
জঙ্গিরা নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে যা নিঃসন্দেহে অন্যায় ও অতি গর্হিত কাজ। কিন্তু এই গর্হিত কাজ করে নি এমন রাজনৈতিক দল আমাদের দেশে একটাও নেই।
.
জঙ্গি হামলার কয়েকদিনের মাথায় যে দলনেত্রী বললেন, কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় যাবে সেটা এখন দেখার বিষয় নয় সেই দলটিই মাত্র একবছর আগে ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে কতজন নিরীহ মানুষকে পেট্রল বোমার আগুনে পুড়িয়ে কাবাব বানিয়েছে, সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মহোৎসব চালিয়েছে তা কি সবাই ভুলে গেল? নাকি প্রেট্রল বোমায় পুড়ে মরা মানুষগুলো বিদেশি ছিল না বলে সেটা জায়েজ হয়ে গেছে? আজ তারা জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ছবক দেয়। নৈতিক অধঃপতন কত গভীরে পৌঁছলে শত শত নিরীহ মানুষের দগ্ধ লাশের উপর দাঁড়িয়ে এমন বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলা যেতে পারে!
.
আবার কিছুদিন আগেই দলীয় ব্যানারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে শ’ খানেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাল তা কি গর্হিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ছিল না? আমাদের সরকার এ বিষয়ে কতখানি অনুতপ্ত, মিডিয়া কতখানি সোচ্চার, দেশবাসী কতখানি ক্ষুব্ধ? ওইসব নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমাদের গণভবনে কয়দফা বৈঠক হয়েছে? মিডিয়ায় কয়টা টকশো হয়েছে? পাড়ায়-মহল্লায় কয়টা কমিটি গঠিত হয়েছে?
.
নিরীহ মানুষ হত্যাকে যদি আমরা সত্যই নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য কাজ বলে মনে করতাম, নিজেরা যদি এতই সাধু হতাম, যদি সত্যিই আমরা জাতীয় চেতনার ধারক হতাম তাহলে গণতন্ত্রের নামে এসব হানাহানি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও জাতীয় ঐক্য আরও অনেক আগেই তৈরি হয়ে যেত। কিন্তু না, এসব হতাহতের ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারে নি, আমাদের সংকীর্ণতার মায়াজাল ভেদ করে পরিস্থিতির বিভীষিকা উপলব্ধি করাতে পারে নি, তাই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির প্রচেষ্টাও হালে পানি পায় নি।
.
এতেই বোঝা যায় নিরীহ মানুষ হত্যা আমাদের দুশ্চিন্তার আসল কারণ নয়, আসল কারণ ধর্ম। ধর্মের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা হয়েছে বলেই আমাদের যত দুশ্চিন্তা, যদি গণতন্ত্রের নামে হত তাহলে বিশজন কেন, চল্লিশজন মানুষ জবাইও জায়েজ করে ফেলতাম আমরা।
No comments:
Post a Comment