Sunday, July 10, 2016

জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থিত কিনা?


জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে চাইলে সবার আগে আপনাকে একটি মৌলিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থিত কিনা?
যদি আপনি মনে করেন জঙ্গিবাদ ইসলামসমর্থিত, তাহলে জঙ্গিদের পিছনে না ছুটে ধর্মবিশ্বাস নির্মূল করতে হবে। সোজা কথা কোটি কোটি আস্তিককে নাস্তিক বানাতে হবে। তাদেরকে বিশ্বাস করাতে হবে- আল্লাহ বলে কেউ নাই, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম নাই, কোর’আন মিথ্যা ইত্যাদি। যতক্ষণ একজনও আস্তিক থাকবে ততক্ষণ জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকেই যাবে। পারবেন দেশের ১৫ কোটি মুসলমানকে নাস্তিক বানাতে?
আর যদি মনে করেন জঙ্গিবাদ ইসলামসমর্থিত নয়, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে কিছু মানুষকে জঙ্গি বানানো হচ্ছে, তাহলে লাইনের কথা বলতে হবে, লাইনের কাজ করতে হবে, বে-লাইন হওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে সবার আগে ব্যাপকভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় যুক্তি-প্রমাণ-তথ্য প্রচার করতে হবে। কে করবে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে ওই ধর্মীয় যুক্তি-প্রমাণগুলো এতটা শক্তিশালী হতে হবে যার সামনে জঙ্গিবাদের পক্ষের সমস্ত যুক্তি মাঠে মারা যায়।
“আমি একজন আলেম হয়ে যেহেতু জঙ্গিবাদকে হারাম বলছি সুতরাং প্রমাণিত হলো জঙ্গিবাদ হারাম”- এইটা কোনো যুক্তি না। এটা কুযুক্তি। এসব করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই সম্ভব নয়। যার যে ফতোয়ায় স্বার্থ থাকে সে-ই কেবল ওই ফতোয়া গ্রহণ করে, বিপক্ষের ফতোয়া কেউ নেয় না। ইসলামের এমন বিষয় খুব কমই আছে যে ব্যাপারে আলেমদের পরস্পরবিরোধী ফতোয়া নাই। জঙ্গিরা প্রাণ দিয়ে দিচ্ছে কথিত জিহাদ করতে এসে, আপনি কি মনে করেন তাদের পক্ষে ফতোয়া দেওয়ার লোক নাই?
আলেম ওলামারা যেটা হালাল বলবে সেটা হালাল হবে, আর হারাম বললে হারাম হবে- এমন কথা কোর’আন হাদীসের কোথাও নাই। সবাই জানে আল্লাহ-রসুল যেটাকে হারাম বলেছেন সেটা হচ্ছে হারাম। তাহলে তুমি ভাই হারাম ফতোয়া দেওয়ার কে? তোমারে কেউ গোণায় ধরে?
হামলাকারী জঙ্গিরা ফতোয়া শুনে জবাই করতে আসে নি যে, পাল্টা ফতোয়া দিয়ে ফিরিয়ে দিবেন। তারা গ্রামের মুর্খ-সুর্খ রহিম-করিম নয়। তারা কোর’আন-হাদীস পড়ুয়া ও ইসলামের ইতিহাস জানা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী তরুণ। তাদের ভুলটা তাই কোর’আন-হাদীস-ইতিহাস থেকেই ধরিয়ে দিতে হবে।
সরকারকে বলব- অন্য দশটা ইস্যুর মত জঙ্গিবাদ নিয়ে ফাউল খেলবেন না। বিদেশে আপনার সেকেন্ড হোম থাকতে পারে, আমাদের নাই। যদি আমাদের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তাহলে কাজের কাজ করুন। কোর’আন-হাদীস, ইতিহাস থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত যুক্তি-প্রমাণ দিতে পারবে যে বা যারা, তারা হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক, খ্রিষ্টান হোক, নাস্তিক হোক তাদের সাহায্য নিন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে মাদ্রাসাপড়ুয়া হতে হবে, দাড়ি-টুপি থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রচারণায় গতি বাড়ান। এ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখবেন- হাজারবার ‘জঙ্গিবাদ হারাম, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ ইত্যাদি আপ্তবাক্য আউড়ানোর চাইতে ‘কেন জঙ্গিবাদ হারাম’ তার স্বপক্ষে একটি যুক্তির কথা বলা বেশি কার্যকরী।
বিভাগ: 
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/21559#sthash.ULQAbuIN.dpuf

No comments:

Post a Comment