Friday, April 7, 2017

.............প্রসঙ্গ: মাতৃভাষায় ধর্মশিক্ষা..........


বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মগ্রন্থভিত্তিক অধিকাংশ বই-পুস্তকই ইতোমধ্যেই আমাদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করা হয়ে গেছে। এখন আর কোর’আন বুঝতে, হাদীস বুঝতে আরবি ভাষায় পণ্ডিত হবার দরকার পড়ে না, কিংবা গীতা-মহাভারত পড়তে সংস্কৃত জানা লাগে না। কিন্তু এই অনুবাদ পড়ার আগ্রহ কি আমাদের আছে?
মানুষ ধর্ম ‘পালন’ করতে অভ্যস্ত, ধর্ম নিয়ে ভাবতে অভ্যস্ত নয়। ভাবার দায়িত্বটি তারা একটি বিশেষ শ্রেণিকে দিয়ে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। ধর্ম নিয়ে কথা বলার, চিন্তা করার ও মত প্রকাশের কপি রাইট ঐ বিশেষ শ্রেণির দখলে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষেরও যে ভাবতে হতে পারে, সাধারণ মানুষেরও যে বলার কিছু থাকতে পারে, সাধারণ মানুষেরও সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ থাকতে পারে- এমনটা সাধারণ মানুষই বিশ্বাস করে না, আর ধর্মের কপিরাইটপ্রাপ্ত ঐ বিশেষ শ্রেণিটি তো নিজেদের স্বার্থেই তা হতে দিবে না।
কাজেই যারা ধর্মগ্রন্থগুলোকে সাধারণ মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আগ্রহী, কেবল অনুবাদ করেই তাদের বসে থাকা চলবে না। তাদেরকে হাজার বছরের লেগে থাকা জটটিও খুলতে হবে। এই জট মগজের, চিন্তা-চেতনার স্থবিরতার জট। মানুষগুলো চিন্তার জগতে পরাধীন হয়ে আছে।
তাদেরকে বোঝাতে হবে- একটি বিশেষ শ্রেণি যেটা বলবে সেটাই ধর্ম নয়, ধর্ম সেটাই যেটা ঈশ্বর, আল্লাহ, গড বা ভগবান বলেছেন। আল্লাহ কী বলেছেন তা জানতে অন্যের দ্বারস্থ হইও না। তারা তোমাদের সাথে প্রতারণা করে। তোমাদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে বৈষয়িক স্বার্থ হাসিল করে।
তারা তোমাদেরকে ভুলভাল বুঝিয়ে কখনও ভোটের রাজনীতিতে ভোটব্যাংক হিসেবে কাজে লাগায়, কখনও তোমাদের দিয়ে তোমাদের বিধর্মী প্রতিবেশীকে হত্যা করায়, কখনও তোমাদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায়। এতে তোমাদেরই দুনিয়া ও আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুতরাং এদের অন্ধ অনুকরণ না করে নিজেরাই পড়ে নাও আল্লাহ কী বলেছেন, জেনে নাও রসুল কী করেছেন। তারপর নিজেদের যুক্তি-বুদ্ধি-জ্ঞান দিয়ে চিন্তা করে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নাও- কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যয়, কোনটা বৈধ কোনটা অবৈধ, কোনটা ধর্ম আর কোনটা ধর্মের নামে অধর্ম।

No comments:

Post a Comment