি বলতে মনে করবেন ‘ক্ষমতা গ্রহণ আর প্রয়োগের’ নীতি, সাধারণ মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ চিন্তা করবেন না, নিজেরা যেমন চাইবেন মানুষকে সেটা মানতে বাধ্য করাবেন, কথায় কথায় শক্তির জোর দেখাবেন, মেরে-ধরে সব সমস্যার সমাধান করতে চাইবেন।
তো এমন একটি সমাজ থেকে ডজন ডজন জঙ্গি-সন্ত্রাসী-মাদকসেবী, হতাশাগ্রস্ত, ভাড়াটে খুনী বের হবে না তো নজরুল-রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দ-হ্যানিম্যান বের হবে?
বিষবৃক্ষে বিষাক্ত ফলই ধরে, অমৃত ধরে না।

হিন্দুধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের প্রতি

হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদেরকে দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিকে উপলব্ধি করতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে যে, কোনো দেশি-বিদেশি শক্তি যেন তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খেতে না পারে। দেশটা আমাদের সকলের, সঙ্কট আমাদের সকলের, সমাধানও আমাদেরকে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে। বৈদেশিক শক্তি সমাধান করবে না, তারা সমস্যাকে জিইয়ে রেখে স্বার্থ হাসিল করবে। 
.
যারা ভাবছেন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ভারতের সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে, যাওয়ার একটা উপায় অন্তত আছে, তারা ভুলের মধ্যে আছেন। প্রথমত, নিজ দেশকে বিপদে ফেলে রেখে প্রাণ হাতে করে বিদেশে পাড়ি জমানো কাপুরুষতা এবং দেশমাতৃকার সাথে প্রতারণাও বটে। এটা কারও কাম্য হওয়া উচিত নয়।
.
এই দেশে আপনাদের জন্ম। এই দেশের মাটিতে ফসল ফলিয়ে আপনারা জীবিকা নির্বাহ করেছেন, পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় সিক্ত হয়েছেন। এ দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির সাথে জড়িয়ে আছে আপনাদের হাজারও স্মৃতিকথা। এটা আপনাদের দেশ।
.
মানুষের স্রষ্টা যিনি, ধরণীর স্রষ্টাও তিনি। ধরণীর উপর প্রত্যেক মানুষের সৃষ্টিগত অধিকার আছে। বংশপরম্পরায় যেদেশে বসবাস করেছেন, যে মাটিতে আপনাদের পূর্বপুরুষের অস্থিমজ্জা মিশে আছে, জন্মের পর থেকে যে আলো-বাতাসে বড় হয়েছেন, সেই দেশ কেন ছাড়বেন? স্মৃতিবিজড়িত মাতৃভূমি ছেড়ে কেন অন্য কোথাও আশ্রিত জীবন-যাপন করবেন?
.
দ্বিতীয়ত, একটা কথা মনে রাখতে হবে, স্বদেশের ভূমিতে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা আর পার্শ্ববর্তী দেশে শরণার্থী হিসেবে বেঁচে থাকার মধ্যে কত ফারাক তা যারা গেছে তারাই জানে। ওই আশ্রিতের জীবন কামনা না করে নিজ দেশকেই ঐক্যের শক্তিতে শক্তিশালী করুন। আমরা যারা শান্তি চাই, তারা আসুন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবতীয় অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
.
কখনও মনে করবেন না আপনারা একা। এখনও এই দেশে অনেক মানুষ আছে, মুসলমান ঘরের অনেক সন্তান আছে, যারা আপনাদের নিরাপত্তার জন্য নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত।
.
প্রকাশিতব্য লেখা থেকে।

গাজওয়াতুল হিন্দ কী?


গাজওয়াতুল হিন্দের হাদীস দেখিয়ে যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে হত্যার বৈধতা দিতে চায় তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।
গাজওয়াতুল হিন্দ মানে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধ নয়। যুদ্ধটা সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়ের। যারা ন্যায়ের পক্ষে থাকবে তারা জয়ী হবে, যারা অন্যায়ের পক্ষ নেবে তারা পরাজিত হবে। কে হিন্দু কে মুসলমান সেটা এখানে দেখার বিষয় নয়।
হাদীস থেকে শুধু এটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, যুদ্ধটা সংঘটিত হবে হিন্দে অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে। শুধুমাত্র স্থানটাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে হাদীসে। যেমন- বদরের যুদ্ধ, ওহুদের যুদ্ধের মত হিন্দের যুদ্ধ।

জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থিত কিনা?


জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে চাইলে সবার আগে আপনাকে একটি মৌলিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থিত কিনা?
যদি আপনি মনে করেন জঙ্গিবাদ ইসলামসমর্থিত, তাহলে জঙ্গিদের পিছনে না ছুটে ধর্মবিশ্বাস নির্মূল করতে হবে। সোজা কথা কোটি কোটি আস্তিককে নাস্তিক বানাতে হবে। তাদেরকে বিশ্বাস করাতে হবে- আল্লাহ বলে কেউ নাই, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম নাই, কোর’আন মিথ্যা ইত্যাদি। যতক্ষণ একজনও আস্তিক থাকবে ততক্ষণ জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকেই যাবে। পারবেন দেশের ১৫ কোটি মুসলমানকে নাস্তিক বানাতে?
আর যদি মনে করেন জঙ্গিবাদ ইসলামসমর্থিত নয়, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে কিছু মানুষকে জঙ্গি বানানো হচ্ছে, তাহলে লাইনের কথা বলতে হবে, লাইনের কাজ করতে হবে, বে-লাইন হওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে সবার আগে ব্যাপকভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় যুক্তি-প্রমাণ-তথ্য প্রচার করতে হবে। কে করবে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে ওই ধর্মীয় যুক্তি-প্রমাণগুলো এতটা শক্তিশালী হতে হবে যার সামনে জঙ্গিবাদের পক্ষের সমস্ত যুক্তি মাঠে মারা যায়।
“আমি একজন আলেম হয়ে যেহেতু জঙ্গিবাদকে হারাম বলছি সুতরাং প্রমাণিত হলো জঙ্গিবাদ হারাম”- এইটা কোনো যুক্তি না। এটা কুযুক্তি। এসব করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই সম্ভব নয়। যার যে ফতোয়ায় স্বার্থ থাকে সে-ই কেবল ওই ফতোয়া গ্রহণ করে, বিপক্ষের ফতোয়া কেউ নেয় না। ইসলামের এমন বিষয় খুব কমই আছে যে ব্যাপারে আলেমদের পরস্পরবিরোধী ফতোয়া নাই। জঙ্গিরা প্রাণ দিয়ে দিচ্ছে কথিত জিহাদ করতে এসে, আপনি কি মনে করেন তাদের পক্ষে ফতোয়া দেওয়ার লোক নাই?
আলেম ওলামারা যেটা হালাল বলবে সেটা হালাল হবে, আর হারাম বললে হারাম হবে- এমন কথা কোর’আন হাদীসের কোথাও নাই। সবাই জানে আল্লাহ-রসুল যেটাকে হারাম বলেছেন সেটা হচ্ছে হারাম। তাহলে তুমি ভাই হারাম ফতোয়া দেওয়ার কে? তোমারে কেউ গোণায় ধরে?
হামলাকারী জঙ্গিরা ফতোয়া শুনে জবাই করতে আসে নি যে, পাল্টা ফতোয়া দিয়ে ফিরিয়ে দিবেন। তারা গ্রামের মুর্খ-সুর্খ রহিম-করিম নয়। তারা কোর’আন-হাদীস পড়ুয়া ও ইসলামের ইতিহাস জানা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী তরুণ। তাদের ভুলটা তাই কোর’আন-হাদীস-ইতিহাস থেকেই ধরিয়ে দিতে হবে।
সরকারকে বলব- অন্য দশটা ইস্যুর মত জঙ্গিবাদ নিয়ে ফাউল খেলবেন না। বিদেশে আপনার সেকেন্ড হোম থাকতে পারে, আমাদের নাই। যদি আমাদের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তাহলে কাজের কাজ করুন। কোর’আন-হাদীস, ইতিহাস থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত যুক্তি-প্রমাণ দিতে পারবে যে বা যারা, তারা হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক, খ্রিষ্টান হোক, নাস্তিক হোক তাদের সাহায্য নিন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে মাদ্রাসাপড়ুয়া হতে হবে, দাড়ি-টুপি থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রচারণায় গতি বাড়ান। এ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখবেন- হাজারবার ‘জঙ্গিবাদ হারাম, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ ইত্যাদি আপ্তবাক্য আউড়ানোর চাইতে ‘কেন জঙ্গিবাদ হারাম’ তার স্বপক্ষে একটি যুক্তির কথা বলা বেশি কার্যকরী।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21559#sthash.ULQAbuIN.dpuf

ঈদের নামে এই পাশবিক উল্লাসকে ধিক্কার জানাই

মুসলমানরা প্রথম ঈদ উদযাপন করে মদীনায়, মদীনা সনদের ভিত্তিতে সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ নিরাপদ রাষ্ট্র ঘোষিত হবার পর। মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না- এই ছিল আল্লাহর রসুলের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের অন্যতম নীতি।
এই নীতির আলোকে সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত মুসলমানরা ঈদ উদযাপন করেছে এমন ইতিহাস কেউ দেখাতে পারবেন না। আগে পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে, সন্ত্রাস সৃষ্টির রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে, তারপর এসেছে উৎসবের বিধান। কারণ এটা কমন সেন্স যে, আনন্দ-উৎসব কেবল সেখানেই মানায় যেখানে অনিরাপত্তা ও অশান্তি নেই, সন্ত্রাস ও রক্তপাত নেই, সাম্প্রদায়িক সংঘাত নেই।
আজ ঈদ। বাংলার মুসলমানদের ঘরে ঘরে আনন্দের জোয়ার বইছে। কিন্তু ঈদ উদযাপনের পূর্বশর্ত যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা- তার বাস্তবিক অবস্থা কী সেটা আমরা সকলেই জানি। ঈদের দিনেই দেশের সবচাইতে বড় জামাতের পাশে ভয়াবহ বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দুই পুলিশসহ চারজন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ধারাবাহিকভাবে ঘটছে এসব। শুধু চলতি বছরে সারা দেশে অন্তত ২৬ জন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, জবাই করে বা গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে যজ্ঞেশ্বর রায় নামের হিন্দু পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস। এরপর ৩০ এপ্রিল জবাই করে নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দার হত্যা এবং ১৪ মে বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এরপর ২০ মে কুষ্টিয়ায় একজন অমুসলিম হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারকে হত্যা করা হয় এবং একইদিনে নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গমেজকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জবাই করে হত্যা করা হয়। খ্রিস্টান হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস। তারপর ৭ জুন ঝিনাইদহে বৃদ্ধ পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে এবং ১০ জুন পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আইএস। এর কিছুদিন পর ১ জুলাই ঝিনাইদহে হিন্দু সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে ও বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আওয়ামী লীগ নেতা মংশৈনু মারমাকে হত্যা করা হয়। সেদিনই দিবাগত রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারী রেস্তোরায় হামলা চালিয়ে ১৭ জন বিদেশি ও ৩ জন বাংলাদেশিকে জবাই করে হত্যা করে। পরদিন সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় হিন্দু পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে কুপিয়ে আহত করা হয় এবং কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নগুয়া এলাকায় বিবেকানান্দ পাঠাগার ও মন্দিরের সেবায়েতের উপর হামলা হয়।
দেশের অবস্থা যখন এই, ভিন্নধর্মের মানুষের প্রাণ যখন তলোয়ারের নিচে ঝুলছে, সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া হামলায় সরকার চিন্তিত ও প্রশাসন দিশেহারা; সিরিয়ার মত ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা, তখন কোথায় সারা জাতিতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হবে, হামলার শিকার ও হুমকির মুখে থাকা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সকলে মিলে উঠেপড়ে লাগবে, ইসলামের নামে ভিন্নধর্মের মানুষ হত্যার ঘটনায় মুসলমানরা লজ্জিত হয়ে শোচনীয় আত্মগ্লানিতে ডুবে থাকবে, তা নয় তারা তারা বুঁদ হয়ে আছে ঈদের আনন্দে।
সবার আনন্দ-উৎসবের বাহার দেখলে মনেই হবে না দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বগলে জায়নামাজ আর মাথায় টুপি পরে হাজার হাজার মানুষ শোলাকিয়ার ইদগাহে গেল, নামাজ পড়ল, হাসিমুখে বাড়ি ফিরে গেল, কিন্তু তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যে দুইজন পুলিশ সদস্যকে প্রাণ হারাতে হলো, আহত হয়ে জীবনসঙ্কটের মুখোমুখী হলো আরও অন্তত দশজন পুলিশ সদস্য, তাদের নিয়ে ওই নামাজীদের কোনো মাথাব্যথা আছে কি? নেই। তারা ঠিকই বাড়িতে গিয়ে পোলাও-কোর্মা নিয়ে বসে পড়েছেন।
দেশ, জাতি ও মানবতার সঙ্কটকালে ঈদের নামে এই পাশবিক উল্লাসকে ধিক্কার জানাই। আমাকে কেউ ঈদ মোবারক বলবেন না।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21540#sthash.UvgCin8g.dpuf

আদর্শের শূন্যতা আদর্শ দিয়েই পূরণ করতে হয়


জঙ্গিবাদ নামক সঙ্কটটা নিছক নিরাপত্তার সঙ্কট বা শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্কট বা অর্থনৈতিক সঙ্কট হলে এত কথার প্রয়োজন ছিল না, এত চিন্তারও কারণ ছিল না। আমরা একটু সজাগ হলেই সমাধান হয়ে যেতে পারত। কিন্তু এটা আদর্শের সঙ্কট। ভয়াবহ আদর্শিক শূন্যতার মুখোমুখী হয়েছি আমরা। কেবল আদর্শ দিয়েই এ শূন্যস্থান পূরণ হতে পারে, অন্যকিছু দিয়ে নয়।
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ধরনের দায়িত্বহীনতার কথা বলা হলেও পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত যে ভয়াবহ আদর্শিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলছে না। অথচ মূল সমস্যাটা এখানেই।
সৎ হয়ে বাঁচার, ন্যায় ও সাম্যে ভরপুর একটি সমাজে বসবাস করার এবং পৃথিবীর জন্য কিছু একটা করে যাবার বাসনা প্রত্যেক তরুণের থাকে। এটাই তারুণ্যের শক্তি। তারুণ্য চায় সে কিছু একটা করবে, যা অন্যরা করতে পারছে না।
পৃথিবীব্যাপী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন দেখে তার কোমল হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়। সে এমন একটি আদর্শ খুঁজে বেড়াতে থাকে যা দ্বারা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে, মানুষকে শান্তি দিতে পারে এবং নিজের জীবনকেও সফল করতে পারে।
দুর্ভাগ্যবশত তেমন কোনো আদর্শ আমাদের প্রবীণরা, আমাদের বাবা-মায়েরা, আমাদের সমাজপতিরা, শিক্ষকরা ও রাষ্ট্রপরিচালকরা তরুণদেরকে দিতে পারছে না। আমাদের প্রবীণরা এখনও যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি নিয়ে মেতে আছে তার গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস কেবল ব্যর্থতার ইতিহাস, প্রতারণার ইতিহাস- এটা সবাই জানে।
ওসব ব্যর্থ মতবাদ এক সময় কোটি কোটি তারুণ্যকে আকর্ষণ করতে পারলেও কোটি মানুষের রক্তে কেনা ওই আদর্শগুলো মানবজীবনে কার্যকর করার পর যখন দেখা গেল মানুষ কড়াই থেকে লাফিয়ে চুলোয় পড়েছে মাত্র, বাস্তবে একটুও শান্তি আসছে না, তখন ক্রমেই ওসব আদর্শ গ্রহণযোগ্যতা হারাতে থাকে। বর্তমানে ওই আদর্শগুলোকে ঘষামাজা করে যতই চকচকে করে উপস্থাপন করা হোক তা আর তরুণদেরকে আকর্ষণ করতে পারছে না। তরুণরা নতুন কিছুর সন্ধান করছে।
এই নতুন বা বিকল্প আদর্শ হিসেবে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে ইসলাম। লক্ষ লক্ষ তরুণ-যুবক স্বপ্ন দেখছে ইসলাম নামক দ্বীন বা জীবনব্যবস্থাটিকে মানবজাতির সামগ্রিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করে মানবতার মুক্তি নিশ্চিত করতে। ইসলামের প্রতি তরুণদের এই ঝোঁকের পেছনে দুইটি যৌক্তিক কারণ আছে। সেগুলো হচ্ছে-
১. ইসলামের একটি সোনালী অতীত আছে। আদর্শ হিসেবে ইসলাম এককালে কতটা শক্তিশালী ও সফল আদর্শ ছিল তা ইতিহাসের বই পড়লেই বোঝা যায়।
২. ইসলাম কেবল ইহজাগতিক মুক্তির উপায়ই হাজির করে না, পরকালীন সফলতারও পথ দেখায়। ‘ইহকালে শান্তি, পরকালে মুক্তি’- ইসলামের এই মন্ত্র পৃথিবীর যে কোনো আদর্শ থেকে ইসলামের স্বতন্ত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে।
এই মন্ত্রেই উজ্জীবিত হয়ে লাখ লাখ তরুণ-যুবক এখন ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সংগ্রাম করছে। তারা মানুষের সমষ্টিগত জীবনে ইসলামের প্রতিষ্ঠা দেখতে চায়। ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করে ন্যায় ও শান্তি আনয়ন করতে চায়। দুঃখ-দুর্দশা, অন্যায়, অবিচার, শোষণ, দারির্দ্য থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে চায়। সর্বোপরি নিজেদের জীবনকে সফল করতে চায়।
সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল একটি শ্রেণি মানুষের শুভ চেতনাকে কাজে লাগিয়ে উগ্রবাদ সৃষ্টি করে, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একই ঘটনা ঘটছে ইসলামের বেলাতেও।
ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ তরণদের কল্যাণকামী চেতনাকে অকল্যাণের পথে ব্যবহার করছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। সৃষ্টি হচ্ছে জঙ্গিবাদ। তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে- ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য বিধর্মীদেরকে, বিদেশিদেরকে বা কাফের-মুরতাদ-নাস্তিক হত্যা করতে হবে। এতে কোনো পাপ তো হবেই না, বরং এটাই তোমাকে জান্নাতে নিতে পারবে। যদি তা করতে গিয়ে শহীদ হও, তবে বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবে। অথচ ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই, নিরীহ মানুষ হত্যার তো প্রশ্নই ওঠে না।
এই যে একটি আদর্শকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সন্ত্রাসের জন্ম দেয়া হচ্ছে, রক্তপাত সৃষ্টি করা হচ্ছে, এর সমাধান কী? আমরা দেখি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের পন্থা বেছে নেয়া হয়, দমনাভিযান চালানো হয়, মনে করা হয়- জঙ্গিরা সংখ্যায় যেহেতু বেশি নয়, তাই তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারলে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলেই জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু ইতিহাস বলে- শুধু শক্তি প্রয়োগ করে কোনোকালে কোনো আদর্শকে দমন করা যায় নি। জঙ্গিবাদকেও ওভাবে দমন করা যাবে না।
জঙ্গিবাদের পথে ধাবিত তরুণদেরকে ইসলামের আদর্শ দিয়েই বোঝাতে হবে যে- তোমাদেরকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওটা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সঠিক পথ নয়। ও পথে জীবন গেলে শহীদ হওয়া যাবে না। আল্লাহর রসুল জঙ্গিবাদ করেন নি। যদি কোরআন-হাদীস থেকে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে জঙ্গিবাদের অসারতা তুলে ধরা যায়, ইসলামের প্রকৃত আদর্শটা তাদের সামনে উপস্থাপন করা যায়, ইসলামের জন্য, সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার কল্যাণমুখী দিক-নির্দেশনা প্রদান করা যায় তবে কেবল জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে তা-ই নয়, ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত তরুণরাই দেশ ও জাতির জন্য অনেক বড় মানবস¤পদে পরিণত হতে পারবে। আদর্শের শূন্যতা ইসলাম দিয়েই পূরণ করা সম্ভব, তবে বিকৃত ইসলাম নয়, বিকৃত ব্যাখ্যা নয়। সেটা হতে হবে আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলের প্রকৃত ইসলাম।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21516#sthash.6DUWDT0L.dpuf

ইসলামী বইমেলা ফাঁকা কেন?


এবারের ইসলামী বইমেলায় ক্রেতা নাই। কেন নাই? নয়া দিগন্তের রিপোর্টার অনেক খোঁজাখুজি করে দুইটি কারণ বের করেছেন।
১। বিভিন্ন কারণে মানুষের পকেটে টাকা নাই। এ কারণে মানুষ বই কিনতে আসছে না।
২। ইসলামী বই কেনেন ধার্মিক মানুষেরা। কিন্তু তারা এখন দৌড়ের উপর আছেন। বই কিনবে কখন? সে জন্য মেলায় ক্রেতার ভিড় নেই।
ফেব্রুয়ারির বইমেলায় লাখো মানুষের ভিড়ে তিল ঠাঁই ছিল না। যানজট, ভিড়, হয়রানির ভয় সব উপেক্ষা করে মানুষ মেলায় গেছে। একবার নয়, বারবার গেছে। বই কিনেছে। বিজ্ঞানের বই, গল্পের বই, ইতিহাসের বই, দর্শনের বই, উপন্যাস। বই বিক্রেতারাও বাম্পার ব্যবসা করেছেন। তখন পাবলিকের পকেটে টাকা ছিল, অথচ চার মাস পরে রমজান মাসে পাবলিক এতই গরীব, এতই গরীব হয়ে গেল যে, ইফতারের মার্কেটে তিল ধারণের ঠাঁই নাই, শুধু বই মেলা গড়ের মাঠ।
ধার্মিক মানুষরা দৌড়ের উপর আছেন- এ কথা বলে রিপোর্টার কী বোঝালেন? ঢাকা শহরে গিজগিজ করছে মানুষ। হাঁটার সময় মানুষের জ্যাম। এই লাখ লাখ মানুষ কেউ ধার্মিক নয়? তাহলে তওহীদী জনতার মিছিলে লক্ষ লক্ষ লোক কোত্থেকে আসে? কোটি কোটি মুসলমান রোজা রাখছেন, তারাবি পড়ছেন তারা সব অধার্মিক?
আসলে এগুলো হচ্ছে আবোল তাবোল অজুহাত। আসল কারণ হচ্ছে- ধর্ম থেকে অধিকাংশ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাই ধর্মীয় বইয়ে তাদের আগ্রহ নিঃশেষ হয়ে গেছে। কেন আগ্রহ থাকবে? আগ্রহ থাকার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি আছে কি? এই একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের যুগে, যুক্তিবাদিতার যুগে, মুক্তচিন্তার যুগে আপনি একগাদা অপ্রয়োজনীয় মাসলা-মাসায়েল নিয়ে হাজির হবেন আর লক্ষ মানুষ সেগুলো কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে, গলায় তাবিজ বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখবে- এটা আশা করেন কীভাবে?
ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, হুজুগ সৃষ্টি করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উসকানি চলছে, একের পর এক দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইসলামের অপব্যবহারের মাধ্যমে। মানুষ দিন দিন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছে, শিক্ষিত লোকেরা অনেকে ইসলামবিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছে। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তানরা পর্যন্ত নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, অল মুসলিমস আর টেররিস্ট।
এভাবে ধর্মীয় ইস্যুতে যখন রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে তখন আপনি দোকান সাজিয়ে বসেছেন- দোয়ার ভাণ্ডার, রূহের রহস্য, জ্বিন-পরীদের ইতিহাস, আমলে নাজাত, সেকেন্ডে-মিনিটে লক্ষ কোটি নেকির উপায়, লজ্জাতুন্নেছা, বেহেশতের কুঞ্জি, মরণের আগে ও পরে, বারো চান্দের ফজিলত, সোলেমানি খাবনামা ও ফালনামা, কবরের আযাব, বেহেশতের হুর ইত্যাদি নিয়ে। কমনসেন্সের কী ঘনঘটা!
প্রকৃত ধর্ম হবে বাস্তব সমস্যার বাস্তব সমাধান, কাল্পনিক সমাধান নয়। ধর্মের সেই রূপটি আমরা হারিয়ে ফেলেছি এটা স্বীকার করতে হবে। চলমান অস্থির দুনিয়াকে শান্তিময় করার জন্য আমাদের এই মাসলার বইগুলো কী দিক নির্দেশনা দিয়েছে? কিছুই না। অথচ নবী-রসুলগণ ও সাহাবীরা মানুষের বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান করে শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠার উদাহরণ রেখে গেছেন।
আজকে লাখ লাখ মুসুল্লি একত্র হয়, হুজুরের সাথে সাথে সোবাহানাল্লাহ আলহামুলিল্লাহ জিকির করে কোটি কোটি সওয়াব আর জান্নাতের গাছ নিয়ে বাড়ি চলে যায়। পড়ার, জানার, শোনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও তারা মনে করেন না। দুনিয়ার জন্য ধর্ম নয়, ধর্ম কেবল পরকালের বিষয়। আর সেখানে সুখী হতে সওয়াব লাগবে। তাদের কুয়োর গণ্ডি এটুকুই।
এখনও যদি ইসলামের চিন্তাবিদদের বোধোদয় না হয় তবে অপেক্ষা করুন- নিজেরা বই লিখবেন, নিজেরা ছাপাবেন, নিজেরাই বসে বসে পড়বেন। দুঃখ-কষ্ট-সমস্যায় জর্জরিত মানুষ আত্মিক শূন্যতা পূরণের জন্য প্রেমের কবিতা পড়বে, ভূতের বই পড়বে তবু কথিত ধর্মীয় বইয়ের ধারেকাছে ভিড়বে না।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21457#sthash.vqFFEbSg.dpuf

ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ষড়যন্ত্র চলছে! জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিন

ঢাকার গেন্ডারিয়ায় একটি নির্মাণাধীন মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে অনলাইনে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে প্রকাশ্যে। মসজিদ বন্ধ করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়কে অভিযুক্ত করে ভিডিও ছাড়া হয়েছে, যেটা ইতোমধ্যেই প্রায় দুই লক্ষ মানুষ দেখেছে এবং হাজার হাজার শেয়ার হয়েছে। অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ওই ভিডিওর সাথে এমন সব উস্কানিমূলক বক্তব্য পোস্ট করা হচ্ছে যাতে খুব সহজেই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে।
অনেকেই সেই ভিডিও দেখে এবং বক্তব্য পড়ে উত্তেজিত হয়ে প্রকাশ্যে হিন্দুধর্মাবলম্বীদেরকে হত্যা ও উচ্ছেদ করার জন্য তথাকথিত জেহাদের ডাক দিচ্ছে। কেউ কেউ প্রতিবাদ হিসেবে মন্দির ভাঙ্গার জন্য প্ররোচনা দিচ্ছে। এই প্রচারণার পেছনে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। বেশ কিছু বিতর্কিত জাতীয় পযায়ের গণমাধ্যমও বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িকতার লেজুড় লাগিয়ে প্রচার করছে। পত্রিকার সেই রেফারেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে উত্তেজনা সৃষ্টির কাজে।
যেখানে মসজিদটি নির্মিত হচ্ছিল, বলা হচ্ছে সেটা সরকারি লিজের জমি, দুই বছরের জন্য নাকি লিজ নেয়া হয়েছে। আইন মোতাবেক লিজের জমিতে কেউ স্থায়ী স্থাপত্য নির্মাণ করতে পারে না। কিন্তু মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি হচ্ছে- ওই এলাকায় অনেকগুলো মন্দির থাকলেও সেখানে মসজিদ নেই। তাই তারা সেখানে মসজিদ বানাচ্ছে। আর তাতে বাধ সেধেছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়। বলা হচ্ছে- হিন্দুদের পক্ষ থেকে নাকি পুলিশে জিডি করার পর পুলিশ এসে মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয় এবং মসজিদ থেকে মুসল্লিদেরকে বের করে দেয়।
বস্তুত ঘটনা যা-ই ঘটুক, মসজিদ বানানো বৈধ হোক বা অবৈধ হোক, হিন্দুরা বাধা দিক বা না দিক, কোনো অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলতে দেয়া যায় না। দেশে আইন আছে, আদালত আছে। কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি দিবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে পরোয়া না করে যারা হিন্দু মার, মন্দির ভাঙ্গো, মালাউন হঠাও, জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড় ইত্যাদি সন্ত্রাসবাদী স্লোগান দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের অভিসন্ধী নিয়ে ভেবে দেখতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যদি এখনই সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার আশঙ্কা আছে।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21423#sthash.REKz3pcs.dpuf

মানুষ বাঁচবে নাকি মানবতা?


একজন মানুষ হত্যা করাকে আল্লাহ সমস্ত মানবজাতিকে হত্যার সমতুল্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেছেন। আবার তিনিই কোর’আনে মু’মিনদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ দিচ্ছেন, শত্রু সেনার সাথে সর্বাধিক কঠোর আচরণের নির্দেশ দিচ্ছেন। আপাতদৃষ্টে বিষয়টি সাংঘর্ষিক মনে হতে পারে। কিন্তু না, সাংঘর্ষিক নয়। কেন নয় তা মহাভারতের একটি ঘটনার আলোকে বলছি।
আমরা সবাই জানি মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আঠারো অক্ষৌহীনী মানুষ মারা গিয়েছিল। এরকম ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ তার আগে কখনও ঘটেছে বলে জানা যায় না। ওই যুদ্ধে যুধিষ্ঠির ছিলেন পাণ্ডববাহিনীর নেতৃত্বে। সেই যুধিষ্ঠিরের ব্যাপারে জানা যায়, তিনি নাকি স্বশরীরে স্বর্গে আরোহন করেছিলেন, আর সেই স্বর্গারোহনের সময় তার সঙ্গী ছিল একটি কুকুর।
কুকুরটিকে তিনি এতই ভালোবাসতেন যে, স্বর্গেও তিনি কুকুর নিয়েই প্রবেশ করতে চাইছিলেন। কিন্তু তাতে বাধা দিয়ে বলা হয় যে- কুকুর নিয়ে স্বর্গে প্রবেশ করা যাবে না! এতে ব্যথিত হন ধর্মরাজ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন- স্বর্গে যদি যাই তবে একে নিয়েই যাব, স্বার্থপরের মত ওকে ছেড়ে যেতে পারব না। যাহোক, পরে অবশ্য জানা গেল- স্বয়ং ধর্ম দেবতাই কুকুরের বেশ ধরে তার সততার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন।
প্রশ্ন হলো- একটা কুকুরের প্রতি যে যুধিষ্ঠিরের এত ভালোবাসা, এত মায়া, সেই যুধিষ্ঠিরই কুরুক্ষেত্র ঘটিয়ে অবলীলায় লাখো-কোটি মানুষ হত্যা করলেন কোন যুক্তিতে? তখন কি তার মধ্যে মানবতা ছিল না? অবশ্যই ছিল। বস্তত মানবতার কল্যাণকামী হয়েই তিনি যুদ্ধ করেছেন, মানুষ হত্যা করেছেন, লাশের স্তুপ গড়েছেন, মানবতা ধ্বংস করতে নয়।
মানুষ কখনও কখনও এতই কলুষিত ও বিষাক্ত হয়ে পড়ে যখন একটা কুকুরের যে মূল্য থাকে, মানুষের প্রাণ তার চেয়েও মূল্যহীন হয়ে পড়ে। দূষিত হয় সমাজ, সভ্যতা, বিশ্ব। সেই দূষণ সংক্রমিত হতে থাকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম। ন্যায়-অন্যায়বোধ বলতে কিছু থাকে না। মানুষ পশুর মত ভোগবাদী-আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপরতায় ডুবে যায়। মানুষের মানবিক গুণগুলো ক্রমেই ঝরে পড়তে থাকে। অন্যদিকে পাশবিক গুনের বিস্তার ঘটে মহামারী আকারে। তখন সিদ্ধান্ত নিতে হয়- মানুষ বাঁচবে নাকি মানবতা। যুধিষ্ঠির মানুষ মেরে মানবতা বাঁচিয়েছিলেন। যুদ্ধ তো মানুষেরই কর্মফল! সমাজ যখন কলুষিত হয়ে পড়ে তখন সে নিজেই যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে নেয় নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।
বস্তুত এই মানবতা বাঁচানোর জন্যই আল্লাহ নরহত্যার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন, আর ওই মানবতা বাঁচানোর জন্যই যুদ্ধের নির্দেশও দিয়েছেন।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21409#sthash.4EsjyycK.dpuf - See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21409#sthash.4EsjyycK.dpuf

সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপন: অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বিশ্লেষণ


আন্তঃধর্মীয় ঐক্য স্থাপনের জন্য হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে আমরা বারবার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েছি। বলার চেষ্টা করেছি কেন তারা একত্রে মিলেমিশে থাকবে, কেন একে অপরকে ভাই বলে মনে করবে।
আমরা যে শাশ্বত সত্যগুলো সবার সামনে উপস্থাপন করি তা হচ্ছে-
ক. সকল মানুষ এক স্রষ্টার সৃষ্টি, এক পিতা-মাতার সন্তান। আমরা সৃষ্টিগতভাবেই একে অপরের ভাই।
খ. সকল ধর্মই এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসেছে। সকল ধর্মই মানবতার কথা বলে, শান্তির কথা বলে। অশান্তি চায় কেবল ধর্মের অপব্যবহারকারী ধর্মব্যবসায়ী চক্রটি। এরা সব ধর্মেই আছে। আমাদের উচিত এদেরকে পরিহার করা।
গ. সকল ধর্মের নবী-রসুল, মহামানব ও অবতারগণ একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানুষকে ন্যায় ও সত্য শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আমরা আমাদের নিজেদের ক্ষুদ্র আক্রোশ মেটাতে গিয়ে যেন তাদের কাউকে অসম্মান না করি, বেআদবী না করি। বরং আমাদের উচিত তাদের প্রত্যেককেই সমানভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা।
ঘ. প্রায় সব ধর্মগ্রন্থ এক স্রষ্টার পক্ষ থেকেই প্রেরিত। সেগুলোতে মানুষ স্বার্থের কারণে অনেক বিকৃতি প্রবেশ করালেও এখনও যে কোনো সত্যসন্ধানী ব্যক্তি ধর্মগ্রন্থগুলো খুললে সব ধর্মগ্রন্থেই একই সত্যের প্রতিফলন দেখতে পাবেন।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনের। এজন্য বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদের নিয়ে জেলায় জেলায় সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা আয়োজন করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে উদ্যোগটি শুভ। তবে এর শতভাগ ফসল ঘরে তুলতে চাইলে সরকারকে আরেকটু উদ্যোগী হয়ে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যের কথাও প্রচার করতে হবে, যেমনটা আমরা করেছি। তবে যারা সেটা প্রচার করবে তারা নিজেরাই যদি তাতে বিশ্বাস না রাখেন, তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এ কথা বলছি তার কারণ আছে।
যে ধর্মগুরুদেরকে মঞ্চে উপস্থিত রেখে সরকার সর্বধর্মীয় সম্প্রীতির বাণী প্রচার করছে, দেশের কল্যাণে একে অপরকে ভালোবাসার পরামর্শ দিচ্ছে- সেই ধর্মগুরুদের অবস্থা আমরা সবাই জানি। তারা বড়জোর এক সারিতে বসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে সক্ষম, কিন্তু একজন আরেকজনের জন্য চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার মত ভ্রাতৃত্ববোধও তাদের অধিকাংশেরই নেই।
তারা বাইরে যতই অসাম্প্রদায়িক ঠাটবাট দেখাক, ওই হিন্দু ধর্মগুরু জীবন গেলেও হয়ত যবন (!) ধর্মগুরুটির হাতে পানি পর্যন্ত খাবে না, মুসলমান ধর্মগুরুটিও জীবন গেলেও অপবিত্র-মালাউন (!) হিন্দু ধর্মগুরুর বাড়িতে পা রাখবে না। কারণ তারা উভয়েই বিশ্বাস করে একমাত্র তার ধর্মই ঠিক, তার ধর্মই সত্য, বাকি সব ভুয়া। সেই ভুয়া ধর্মের অনুসারীদের সাথে এক সারিতে বসে মন্ত্রী-এমপিদের আলোচনা শোনা যায়, কিন্তু ভাই বলে বুকে টেনে নেয়া যায় না। তাহলে যে ধর্ম থাকবে না! জাহান্নামে-নরকে-হেলে জ্বলতে হবে।
সাম্প্রদায়িক বিভক্তিটা হচ্ছে এখানে। এই ব্যবধানকে কাজে লাগিয়েই এতকিছু ঘটানো হয়। সে ব্যবধানকে ঘোঁচানোর জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটাই হচ্ছে আসল বিষয়।
একটি ঘটনা বলি। গত বছর রোজার মাসে আমরা (হেযবুত তওহীদ) যখন দেশজুড়ে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন আয়োজন করছিলাম, তখন ‘সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক স্লোগানটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছিল এবং সকলে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন রমনা সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দীরের সেবায়েত/পুরোহিত শেখর লাল গোস্বামী আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বললেন, ‘আপনাদের বক্তব্য আমার খুব ভালো লাগে, আপনারা আমাদের মন্দীর প্রাঙ্গনে একটি সর্বধর্মীয় সম্মেলন আয়োজন করুন’। আমরা তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেখানে গেলাম।
তখন চলছিল রমজান মাস। উভয়ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে করতে অনেক সময় কেটে যায়। এরই মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। আমরা ভাবলাম, মন্দীরের বারান্দাতেই ইফতার করে ফেলি। তাহলে ইফতার শেষে আরও কিছুক্ষণ প্রামাণ্যচিত্র দেখানো যাবে, আলোচনা করারও কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা যতটা সহজভাবে চিন্তা করলাম বিষয়টা যে ততটা সহজ ছিল না তা বুঝতে অনেক দেরী হয়ে যায়।
সাধারণত মসজিদ কমিটির মধ্যে যে ধরনের দ্বন্দ্ব থাকে, সেইরকমই দ্বন্দ্ব ছিল ওই মন্দীর কমিটিতে, যা আমরা জানতাম না। আমাদেরকে যিনি দাওয়াত করেছিলেন ঘটনাক্রমে তার প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষটি আমাদের এই সর্বধর্মীয় সম্মেলন সম্পর্কে জানতে পেরে ব্যাপক হুলুস্থূল শুরু করে। তাদের আপত্তি হচ্ছে- মন্দিরের বারান্দায় বসে মুসলমানরা ইফতার করবে কেন? এতে নাকি মন্দীরের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। এক পর্যায়ে মন্দীরের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন রায় নন্দী থানায় খবর দেন। ফলে পুলিশ এসে আমাদের নিরপরাধ সদস্যদেরকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশী ক্রোধ আছড়ে পড়ে আমাদের ওপর। ধমকের পর ধমক আসে। পুলিশরা প্রশ্ন করে- তোরা কেমন মুসলমান রে, হিন্দুদের মন্দিরে তোদের কাজ কী, হিন্দুদের মন্দিরে ইফতার করিস, তোমাদের রোজা হবে? সম্ভব হয় তো পুলিশই আমাদের সর্বধর্মীয় সম্মেলনের সখ মিটিয়ে দেয়।
মুসলমান হয়ে হিন্দুদের মন্দীরে যাওয়া ও মন্দীর প্রাঙ্গনে বসে ইফতার করার মত ভয়াবহ অপরাধে (?) আমাদের ১২ জন সদস্যকে পুরো একটি মাস জেল খাটতে হয়েছিল সেবার। এখনও সেই মামলা শেষ হয় নি। সুযোগ বুঝে হেযবুত তওহীদকে এক হাত নিতে ভুল করে নি মিডিয়াগুলোও।
এখন বলুন- এই যখন একটি সমাজের বাস্তবতা, মুসলমানের পদচিহ্ন পড়লে যখন মন্দীরের পবিত্রতা নষ্ট হয়, আর মন্দির প্রাঙ্গনে ইফতার করলে যখন মুসলমানের রোজা নষ্ট হয়, তখন এদের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করবেন কী করে? কীভাবে এদের মধ্যে গেঁথে থাকা সংকীর্ণতা ও জাত-পাতের ভেদাভেদ উঠিয়ে সবাইকে মানবতার ছত্রছায়ায় একত্রিত করবেন?
তবু আমরা হতাশ নই। থেমে যাই নি। আমরা মার খেয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি, হয়রান হয়েছি, প্রাণ হারিয়েছি, প্রয়োজনে আরও ত্যাগ স্বীকার করব। কিন্তু যা সত্য তা প্রচার করবই। কেউ পাশে থাকলেও করব, না থাকলেও করব। যেহেতু সরকার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাই সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে- আপনাদের এই উদ্যোগ যেন নিছক লোকদেখানো বিষয়ে পরিণত না হয়। সকল ধর্মের পুরোহিতদের এক সেমিনারকক্ষে উপস্থিত করেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন না, কীভাবে আন্তঃধর্মীয় ঐক্য স্থাপন করা যায় সেই উপায় ভাবুন। তাতে হেযবুত তওহীদকেও পাশে পাবেন।
.
ছবি: হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21364#sthash.PqXkHX82.dpuf

শান্তির ধর্ম ইসলাম ও জিহাদ


ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, সিস্টেম, যাকে মানবজীবনে কার্যকরী করলে অনিবার্যভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ সুখে-শান্তিতে-নির্ভয়ে বসবাস করবে। দরজা খুলে ঘুমাবে। রাত-বেরাতে নিরাপদে চলাচল করবে। নারীর সম্ভ্রম রক্ষিত থাকবে। যার যার প্রাপ্য অধিকার সে সে বুঝে পাবে।
ইসলাম এই শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সামর্থ্য রাখে বিধায় ইসলামকে বলা হয় শান্তির ধর্ম। এখন আপনি যদি প্রশ্ন তোলেন যে, যেহেতু ইসলামে জিহাদ আছে, কিতাল আছে, রক্তপাত আছে, সুতরাং এটা শান্তির ধর্ম হয় কী করে তাহলে প্রশ্নটা নিতান্তই অর্বাচীনসুলভ মনে হয়। এটা চিন্তাশীল-বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের প্রশ্ন হতে পারে না। এ ধরনের প্রশ্ন তোলেন যারা, তারা শান্তির ধর্ম বলতে মূলত এমন ধর্মের সন্ধান করেন যে ধর্ম পালন করতে গেলে কাউকে সংঘর্ষের মুখোমুখী হতে হবে না, দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়াতে হবে না, কারও ক্ষতির কারণ হতে হবে না, কারও পথরোধ করে দাঁড়াতে হবে না। যে ধর্ম সমাজ নিয়ে কথা বলবে না, দেশ নিয়ে ভাবতে শেখাবে না, অন্যায় দেখেও প্রতিবাদের প্রেরণা যোগাবে না| দেহ ও আত্মার মধ্যে যে ধর্ম বেছে নেবে কেবল আত্মাকে, সমষ্টি ও ব্যক্তির মধ্যে বেছে নিবে ব্যক্তিকে, ইহকাল ও পরকালের মধ্যে বেছে নিবে পরকালকে, দ্বীন ও দুনিয়ার মধ্যে বেছে নিবে দ্বীনকে। অন্যদিকে কীভাবে মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ হবে, কীভাবে তাদের ইহকালকে সার্থক করতে হবে, কীভাবে তাদের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, সাংস্কৃতিক, বিচারিক তথা সমষ্টিগত জীবনকে পরিচালনা করতে হবে সেটা নিয়ে ওই ধর্মের কোনো বক্তব্য থাকবে না। জাতীয় জীবনে মানুষ মল-মূত্রের সাগরে হাবুডুবু খাক, ওই ধর্মের তাতে আপত্তি নেই, কেবল ব্যক্তিজীবনে বছরে একবার গয়া-কাশিতে, রোম-বেথেলহামে বা মক্কা-মদীনায় যেতে পারলেই ধর্ম সন্তুষ্ট।
শান্তির ধর্ম বলতে যদি আপনি একদল গো-বেচারা, নিরীহ মানুষের উদ্দেশ্যহীন কিছু আচার-প্রথা ও আনুষ্ঠানিকতা বোঝেন, যাতে সমাজের কোনো উপকার বা ক্ষতি কিছুই হয় না, যে ধর্ম পালন করলে বা না করলে কারও কিছু যাবেও না আসবেও না, তাহলে সেই শান্তির ধর্ম থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। যে ধর্ম মানুষের কোনো উপকারে লাগল না সেটা ধর্মই নয়, শান্তির ধর্ম বা অশান্তির ধর্ম তো পরের কথা।
বাবুরাম সাপুড়ের কাছে এমন সাপ চাওয়া হয়েছিল যে সাপ-
`ছোটে না কি হাঁটে না,
কাউকে যে কাটে না,
করে না কো ফোঁসফাঁস
মারে নাকো ঢুসঢাস,
নেই কোন উৎপাত,
খায় শুধু দুধভাত।
আপনিও যদি তেমন `উৎপাতহীন শান্তির ধর্ম’ (!) প্রত্যাশা করে থাকেন তবে স্পষ্ট বলে রাখছি- ইসলাম তা নয়। ইসলাম কেবল ফোঁসফাসই করবে না, ছুটবে, হাঁটবে ও কাটবে। অন্যায়ের হৃৎপিণ্ড ধরে টান দিবে। মিথ্যার কণ্ঠনালী উপড়ে নিবে। শোষকের শোষণযন্ত্রে নির্দয় আঘাত করবে। অত্যচারী শাসকের শাসনদণ্ড ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলবে।
ইসলাম প্রতিবাদ শেখায়, সংগ্রাম শেখায়। জিহাদ আর কিছু নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। জিহাদ আছে বলেই ইসলাম শান্তির ধর্ম হবার দাবী রাখে। এক গালে চড় খেয়ে অপর গাল পেতে দিলে ব্যক্তিগত আত্মার উন্নতি হতে পারে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না।
একদিন রসুলের এক সাহাবী একটি পার্বত্য এলাকা অতিক্রম করছিলেন। সেখানে একটি মিষ্ট পানির ঝর্ণা ছিল। ঝর্ণাটির সৌন্দর্য্য তাকে মুগ্ধ করলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এখন থেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি এই জনমানবহীন স্থানে বসবাস শুরু করবেন এবং সেখানে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত-উপাসনা করবেন। এজন্য তিনি রসুলের অনুমতি নিতে গেলেন। কিন্তু রসুলাল্লাহ তার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে নিষেধ করে দিলেন এই বলে যে, কখনই এমনটা কর না। জেনে রাখ- ঘরে বসে বসে সত্তর বছর সালাত আদায় করার চেয়ে স্বল্প সময়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া অধিক উত্তম (তিরমিজি, ই.ফা, হাদীস নং- ১৬৫৬)।
দেহ-আত্মা, ইহকাল-পরকাল, সমষ্টি-ব্যক্তি নিয়েই মানুষের জীবন। এর ভারসাম্য রক্ষিত না হলে সমাজও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে বাধ্য। একদল মানুষ কেবল আত্মা, পরকাল ও ব্যক্তিগত সাধনা-তপস্যা নিয়ে পড়ে থাকবে, কোথায় কী হচ্ছে, কে খেয়ে আছে কে না খেয়ে মরছে, কে শোষণ করে অর্থের পাহাড় গড়ছে কে শোষিত হয়ে সর্বসান্ত হচ্ছে, কে যুলুম করছে কে মাজলুম হচ্ছে, কে রাজনীতির নামে প্রতারণা করছে কে প্রতারিত হচ্ছে সেসব দেখবে না, শুনবে না, জানবে না, দুনিয়াদারী জ্ঞান করে এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে, সমাজকে রসাতলে যেতে দেখেও নিশ্চিন্তে চোখ বুঁজে ধ্যান-সাধনায় মত্ত হবে, এই শিক্ষা দেয় যে ধর্ম সেটা শান্তির ধর্ম? নাকি যাবতীয় স্বার্থপরতা, ভোগবাদিতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার কল্যাণে আত্মত্যাগ করার শিক্ষা দেয় যে ধর্ম সেটা শান্তির ধর্ম?
সত্যমাত্রই মিথ্যার সাথে সংঘর্ষ তৈরি করবে, এটা সত্যের ধর্ম। একইভাবে শান্তির ধর্মও সেটাই যা অশান্তি সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা শক্তির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। যদি সংঘর্ষই না হবে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে কী করে? এই সংঘর্ষই জিহাদ।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21344#sthash.46Xxo4ng.dpuf - See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21344#sthash.46Xxo4ng.dpuf

মুসলিমরা জেহাদ ছেড়েছে, সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ধরেছে


জেহাদ নিয়ে সরব হোন আলেম তথা সুধিজন
নয়তো জেহাদ হয়ে যাবে জঙ্গিবাদের গুপ্তধন।
কোর’আনে কীসের উল্লেখ কতবার হয়েছে সেই আলোকে আমলগুলোর গুরুত্বের ক্রমধারা দাঁড়ায় এমন:-
১. জেহাদ ৬৭৪ বার।
২. সালাত শব্দটি এসেছে ১৪০ বার
৩. যাকাত শব্দটি এসেছে ৪২ বার
৪. হজ্ব শব্দটি এসেছে ৩১ বার
৫. সওম শব্দটি এসেছে ২ বার
গুরুত্বের ধারণা ভুল হলে যে কোনো বস্তু অর্থহীন হয়ে যায়। যেমন মানুষের শরীরে অপরিহার্য, ভাইটাল কিছু অঙ্গ থাকে যেগুলো ছাড়া মানুষ বাঁচবে না। যেমন মাথা, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস। একটা হাত, চোখ বা পা ছাড়াও মানুষ বাঁচতে পারে কিন্তু কষ্টকর তার জীবন।
আবার চুল, ভ্রু শরীরেরই অংশ কিন্তু এগুলো না থাকলে সৌন্দর্যহানি ছাড়া তেমন কিছু ক্ষতি নেই। এখন যদি আপনি চুলকে হৃৎপিণ্ডের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তাহলে মানুষ আপনাকে একটা আহাম্মক বললে আমি আপত্তি করব না। তেমনি জেহাদের চেয়ে সালাতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে যে, তার বেলাতেও একই কথা।
আল্লাহ মোমেনের সংজ্ঞার মধ্যে কোন আমলটির কথা বলেছেন? জেহাদ। তিনি বলেন, মোমেন শুধু তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনে (তওহীদ), অতঃপর তাতে সন্দেহ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। (সুরা হুজরাত ১৫)।
ক্ষমা ও জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোন আমলটির কথা আল্লাহ কোর’আনে উল্লেখ করেছেন? জেহাদ। তিনি বলেন, “আমি কি তোমাদের এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব যা তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা হচ্ছে আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ঈমান (তওহীদ) এবং জীবন ও সম্পদ কোরবান করে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ। (সুরা সফ ১০)।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমলটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে পলায়ন মনোবৃত্তি। কারণ এই কাজটি বিপদজনক এবং এতে সর্বোচ্চ কোরবানির প্রয়োজন হয়। গরু কোরবানি না, নিজেকে কোরবানি করতে হয়। এই ডরে জেহাদকে ডিঙিয়ে, এড়িয়ে ইসলাম পালনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে সুবিধাবাদী শ্রেণি। তাদের কাছে জেহাদের চেয়ে সালাত সওম তো বটেই দাড়ি টুপি পর্দা বহুগুণ গুরুত্বপূর্ণ।
যে সওম সম্পর্কে সর্বসাকুল্যে মোটে চারটি আয়াত, সেই সওম পালনকে নিয়ে সারাদিন কত হুলুস্থুল। পুরো মুসলিম দুনিয়ার চালচিত্রই পাল্টে যায়। সেহরির সময় মাইকে, গান গেয়ে ডাকাডাকি, রেডিওতে অনুষ্ঠান, টিভিতে টকশো, পোশাক আশাকে আরবীয় ভাবমূর্তি, ইফতারের ছড়াছড়ি, আকাশ ছোঁয়া দ্রব্যমূল্য, তারাবি, কোর'আন খতম ইত্যাদি বহুকিছু। অন্যদিকে জেহাদের ব্যাপারে যত কম কথা বলা যায় ততই যেন মঙ্গল।
মডারেট মুসলিম ভাইয়েরা, আমি জানি ইসলামের জেহাদ নিয়ে আপনারা বড়ই শরমিন্দা। রসুলের জীবনে এত যুদ্ধ, এত রক্তপাত। আপনারা চান এগুলো না বলে মোলায়েম মানবিক বিষয়গুলো বলে ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলে প্রচার করতে। কিন্তু সে গুড়ে বালি।
জঙ্গি আর ইসলাম বিদ্বেষীরা কাছা দিয়ে নেমেছে ইসলামকে যুদ্ধময় বলে প্রমাণ করতে। আপনাকে জানতে ও জানাতে হবে যে, ইসলামের জেহাদ সবচেয়ে বড় মানবতার কাজ। দুষ্কৃতকারীর বিনাশহেতু যে যুদ্ধ তা চিরকালই ধর্মযুদ্ধ। পুলিশের কাছে অস্ত্র থাকবে এটা যেমন স্বাভাবিক, মুসলিমের কাছে তলোয়ার থাকাও ছিল তেমন স্বাভাবিক। এই অস্ত্রের প্রয়োগ হবে শান্তি রক্ষার্থে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। পুলিশের সেই অস্ত্র যদি সন্ত্রাসী লুট করে নেয় তখন সেটার ব্যবহার কীরূপ হবে বলে মনে করেন? তখন ইসলাম হয়ে যাবে জঙ্গিবাদ আর মুসলিম হয়ে যাবে সন্ত্রাসী। এখন সেটাই হয়েছে। মুসলিমরা অস্ত্র ত্যাগ করে নিরীহ মুসুল্লি হয়েছে, ফলে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ধরেছে।
জেহাদ নিয়ে মিডিয়া, রাষ্ট্র এমনকি আলেম সমাজ যখন নীরব তখন জেহাদের সঠিক আকীদা মানুষ জানতে পারে না। জেহাদ যে আসলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ও জেহাদ যে সম্পূর্ণ বিপরীত- এটা সাধারণ মানুষের অজানাই থেকে যায়। কিন্তু বাঁচতে হলে জানতে হবে।
আপনি না বললেও সেগুলো কথিত জঙ্গিরা নিজেদের ব্যাখ্যা সহকারে ঠিকই প্রচার করে যাচ্ছে। কিশোর, তরুণ, যুবক তাদের মতবাদে দীক্ষিত হচ্ছে। মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে জেহাদের আয়াত ও হাদিস দেখিয়ে তাদেরকে বোঝাচ্ছে যে, দেখ, দেখ জেহাদের কত গুরুত্ব, কত মাহাত্ম্য অথচ এটা কেউ তোমাকে শেখায় নি। কোর’আন দেখে মুসলিম উদ্বুদ্ধ হবে না তো কী দেখে হবে?
এজন্য সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের জেহাদ সংক্রান্ত আকিদা পরিষ্কার করা প্রয়োজন যেন তারা ইসলামের দলিল ও যুক্তি দেখে নিশ্চিত হয় যে, গাড়িতে পেট্রল বোমা ছুঁড়ে নিরীহ মানুষ হত্যা, নিরস্ত্র মানুষকে গুপ্তহত্যা, পুরোহিত হত্যা ইসলাম সম্মত নয়। ইসলামে জেহাদের সঠিক রূপটি কী, কে জেহাদ করবে, কার বিরুদ্ধে করবে এসব তথ্য বেশি বেশি মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। আজকে পুলিশ নিজে মানুষের হাতে লাঠি তুলে দিচ্ছে কেন? হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে জেহাদের মূল লক্ষ্য অর্থাৎ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেই কোর’আনে এতবার জেহাদের উল্লেখ হয়েছে।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21328#sthash.epEoOmDI.dpuf

সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু’র ধারণাটাই সাম্প্রদায়িকতার অংশ


আমরা প্রায়ই কিছু পরিসংখ্যানের মুখোমুখী হয়ে থাকি যেখানে দাবি করা হয়- অমুক দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা কিংবা অমুক দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমরা সরকারি চাকরি-বাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া শোনা হচ্ছে না, তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছে না, তাদের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে ইত্যাদি। অনেক সময় এমনও দেখা যায়- পাশ্ববর্তী দেশের সংখ্যালঘুদের চাকরিতে সুযোগ-সুবিধার দৃষ্টান্ত টেনে তার সাথে আমাদের দেশের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয় এবং করে থাকে এমন একটি শ্রেণি যারা নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করেন।
অসাম্প্রদায়িকতার আড়ালে তাদের এই সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর ধারণাকে আমি তাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ মনে করি। তারা আদতে অসাম্প্রদায়িক নন, ঘোর সাম্প্রদায়িক। প্রকৃতপক্ষে যদি তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনাই লালন করতেন, যদি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতাকেই স্থান দিতে পারতেন, তাহলে ধর্মবিশ্বাসের সংকীর্ণ মাপকাঠি ছেড়ে মানুষ ও মানবতার পক্ষে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করতেন। এ দেশে যেমন কেবল হিন্দুরাই সরকারি চাকরি-বাকরি ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় না, মুসলমানরাও হয়, তেমন ভারতেও কেবল মুসলমানরাই যে বৈষম্যের শিকার হয় তা নয়, সেখানেও হিন্দুরাও বৈষম্যের শিকার হয়।
বস্তুত দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার সব সমাজেই আছে। যে সমাজের সমাজপতিরা, যে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়করা ন্যায়ের দণ্ড ধারণ করবে না, নিজের বিপক্ষে গেলেও সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করতে পারবে না, সেই সমাজে সেই রাষ্ট্রে দুর্বলমাত্রই নির্যাতিত হবে, নিপীড়িত হবে, বঞ্চিত হবে ও শোষিত হবে। সেই দুর্বল মুসলমান হোক, হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক বা খ্রিস্টান হোক। কাজেই যারা প্রকৃতপক্ষেই মানবতার পক্ষে অবস্থান নিতে চান, যারা প্রকৃতপক্ষেই ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে ধারণ করেন এবং ধর্ম-বর্ণ-বিশ্বাসের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া বৈষম্যকে দূরীভূত করতে চান তাদের উচিত সমাজে ন্যায় স্থাপনের জন্য সংগ্রাম করা। সমষ্টিগত জীবনে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে কোনো ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষই বৈষম্যের শিকার হবে না। রাষ্ট্র সংখ্যালঘুও দেখবে না, সংখ্যাগুরুও দেখবে না, ন্যায়’ই হবে রাষ্ট্রের ধর্ম। সেটা কি পারবেন আমাদের কথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা?
যে কোনো চাকরি প্রদানের পূর্বে কর্তৃপক্ষ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে দেখবে দুইটি বিষয়। দক্ষতা ও সততা। যদি একজন ব্যক্তি ওই দায়িত্ব পালনের মত দক্ষ হয় এবং ব্যক্তিজীবনে সৎ হয় তবে সে ওই চাকরি পাওয়ার হক্বদার। সে হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক, বৌদ্ধ হোক, আস্তিক হোক, নাস্তিক হোক, নামাজী হোক, বেনামাজী হোক, সেটা ওখানে দেখার বিষয় নয়। এই দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে যদি নব্বইভাগ চাকরিজীবীই হিন্দু হয়, অথবা নব্বইভাগ হিন্দুর দেশে যদি নব্বইভাগ চাকরিজীবী মুসলমান হয় তবে সেটাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। আমার দেশে মুসলমানরা সংখ্যায় অধিক, তাই কেবল মুসলমানদেরকেই চাকরি দিতে হবে যদিও তারা অদক্ষ ও অসৎ হয়- এটা যেমন অগ্রহণযোগ্য, একইভাবে এ দেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু, তাই তাদের জন্য নির্দিষ্ট চাকরির কোটা রাখতেই হবে, চাকরি তাদেরকে দিতেই হবে যদিও তারা অযোগ্য, অদক্ষ ও অসৎ হয় সেটাও সমান অগ্রহণযোগ্য। যার হৃদয়ে দেশপ্রেম বলে কিছু নাই, যে ব্যক্তি দুর্নীতি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, দেশের উন্নতিতে যার অবদান নাই, সেই আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপর লোক যে ধর্মেরই হোক সে অবশ্যই পরিত্যাজ্য। ধর্মবিশ্বাস নয়, চাকরির মানদণ্ড হোক দক্ষতা ও সততা।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21296#sthash.WmDFaMz4.dpuf