
এবারের ইসলামী বইমেলায় ক্রেতা নাই। কেন নাই? নয়া দিগন্তের রিপোর্টার অনেক খোঁজাখুজি করে দুইটি কারণ বের করেছেন।
১। বিভিন্ন কারণে মানুষের পকেটে টাকা নাই। এ কারণে মানুষ বই কিনতে আসছে না।
২। ইসলামী বই কেনেন ধার্মিক মানুষেরা। কিন্তু তারা এখন দৌড়ের উপর আছেন। বই কিনবে কখন? সে জন্য মেলায় ক্রেতার ভিড় নেই।
২। ইসলামী বই কেনেন ধার্মিক মানুষেরা। কিন্তু তারা এখন দৌড়ের উপর আছেন। বই কিনবে কখন? সে জন্য মেলায় ক্রেতার ভিড় নেই।
ফেব্রুয়ারির বইমেলায় লাখো মানুষের ভিড়ে তিল ঠাঁই ছিল না। যানজট, ভিড়, হয়রানির ভয় সব উপেক্ষা করে মানুষ মেলায় গেছে। একবার নয়, বারবার গেছে। বই কিনেছে। বিজ্ঞানের বই, গল্পের বই, ইতিহাসের বই, দর্শনের বই, উপন্যাস। বই বিক্রেতারাও বাম্পার ব্যবসা করেছেন। তখন পাবলিকের পকেটে টাকা ছিল, অথচ চার মাস পরে রমজান মাসে পাবলিক এতই গরীব, এতই গরীব হয়ে গেল যে, ইফতারের মার্কেটে তিল ধারণের ঠাঁই নাই, শুধু বই মেলা গড়ের মাঠ।
ধার্মিক মানুষরা দৌড়ের উপর আছেন- এ কথা বলে রিপোর্টার কী বোঝালেন? ঢাকা শহরে গিজগিজ করছে মানুষ। হাঁটার সময় মানুষের জ্যাম। এই লাখ লাখ মানুষ কেউ ধার্মিক নয়? তাহলে তওহীদী জনতার মিছিলে লক্ষ লক্ষ লোক কোত্থেকে আসে? কোটি কোটি মুসলমান রোজা রাখছেন, তারাবি পড়ছেন তারা সব অধার্মিক?
আসলে এগুলো হচ্ছে আবোল তাবোল অজুহাত। আসল কারণ হচ্ছে- ধর্ম থেকে অধিকাংশ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাই ধর্মীয় বইয়ে তাদের আগ্রহ নিঃশেষ হয়ে গেছে। কেন আগ্রহ থাকবে? আগ্রহ থাকার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি আছে কি? এই একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের যুগে, যুক্তিবাদিতার যুগে, মুক্তচিন্তার যুগে আপনি একগাদা অপ্রয়োজনীয় মাসলা-মাসায়েল নিয়ে হাজির হবেন আর লক্ষ মানুষ সেগুলো কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে, গলায় তাবিজ বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখবে- এটা আশা করেন কীভাবে?
ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, হুজুগ সৃষ্টি করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উসকানি চলছে, একের পর এক দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইসলামের অপব্যবহারের মাধ্যমে। মানুষ দিন দিন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছে, শিক্ষিত লোকেরা অনেকে ইসলামবিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছে। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তানরা পর্যন্ত নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, অল মুসলিমস আর টেররিস্ট।
এভাবে ধর্মীয় ইস্যুতে যখন রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে তখন আপনি দোকান সাজিয়ে বসেছেন- দোয়ার ভাণ্ডার, রূহের রহস্য, জ্বিন-পরীদের ইতিহাস, আমলে নাজাত, সেকেন্ডে-মিনিটে লক্ষ কোটি নেকির উপায়, লজ্জাতুন্নেছা, বেহেশতের কুঞ্জি, মরণের আগে ও পরে, বারো চান্দের ফজিলত, সোলেমানি খাবনামা ও ফালনামা, কবরের আযাব, বেহেশতের হুর ইত্যাদি নিয়ে। কমনসেন্সের কী ঘনঘটা!
প্রকৃত ধর্ম হবে বাস্তব সমস্যার বাস্তব সমাধান, কাল্পনিক সমাধান নয়। ধর্মের সেই রূপটি আমরা হারিয়ে ফেলেছি এটা স্বীকার করতে হবে। চলমান অস্থির দুনিয়াকে শান্তিময় করার জন্য আমাদের এই মাসলার বইগুলো কী দিক নির্দেশনা দিয়েছে? কিছুই না। অথচ নবী-রসুলগণ ও সাহাবীরা মানুষের বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান করে শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠার উদাহরণ রেখে গেছেন।
আজকে লাখ লাখ মুসুল্লি একত্র হয়, হুজুরের সাথে সাথে সোবাহানাল্লাহ আলহামুলিল্লাহ জিকির করে কোটি কোটি সওয়াব আর জান্নাতের গাছ নিয়ে বাড়ি চলে যায়। পড়ার, জানার, শোনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও তারা মনে করেন না। দুনিয়ার জন্য ধর্ম নয়, ধর্ম কেবল পরকালের বিষয়। আর সেখানে সুখী হতে সওয়াব লাগবে। তাদের কুয়োর গণ্ডি এটুকুই।
এখনও যদি ইসলামের চিন্তাবিদদের বোধোদয় না হয় তবে অপেক্ষা করুন- নিজেরা বই লিখবেন, নিজেরা ছাপাবেন, নিজেরাই বসে বসে পড়বেন। দুঃখ-কষ্ট-সমস্যায় জর্জরিত মানুষ আত্মিক শূন্যতা পূরণের জন্য প্রেমের কবিতা পড়বে, ভূতের বই পড়বে তবু কথিত ধর্মীয় বইয়ের ধারেকাছে ভিড়বে না।
বিভাগ:
No comments:
Post a Comment