
আন্তঃধর্মীয় ঐক্য স্থাপনের জন্য হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে আমরা বারবার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েছি। বলার চেষ্টা করেছি কেন তারা একত্রে মিলেমিশে থাকবে, কেন একে অপরকে ভাই বলে মনে করবে।
আমরা যে শাশ্বত সত্যগুলো সবার সামনে উপস্থাপন করি তা হচ্ছে-
ক. সকল মানুষ এক স্রষ্টার সৃষ্টি, এক পিতা-মাতার সন্তান। আমরা সৃষ্টিগতভাবেই একে অপরের ভাই।
খ. সকল ধর্মই এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসেছে। সকল ধর্মই মানবতার কথা বলে, শান্তির কথা বলে। অশান্তি চায় কেবল ধর্মের অপব্যবহারকারী ধর্মব্যবসায়ী চক্রটি। এরা সব ধর্মেই আছে। আমাদের উচিত এদেরকে পরিহার করা।
গ. সকল ধর্মের নবী-রসুল, মহামানব ও অবতারগণ একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানুষকে ন্যায় ও সত্য শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আমরা আমাদের নিজেদের ক্ষুদ্র আক্রোশ মেটাতে গিয়ে যেন তাদের কাউকে অসম্মান না করি, বেআদবী না করি। বরং আমাদের উচিত তাদের প্রত্যেককেই সমানভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা।
ঘ. প্রায় সব ধর্মগ্রন্থ এক স্রষ্টার পক্ষ থেকেই প্রেরিত। সেগুলোতে মানুষ স্বার্থের কারণে অনেক বিকৃতি প্রবেশ করালেও এখনও যে কোনো সত্যসন্ধানী ব্যক্তি ধর্মগ্রন্থগুলো খুললে সব ধর্মগ্রন্থেই একই সত্যের প্রতিফলন দেখতে পাবেন।
ক. সকল মানুষ এক স্রষ্টার সৃষ্টি, এক পিতা-মাতার সন্তান। আমরা সৃষ্টিগতভাবেই একে অপরের ভাই।
খ. সকল ধর্মই এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসেছে। সকল ধর্মই মানবতার কথা বলে, শান্তির কথা বলে। অশান্তি চায় কেবল ধর্মের অপব্যবহারকারী ধর্মব্যবসায়ী চক্রটি। এরা সব ধর্মেই আছে। আমাদের উচিত এদেরকে পরিহার করা।
গ. সকল ধর্মের নবী-রসুল, মহামানব ও অবতারগণ একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানুষকে ন্যায় ও সত্য শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আমরা আমাদের নিজেদের ক্ষুদ্র আক্রোশ মেটাতে গিয়ে যেন তাদের কাউকে অসম্মান না করি, বেআদবী না করি। বরং আমাদের উচিত তাদের প্রত্যেককেই সমানভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা।
ঘ. প্রায় সব ধর্মগ্রন্থ এক স্রষ্টার পক্ষ থেকেই প্রেরিত। সেগুলোতে মানুষ স্বার্থের কারণে অনেক বিকৃতি প্রবেশ করালেও এখনও যে কোনো সত্যসন্ধানী ব্যক্তি ধর্মগ্রন্থগুলো খুললে সব ধর্মগ্রন্থেই একই সত্যের প্রতিফলন দেখতে পাবেন।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনের। এজন্য বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদের নিয়ে জেলায় জেলায় সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা আয়োজন করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে উদ্যোগটি শুভ। তবে এর শতভাগ ফসল ঘরে তুলতে চাইলে সরকারকে আরেকটু উদ্যোগী হয়ে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যের কথাও প্রচার করতে হবে, যেমনটা আমরা করেছি। তবে যারা সেটা প্রচার করবে তারা নিজেরাই যদি তাতে বিশ্বাস না রাখেন, তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এ কথা বলছি তার কারণ আছে।
যে ধর্মগুরুদেরকে মঞ্চে উপস্থিত রেখে সরকার সর্বধর্মীয় সম্প্রীতির বাণী প্রচার করছে, দেশের কল্যাণে একে অপরকে ভালোবাসার পরামর্শ দিচ্ছে- সেই ধর্মগুরুদের অবস্থা আমরা সবাই জানি। তারা বড়জোর এক সারিতে বসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে সক্ষম, কিন্তু একজন আরেকজনের জন্য চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার মত ভ্রাতৃত্ববোধও তাদের অধিকাংশেরই নেই।
তারা বাইরে যতই অসাম্প্রদায়িক ঠাটবাট দেখাক, ওই হিন্দু ধর্মগুরু জীবন গেলেও হয়ত যবন (!) ধর্মগুরুটির হাতে পানি পর্যন্ত খাবে না, মুসলমান ধর্মগুরুটিও জীবন গেলেও অপবিত্র-মালাউন (!) হিন্দু ধর্মগুরুর বাড়িতে পা রাখবে না। কারণ তারা উভয়েই বিশ্বাস করে একমাত্র তার ধর্মই ঠিক, তার ধর্মই সত্য, বাকি সব ভুয়া। সেই ভুয়া ধর্মের অনুসারীদের সাথে এক সারিতে বসে মন্ত্রী-এমপিদের আলোচনা শোনা যায়, কিন্তু ভাই বলে বুকে টেনে নেয়া যায় না। তাহলে যে ধর্ম থাকবে না! জাহান্নামে-নরকে-হেলে জ্বলতে হবে।
সাম্প্রদায়িক বিভক্তিটা হচ্ছে এখানে। এই ব্যবধানকে কাজে লাগিয়েই এতকিছু ঘটানো হয়। সে ব্যবধানকে ঘোঁচানোর জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটাই হচ্ছে আসল বিষয়।
একটি ঘটনা বলি। গত বছর রোজার মাসে আমরা (হেযবুত তওহীদ) যখন দেশজুড়ে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন আয়োজন করছিলাম, তখন ‘সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক স্লোগানটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছিল এবং সকলে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন রমনা সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দীরের সেবায়েত/পুরোহিত শেখর লাল গোস্বামী আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বললেন, ‘আপনাদের বক্তব্য আমার খুব ভালো লাগে, আপনারা আমাদের মন্দীর প্রাঙ্গনে একটি সর্বধর্মীয় সম্মেলন আয়োজন করুন’। আমরা তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেখানে গেলাম।
তখন চলছিল রমজান মাস। উভয়ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে করতে অনেক সময় কেটে যায়। এরই মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। আমরা ভাবলাম, মন্দীরের বারান্দাতেই ইফতার করে ফেলি। তাহলে ইফতার শেষে আরও কিছুক্ষণ প্রামাণ্যচিত্র দেখানো যাবে, আলোচনা করারও কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা যতটা সহজভাবে চিন্তা করলাম বিষয়টা যে ততটা সহজ ছিল না তা বুঝতে অনেক দেরী হয়ে যায়।
সাধারণত মসজিদ কমিটির মধ্যে যে ধরনের দ্বন্দ্ব থাকে, সেইরকমই দ্বন্দ্ব ছিল ওই মন্দীর কমিটিতে, যা আমরা জানতাম না। আমাদেরকে যিনি দাওয়াত করেছিলেন ঘটনাক্রমে তার প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষটি আমাদের এই সর্বধর্মীয় সম্মেলন সম্পর্কে জানতে পেরে ব্যাপক হুলুস্থূল শুরু করে। তাদের আপত্তি হচ্ছে- মন্দিরের বারান্দায় বসে মুসলমানরা ইফতার করবে কেন? এতে নাকি মন্দীরের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। এক পর্যায়ে মন্দীরের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন রায় নন্দী থানায় খবর দেন। ফলে পুলিশ এসে আমাদের নিরপরাধ সদস্যদেরকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশী ক্রোধ আছড়ে পড়ে আমাদের ওপর। ধমকের পর ধমক আসে। পুলিশরা প্রশ্ন করে- তোরা কেমন মুসলমান রে, হিন্দুদের মন্দিরে তোদের কাজ কী, হিন্দুদের মন্দিরে ইফতার করিস, তোমাদের রোজা হবে? সম্ভব হয় তো পুলিশই আমাদের সর্বধর্মীয় সম্মেলনের সখ মিটিয়ে দেয়।
মুসলমান হয়ে হিন্দুদের মন্দীরে যাওয়া ও মন্দীর প্রাঙ্গনে বসে ইফতার করার মত ভয়াবহ অপরাধে (?) আমাদের ১২ জন সদস্যকে পুরো একটি মাস জেল খাটতে হয়েছিল সেবার। এখনও সেই মামলা শেষ হয় নি। সুযোগ বুঝে হেযবুত তওহীদকে এক হাত নিতে ভুল করে নি মিডিয়াগুলোও।
এখন বলুন- এই যখন একটি সমাজের বাস্তবতা, মুসলমানের পদচিহ্ন পড়লে যখন মন্দীরের পবিত্রতা নষ্ট হয়, আর মন্দির প্রাঙ্গনে ইফতার করলে যখন মুসলমানের রোজা নষ্ট হয়, তখন এদের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করবেন কী করে? কীভাবে এদের মধ্যে গেঁথে থাকা সংকীর্ণতা ও জাত-পাতের ভেদাভেদ উঠিয়ে সবাইকে মানবতার ছত্রছায়ায় একত্রিত করবেন?
তবু আমরা হতাশ নই। থেমে যাই নি। আমরা মার খেয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি, হয়রান হয়েছি, প্রাণ হারিয়েছি, প্রয়োজনে আরও ত্যাগ স্বীকার করব। কিন্তু যা সত্য তা প্রচার করবই। কেউ পাশে থাকলেও করব, না থাকলেও করব। যেহেতু সরকার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাই সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে- আপনাদের এই উদ্যোগ যেন নিছক লোকদেখানো বিষয়ে পরিণত না হয়। সকল ধর্মের পুরোহিতদের এক সেমিনারকক্ষে উপস্থিত করেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন না, কীভাবে আন্তঃধর্মীয় ঐক্য স্থাপন করা যায় সেই উপায় ভাবুন। তাতে হেযবুত তওহীদকেও পাশে পাবেন।
.
ছবি: হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক।
.
ছবি: হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক।
বিভাগ:
No comments:
Post a Comment