একটি পরিবারের ভরণ-পোষণ, সন্তান লালন-পালনসহ যাবতীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ঐ পরিবারের সদস্যদেরকে প্রধানত দুই ধরনের কাজ করতে হয়।
১। ঘরের বাইরের কঠোর পরিশ্রমের কাজ অর্থাৎ অর্থোপার্জনের কাজ। এবং
২। ঘরের ভেতরে গৃহস্থলির কাজ।
এর মধ্যে কোনো একটি ধারার কাজ বাদ দেওয়ার অবকাশ নেই। ভারসাম্য বজায় রেখে দু’টোই করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে কোনটা করবে?
পুরুষের শারীরিক গঠন এমন যে, সে শক্ত-সমর্থ কাজের জন্য উপযোগী। অন্যদিকে নারী শারীরিকভাবে যেমন কোমল, মানসিকভাবেও কোমল ও সংবেদনশীল। স্নেহ-মমতায় ভরা তার মন। সুতরাং প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষের জন্য উপযোগী কাজ হবে ঘরের বাইরের কাজ, অন্যদিকে নারীর জন্য উপযোগী ঘরের ভেতরের কাজ। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রম হতেই পারে।
এখানে নারী ও পুরুষের এই দুই ধারার কাজের মধ্যে কোনোটাকে ছোট করে দেখার কিন্তু অবকাশ নেই। পুরুষ শক্ত পরিশ্রম করে উপার্জন করে পরিবারের ভরণ-পোষণ নির্বাহ করবে, এটা একটি পরিবারের টিকে থাকার ভিত্তি। অন্যদিকে নারী তার সবটুকু স্নেহ-মমতা ঢেলে দিয়ে পরিবারটিকে অলঙ্কৃত করে রাখবে। অন্যান্য দায়িত্বের কথা বাদ রাখলেও শুধু একটি সন্তানকে গর্ভধারণ থেকে শুরু করে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মায়ের যে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনীয়, তার চাহিদা কখনও অন্য কেউ মেটাতে পারে না। সুতরাং পরিবারে নারীর মাহাত্ম্যকে যারা ছোট করে দেখেন তারা স্পষ্টত নারীর প্রতি অবিচার করেন।
ইসলাম মানবজাতির জাতীয়, সামাজিক নীতিমালার পাশাপাশি পারিবারিক শৃঙ্খলাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। পুরুষকে প্রধানত বাইরের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর নারীকে প্রধানত ঘরের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মানে কি এই যে, নারীর প্রতি অবিচার করা হয়েছে? কখনই নয়।
গুরুত্বের বিচারে, মাহাত্ম্যের দিক দিয়ে নারী ও পুরুষ- উভয়ের দায়িত্বই এখানে সমান গুরুত্বপূর্ণ। যারা মনে করেন ঘরের কাজের দায়িত্ব দিয়ে নারীকে অপমান করা হয়েছে, নারীর প্রতি অবিচার করা হয়েছে, আসলে তারা নারীত্বকে খাটো করে দেখেন। তারা মনে করেন- পুরুষরাই সেরা। তাই নারীকেও অবশ্যই পুরুষের মত হতে হবে। পুরুষরা যেহেতু মাঠে-ঘাটে, কলে-কারখানায়, অফিস-আদালতে, ক্ষেতে-খামারে কাজ করে, তাই নারীকেও তেমন করতে হবে।
অর্থাৎ এরা আপাদমস্তক পুরুষবাদী। পুরুষরা যা করে নারীকেও তা করতে হবে- এই মানসিক প্রবণতা যদি পুরুষতান্ত্রিকতা না হয় তবে পুরুষতান্ত্রিকতা বলে কিছু নেই। নারীর সকল স্বতন্ত্রতা, স্বকীয়তা ও মৌলিকতাকে অস্বীকার করে তারা যে ‘নারীমুক্তি’র ধুয়া তোলেন সেটা কার্যত নারীমুক্তি নয়, নারীমুক্তির আড়ালে মূলত সেটা নারীত্বের প্রতি চরম অপমান। নারীমুক্তি আর নারীর পুরুষায়ণ এক কথা নয়।
No comments:
Post a Comment