Sunday, July 10, 2016

‘তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর।’ কাদেরকে?


সুরা নিসার ৮৯ নম্বর আয়াতকে ব্যবহার করা হয় কথিত মুরতাদ হত্যার বৈধতা প্রমাণ করতে। এই আয়াতে আল্লাহ নাকি ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদদের যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আসলেই কি তাই? চলুন বিশ্লেষণ করা যাক। আয়াতটিতে বলা হয়েছে- ‌'তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না। যারা এই আয়াতকে কথিত মুরতাদ হত্যার স্বপক্ষে দলিল হিসেবে দেখিয়ে থাকেন তারা নিশ্চয়ই জানেন এই আয়াতে যাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা কারা। বস্তুত তারা মক্কার কুরাইশ ইসলামবিরোধী রাষ্ট্রশক্তির প্রতিনিধি, যারা ইসলামের জন্মশত্রু। আর তাদেরকে হত্যা করার জন্য যাদেরকে হুকুম করা হচ্ছে তারা মদীনার সদ্যগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ। এখানে অভিযুক্তরা হচ্ছে সেইসব লোক, যারা পৃথিবী থেকে ইসলামের নাম-গন্ধ মুছে ফেলার এমন কোনো প্রয়াস নেই যা অবশিষ্ট রেখেছিল। এরাই সেই ষড়যন্ত্রকারী যারা নবী মোহাম্মদ (সা.)কে প্রাণে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ও সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখে নি। এরা রসুলের আসহাবগণকে বিনা অপরাধে কী অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে তা ইতিহাস। ইয়াসীর, সুমাইয়া (রা.)কে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল এবং নব্যগঠিত মদীনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার পায়তারা করছিল মক্কার এই কাফেররাই। বস্তুত মুসলমানদের সাথে মক্কাবাসী মুশরিকদের তখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল। সেই যুদ্ধাবস্থায় মদীনার পক্ষ থেকে কিছু ট্রুপ মক্কাবাসীর বাণিজ্য কাফেলায় হামলা করার জন্য ওঁত পেতে থাকত। অতঃপর যখন সুযোগ পাওয়া যেত, হামলা চালানো হত। দেখা যেত আক্রান্ত হয়ে মক্কাবাসী কাফেররা তখন জীবন বাচানোর জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিত। মুশরিকদের পক্ষ ত্যাগ করে মোহাম্মদের (সা.) পক্ষ নেওয়ার ভান করত। কিন্তু যেই না তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হত, তারা মক্কায় গিয়ে পুনরায় নবগঠিত মদীনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাতো। এই যে তারা ছলনা-প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মুসলিম সেনাদের হাত থেকে প্রাণরক্ষা করতে পারত- পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনার দ্বিতীয় কোনো দৃষ্টান্ত আছে কি? যুদ্ধাবস্থা চলাকালে শত্রুপক্ষের একদল সেনাকে হাতের কাছে পেয়েও শুধু মুখের কথায় বিশ্বাস করে ছেড়ে দেওয়ার মত উদারতা প্রায়ই দেখাত মুসলিম সৈন্যরা। এমন উদারতার সুযোগ নিয়ে প্রাণরক্ষা করার পর যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং পুনরায় মুসলিম রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধ করে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে না তো কার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে? দু'টি বিষয় আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে। যুদ্ধাপরাধ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা। নবী (সা.) যখন মদীনায় গেলেন, মদীনায় আল্লাহর হুকুমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠিত হলো, রসুলাল্লাহ হলেন রাষ্ট্রপতি। কুরাইশদের সাথে শুরু হলো সশস্ত্র যুদ্ধ। একটার পর একটা অভিযান চলতে থাকল। কখনও রসুল নিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কখনও সাহাবীদের পাঠিয়েছেন। এই যে যুদ্ধ শুরু হলো সেই যুদ্ধের নীতি কী হবে, কাকে ক্ষমা করা হবে, কাকে শাস্তি দেওয়া হবে, কী শাস্তি দেওয়া হবে সেসব বিষয়ে আল্লাহ কোর’আনে বিধি-বিধান পাঠাতে লাগলেন। উপরোক্ত আয়াতটি তেমনই একটি যুদ্ধনীতি। সেই নীতি মোতাবেক যারা ইতোপূর্বে রসুলাল্লাহর সেনাবাহিনীতে ছিল, অতঃপর রসুলের পক্ষ ত্যাগ করে প্রতিপক্ষের সেনাবাহিনীতে গিয়ে যোগ দিয়েছে বা প্রতিপক্ষের পক্ষে কাজ করেছে (কথায়, কাজে, সশস্ত্রভাবে যেভাবেই হোক)- এমন অপরাধীকে মুসলমান কর্তৃপক্ষ কী শাস্তি দিবে সেটাই আল্লাহ বলে দিচ্ছেন উপরোক্ত আয়াতে। এমন অপরাধীকে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই ক্ষমা করবে না, করলে সেটা হবে নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। অন্যদিকে মদীনায় শাসনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম গৃহীত হলে রসুলাল্লাহ হলেন সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। এমতাবস্থায় সেই রাষ্ট্রের মৌলিক স্তম্ভের বিরুদ্ধে গিয়ে, রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো, মানুষকে বিভ্রান্ত করা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পায়তারা করা ইত্যাদির শাস্তিস্বরূপ আল্লাহর পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান এসেছে। ফলে রসুলাল্লাহর সময় রাষ্ট্রদ্রোহীদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এই শাস্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও যুদ্ধাপরাধের শাস্তি। প্রচলিত অর্থের ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করার শাস্তি নয়। রাষ্ট্রে বসবাসকারী যে ধর্মবিশ্বাসের মানুষই এই অপরাধ করবে বিধি মোতাবেক তারই শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড; আর সে দণ্ড কার্যকর করবে রাষ্ট্র, অর্থাৎ কর্তৃপক্ষ। ইসলাম কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো অপরাধেরই দণ্ড কার্যকরের অনুমোদন দেয় না। - See more at: http://www.istishon.com/?q=node/20592#sthash.59Twji0Z.dpuf

1 comment:

  1. ভাই প্লিজ মিসকল মি ০১৮১৮৭২৩৩১৫

    ReplyDelete