Sunday, July 10, 2016

কোর'আনের নির্দেশ- জোড়ায় জোড়ায় কাট। আহ! কী অমানবিক!


গর্দানে আঘাত কর ও জোড়ায় জোড়ায় কাটো, পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর- কোর'আনের এই আয়াতগুলো পড়ে নাকি এক শ্রেণির মানবতাবাদীর দুঃখে হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আহা! মানুষ হত্যার নির্দেশ! তাও কে দিচ্ছে? আল্লাহ। এই কি তবে আল্লাহর দয়া-করুণার নমুনা? আল্লাহ যদি অসীম দয়ালুই হবেন তাহলে মানুষ হত্যার নির্দেশ কেন? তাদেরকে বলি- ভাই, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ‌'আমরা তোমাদের ভাতে মারব, পানিতে পারব' লাইনটা শুনে কি আপনার মানবতাবোধে আঘাত লেগেছে কোনোদিন? কিংবা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যখন স্লোগান উঠল- যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে, মানবতা মুছে ফেল টিস্যুতে- সেই সময়? অথবা যখন মিছিল থেকে স্লোগান ভেসে আসে- একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর, তখন কি দুঃখে আপনার অন্তর ফেটে যেত? পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা কি মানুষ নয়? যুদ্ধাপরাধীরা কি মানুষ নয়? শিবিরের যে পালাপাইনগুলা ধর্মের স্লোগান দিয়ে রগ কাটে তারা কি মানুষ নয়? অবশ্যই মানুষ। কিন্তু আপনি তাদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী উত্তেজিত স্লোগান দেওয়াকে অমানবিক মনে করেন না। কারণ, আপনি জানেন তারা অপরাধী। মানুষ তো সবাই। যে হিটলার ষাট লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করল সেও তো মানুষই ছিল, তবু তাকে ঘৃণা করেন কেন? হিটলারের জন্য কখনও আফসোস করেছেন? আহা! একজন মানুষ আত্মহত্যা করে মরে গেল! বলেছেন কখনও? 

এই জগতের অনেক সত্য ও সুন্দরের জন্ম দিয়েছে মানুষ, আবার মিথ্যার পক্ষ নিয়ে সত্য ও সুন্দরের বিনাশও করেছে মানুষ। গোড়ায় গেলে দেখা যাবে- মানুষ মূলত দুই ধরনের। এক- সত্যের ধারক, সত্যের পক্ষাবলম্বনকারী; দুই- মিথ্যার পক্ষাবলম্বনকারী। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চলে আসছে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। এই দ্বন্দ্বে যখন মিথ্যার বিনাশ ঘটিয়ে সত্যের জয় হয়েছে, মানুষ পেয়েছে শান্তি, ন্যায়, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি। আর যখন সত্যের কণ্ঠরুদ্ধ করে মিথ্যার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মানবজীবন অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, অনিরাপত্তায় ছেয়ে গেছে। সত্য-মিথ্যার এই দ্বন্দ্বে স্রষ্টা কখনই চান না মিথ্যার জয় হোক, মানুষ কষ্ট পাক। কারণ মানুষের ভেতরে তার রূহ আছে। মানুষের কষ্ট তাকে ব্যথিত করে। তাই যখনই মিথ্যার গাঢ় অন্ধকার মানবসমাজকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে তখন তিনি সত্য পাঠিয়ে মানুষকে ন্যায়-অন্যায়ের জ্ঞান দান করেছেন। মানুষের প্রতি করুণা করেছেন। যুগে যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা নবী-রসুলগণ সত্যের ভিত্তিতে বিশুদ্ধপ্রাণ সত্যনিষ্ঠ মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে মিথ্যার ধারকদের বিনাশ ঘটিয়েছেন। আসলে ওটা বিনাশ নয়, ওটা নবনির্মাণের সূচনা। নতুন ফসল বুনতে হলে পুরানো ফসল কাটতে হয়, নতুন সভ্যতার সূচনা করতে পুরোনো জরা-জীর্ণ, ব্যর্থ মতবাদের উচ্ধেদ করতে হয়। আর তা করতে গেলেই আঘাত লাগে কোনো না কোনো কায়েমী স্বার্থে। তখন হৈ হৈ রৈ রৈ করে তেড়ে আসে পূর্বের বিকৃত ধর্মমতের ধ্বজাধারী ও সমাজনেতারা। মিথ্যার ধারকরা সর্বশক্তি একত্রিত করে সত্যকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করে ফেলতে চায়। করেছেও অনেকবার। কিন্তু যখন আল্রাহ সিদ্ধান্ত নেন তিনি সত্যকে বিজয়ী করবেনই, তখন মিথ্যার ধারকদের মর্মন্তুত শাস্তি দিয়ে হলেও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাস্তি তিনি কখনও নিজ হাতে দেন, যেমন ফেরাউনকে দিয়েছিলেন, কখনও সত্যনিষ্ঠ মু'মিনদের মাধ্যমে দেন, যেমন মোহাম্মদ (সা.) এর অনুসারীদের হাত দিয়ে ক্বাবার ধর্মব্যবসায়ী ফেতনাবাজদের শাস্তি দিয়েছিলেন। মিথ্যার ধারকদের জন্য এটা শাস্তি হলেও সত্যনিষ্ঠদের জন্য এটা করুণা। আল্লাহ প্রতিহিংসাপরায়ণ নন। যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হতেন তাহলে দুনিয়াতে কোনো নাস্তিক, কোনো পাপাচারি, কোনো আল্লাহদ্রোহী মানুষ নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেত না। তিনি তো কেবল এটুকুই চান যে, মানুষ ন্যায়-অন্যায় বুঝে সঠিক পথে চলে শান্তিতে বসবাস করুক। মানবজাতির এই শান্তির পথে যারা বাধা হয়ে দাড়ায় তারা যেমন মানুষের শত্রু, মানবতার শত্রু, তেমন আল্লাহরও শত্রু। এই শত্রুদের বিনাশ হওয়া উচিত মানুষেরই কল্যাণে। জোড়ায় জোড়ায় যাদেরকে কাটতে বলা হচ্ছে তাদের মধ্যেও কি আল্লাহ রূহ নেই? আছে। তাদেরকে কি আল্লাহ সৃষ্টি করেন নি? করেছেন। তবু আল্লাহ তাদের প্রতি এত নিষ্ঠুর হচ্ছেন, তাদেরকে দণ্ড দিচ্ছেন কারণ এই দণ্ড তাদের প্রাপ্য। ওই লোকগুলো সত্য প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাড়িয়ে পড়েছে, তাদেরকে উপেক্ষা করে যদি সত্য প্রতিষ্ঠা করা যেত, শান্তি আনয়ন করা যেত তাহলে তাদের উপেক্ষাই করা হত, কিন্তু তেমন সুযোগ নেই বলেই এই দণ্ড তাদেরকে ভোগ করতে হবে কৃতকর্মের পরিণতিস্বরূপ। 

কখনও কখনও এমন সময় আসে যখন দুইটি খারাপের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত কম খারাপকে বেছে নিতে হয়। ডাক্তারের কাছে যখন গ্যাংরিনের রোগী আসে, ডাক্তার কোনোরূপ চিন্তা-ভাবনা না করে তার অঙ্গ কেটে ফেলেন, নিজের হাতে তাকে পঙ্গু করে ফেলেন তার জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে। সন্তান জন্মদানের সময় যখন এমন সময় আসে যে, বাচ্চার জীবন বাঁচাতে গেলে মা মারা যাবে আর মায়ের জীবন বাঁচালে বাচ্চা মারা যাবে, তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মায়ের জীবন বাঁচানোর। বাচ্চার প্রাণহানিকে মেনে নিতে হয় শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও। কারণ, এটা কেবল মৃত্যু নয়, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের সূচনা ঘটানো। যুদ্ধ মানেই রক্ত, যুদ্ধ মানেই ক্রন্দন। কিন্তু প্রেক্ষাপট কখনও কখনও যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। তখন নৈতিকতার সংজ্ঞাটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়। উপরোক্ত আয়াতগুলো নাযেলের প্রেক্ষাপট জানতে হবে। জানতে হবে এই নির্দেশ আল্লাহ কাদেরকে দিচ্ছেন? বস্তুত এই নির্দেশ আল্লাহ দিচ্ছেন মদীনায় নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম সেনাদেরকে, যাতে করে তারা অমিততেজে যুদ্ধ করে মক্কার ফেতনা সৃষ্টিকারী কাফের-মুশরিক যোদ্ধাদেরকে পরাজিত করতে পারে এবং তার মাধ্যমে সত্য বিজয়ী হয়। যাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তাদের অপরাধের ফিরিস্তিটা বিবেচনা করুন এবং মানবতার দোহাই দিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দিলে 'ডু অর ডাই' অবস্থায় থাকা মদীনায় নবগঠিত রাষ্ট্রটি কতখানি হুমকির মুখে পড়তে পারত তাও ভেবে দেখুন। - See more at: http://www.istishon.com/?q=node/20632#sthash.PUUsHzi7.dpuf

No comments:

Post a Comment