
আমেরিকা:-
আমেরিকা চায় যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। চীন ও ভারতের বগলের নিচে আমেরিকার একটা শক্ত অবস্থান থাকবে না তা কীভাবে সম্ভব?
ইজরাইল:-
শক্তিধর দেশ ইজরাইলকে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতিই দেয় নি বাংলাদেশ। ভাবা যায়? স্বীকৃতি তারা আদায় করতে চাইবে যে কোনো মূল্যে এটা স্বাভাবিক। শোনা যাচ্ছে মোসাদ এবার বাংলাদেশকে নিয়ে পড়েছে।
ভারত:-
জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত চায় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় একটা অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রাখতে এবং বিশ্লেষকদের ধারণা- ভারত ইতোমধ্যেই তাতে সফল।
জঙ্গি:-
আইএস ও আল কায়েদা উভয়েই চায় ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে। গাজওয়াতুল হিন্দের ব্যাপারে এই উভয়গোষ্ঠীই দারুন আশাবাদী ও উত্তেজিত। আজ হোক কাল হোক ভারতের মূর্তি পূজারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই হবে এটাই তাদের বিশ্বাস। আর তার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এই উভয়গোষ্ঠীই বেছে নিয়েছে বঙ্গদেশকে। তাদের প্রতিযোগিতার আসর ক্রমেই জমে উঠছে। এ দেশের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো মোটামুটি দু-ভাগে ভাগ হয়ে কেউ আল কায়েদাকে সমর্থন দিয়েছে কেউ আইএসকে সমর্থন দিয়েছে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ কথিত ধার্মিক জনগোষ্ঠীর সমর্থন পাবার আশায় উভয়পক্ষই কথিত নাস্তিক, সমকামী, ব্লগার, প্রকাশক, হিন্দু, খ্রিস্টান, মুরতাদ হত্যা করে চলেছে।
সরকার:-
সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে জনসমর্থন হারিয়েছে। ধর্মানুভূতি ইস্যুতে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবাদী দুপক্ষই সরকারকে দুষেছে, এখনও সমানে দুষছে। কারণ সরকারের বদঅভ্যাস হলো- তারা উপরেরটাও খাবে আবার তলারটাও কুড়োবে। এ করতে গিয়ে অতি চালাক সরকারের গলাতেই ফাঁস পড়েছে।
পুলিশ:-
সরকার টিকে আছে পুলিশের বুলেট আর ব্যাটনের জোরে এমন অভিযোগ অনেক পুরোনো। সেই পুলিশের পরিবারের উপরও এবার হামলা হয়েছে। ফলে এতদিনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবার আর বিচ্ছিন্ন থাকে নি। পুলিশ বিষয়টিকে পার্সনালি নিয়েছে, একজন কর্মকর্তা বলেই দিয়েছে- এখন থেকে তারা আর জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করবে না, এখন থেকে যা করবে তা হলো যুদ্ধ। দেশে নাকি যুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছে, অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য মোতাবেক কয়েকদিন আগেও দেশের মানুষ শান্তিতে ঘুমুচ্ছিল।
বিএনপি:-
বিএনপি সরকারে নেই, বিরোধী দলে নেই, রাজপথেও নেই। আছে সংবাদসম্মেলনে, আছে লন্ডনে, আর আছে মেন্দি সাফাদির সাথে বৈঠকে। বহু ঈদ গেছে, ঈদের পর আন্দোলনও হয়েছে, সরকারের পতন হয় নি। জামাত-শিবির-হেফাজত কেউ কথা রাখে নি। পশ্চিম থেকেও কোনো সাহায্যের সুবাতাস বয়ে আসে নি। তবু আপোসহীন নেত্রী হাল ছাড়েন নি, ছাড়বেন না। তিনি যে কোনো মূল্যে সরকারের পতন ঘটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে- ক্ষমতার জন্য তারা নাকি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ডেকে আনতে চাইছে।
জামাত-শিবির:-
জামাত-শিবিরের হয়েছে মহাবিপদ। বিপদ আসলে কারও কোনো হুশ-জ্ঞান থাকে না, নীতিবোধ মনে থকে না। প্রথম সারির নেতৃত্ব হারিয়ে জামাত-শিবির যে প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাতে তাদের অতীতের সেই শক্তিশালী আদর্শিক দৃঢ়তা এখন নাই। শিবিরের অনেক পোলাপাইন এখন আদর্শিকভাবে দ্বিধাগ্রস্থ, সন্দেহগ্রস্থ। হাল ছেড়ে ঘরে বসে থাকবে? তারও উপায় নাই। পুলিশ ঘর থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একেকজনের মাথার উপরে ঝুলছে কম-বেশি পঞ্চাশটা করে মামলা। ধরে নিয়ে গুম করে ফেলা হচ্ছে। নির্যাতন করা হচ্ছে। ফলে অনেকেই উগ্রবাদী ধ্যান-ধারণার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সরকারের চাপাবাজ মন্ত্রীদের কথা বাদ রাখলেও, সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যাগুলোতে জামাত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে রায় দিচ্ছেন অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গও।
হেফাজত:-
৫ মে’র ঘটনায় হেফাজতের দাবি মোতাবেক হাজার হাজার আলেম-ওলামাকে হত্যা করেছে নাস্তিক সরকারের পুলিশ বাহিনী। সারারাত ধরে নাস্তিক পুলিশ এক নিষ্ঠুর/নির্মম অপারেশন চালিয়ে তাদেরকে রাজধানী থেকে কান ধরে বের করে দেয়! এই ঘটনায় তাদের ভেতরে কী পরিমাণ ক্ষোভ জমা হয়েছে, কী ভয়ানক প্রতিশোধের আগুন জ্বলে আছে তা কল্পনারও অতীত। হাজার হাজার হেফাজতী আলেম-ওলামা প্রতিশোধের শপথ নিয়ে রেখেছেন- হয় কতল নয়তো শহীদ। সরকার সেটা আচ করতে পেরে মাথায় হাত বুলিয়ে, রেলের বত্তিশ কোটি টাকার জমি দিয়ে হলেও বশে রাখার চেষ্টা করে এসেছে এতদিন। কিন্তু ছাই চাপা আগুন থেকে মাঝে মাঝেই স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। কবে কখন কোন কারণে হঠাৎ দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে কে জানে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা তার প্রমাণ। অবশ্য হেফাজতের আলেম ওলামারা আইএস ও আল কায়েদার মধ্যে কাকে সমর্থন দিচ্ছেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে হেফাজতের মন পেতে হলে নাস্তিক সরকার ও নাস্তিক ব্লগারের বিরুদ্ধে সর্বাধিক কঠোরতা দেখাতেই হবে।
চরমোনাই:-
প্রতিটি সমাবেশে তাদের জেহাদী স্লোগান আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিচ্ছে। নাস্তিক ব্লগার, মুরতাদ সরকার আর মালাউন হিন্দুদের বিরুদ্ধে দুইবেলা নিয়ম করে জিহাদ ঘোষণা করছে তারা। ভাগ্যগুনে তারা কোনো শক্ত ইস্যু খুঁজে পাচ্ছে না বিধায় রাজপথ গরম করতে একটু দেরী হচ্ছে। কিছুদিন আগে রাষ্ট্রধর্ম ইস্যুতে রাজপথ কাঁপানোর প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আদালত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখলে সেই উত্তেজনায় ভাটা পড়ে। শোনা যাচ্ছে তারা আবারও নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে চাচ্ছে শিক্ষানীতি ইস্যুতে ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে। এইসবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। একেকজন নাস্তিক, একেকজন ব্লগার, একেকজন সমকামী কিংবা একেকজন হিন্দু পুরোহিত হত্যার ঘটনাকে তারা মনে করেন শত্রুপক্ষের একেকটি উইকেটের পতন।
এমন একটি পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে পুলিশের সাঁড়াশী অভিযান, বন্দুকযুদ্ধে ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে বেশ ক’জন কথিত দুর্ধর্ষ জঙ্গি। এদিকে সাঁড়াশী অভিযানের প্রথম দিনই খবর পাওয়া গেল- পাবনায় আরেক সনাতন ধর্মী আশ্রমের সেবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। কে এই দুর্বৃত্ত? আইএস? আল কায়েদা? মোসাদ? বিএনপি? জামাত? শিবির? হেফাজত? চরমোনাই? স্থানীয় ভাড়াটে সন্ত্রাসী? কার পরিকল্পনায়, কার অর্থনৈতিক সহযোগিতায়, কার আশ্বাসে ঘটছে এসব? কী লক্ষ্য অর্জন করতে চায় হত্যাকারীরা?
হত্যাকারীকে ধরেও ধরা যাচ্ছে না। সমীকরণ মিলেও মিলছে না। এদিকে পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে চলছে যাচ্ছেতাই প্রপাগান্ডা। আচ্ছা, সিরিয়া সঙ্কটের শুরুতেও কি এরকম নানামুখী সমীকরণ সৃষ্টি হয়েছিল? তবে কি বাংলাদেশও সিরিয়ার পথেই হাঁটছে?
হত্যাকারীকে ধরেও ধরা যাচ্ছে না। সমীকরণ মিলেও মিলছে না। এদিকে পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে চলছে যাচ্ছেতাই প্রপাগান্ডা। আচ্ছা, সিরিয়া সঙ্কটের শুরুতেও কি এরকম নানামুখী সমীকরণ সৃষ্টি হয়েছিল? তবে কি বাংলাদেশও সিরিয়ার পথেই হাঁটছে?
বিভাগ:
No comments:
Post a Comment