Friday, April 7, 2017

আমেরিকার আইএস ভাবনা ও আমাদের করণীয়

Image may contain: text
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসবিষয়ক এক বার্ষিক সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে করণীয় কী হবে তা নিয়ে গবেষণাধর্মী মতামত পেশ করেন মার্কিন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন- ‘কেবল অস্ত্র দিয়ে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) নির্মূল করা সম্ভব নয়। জঙ্গিদেরকে নির্মূল করতে কিংবা নতুন রূপে তাদের আবির্ভাব ঠেকাতে সবার আগে জঙ্গিদের ‘জন্মসূত্র’ খুঁজে বের করতে হবে। তারপর সেই সূত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে মতাদর্শিক জায়গা থেকেও। যুদ্ধের ময়দানে হয়তো সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া গেছে। কিন্তু আইএস নির্মূলে তা যথেষ্ট নয়।’
.
আইএস নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যে নীতি কিংবা কৌশল অবলম্বন করছে, তার সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান মাইকেল হেইডেন বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। আমরা যদি কেবল মানুষ হত্যা করেই সব কিছুর সমাধান করতে পারতাম, তাহলে ১৪ বছর আগেই আমরা সফল হতাম। কোন কোন বিষয়ে প্রভাবিত হয়ে তরুণ সুন্নিরা জিহাদের দিকে ঝুঁকছে, সেগুলো সবার আগে চিহ্নিত করতে হবে। নতুবা তাদের নির্মূল করা সম্ভব হবে না।’
.
সিআইএর সাবেক আরেক কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল মনে করেন, ‘আইএস কিংবা আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার যে কৌশল বর্তমানে রয়েছে, তা যথার্থ নয়। কী কী কারণে আইএস সৃষ্টি হচ্ছে, তা এই কৌশল মোকাবিলা করতে পারে না। তাই কৌশল বদলাতে হবে।’ তিনি বলেন- ‘যুদ্ধটা করতে হবে আরো গভীর থেকে। যেটা হবে অবশ্যই মতাদর্শিক লড়াই। আমরা স্নায়ুযুদ্ধের সময় যেটা করেছি। আমরা কমিউনিস্ট মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়েছি এবং সফল হয়েছি।
.
বলা বাহুল্য, এতদিন হেযবুত তওহীদ কিন্তু এই কথাগুলোই আমাদের সরকার, প্রশাসন, মিডিয়া ও সাধারণ জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করে এসেছে। অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বক্তব্য-বিবৃতিতে আমরা এ কথাটি জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি যে, জঙ্গিবাদ একটি মতাদর্শপ্রসূত সন্ত্রাস, সুতরাং একে নির্মূল করতে পাল্টা আরেকটি নির্ভুল মতাদর্শ লাগবে। কেবল শক্তি প্রয়োগ করে পৃথিবীর কোথাও এই সন্ত্রাস বন্ধ করা যায় নি, যাবেও না।
.
পশ্চিমাদের কী নেই? সামরিক শক্তিতে তারা অপ্রতিরোধ্য, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ। আধুনিক প্রযুক্তি তাদের হাতের মুঠোয়। অন্যদিকে জঙ্গিদের কাছে কী আছে? প্রাণটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। অথচ শুধু এই প্রাণ হাতে করে জঙ্গিরা দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে ইরাক-সিরিয়া-আফগান-পাকিস্তানে পশ্চিমাদের সাথে লড়াই চালিয়ে আসছে। এতে করে লাখ লাখ বেসামরিক মানুষের প্রাণ গেছে, লাখ লাখ নারীর ইজ্জত গেছে, ছোট ছোট শিশুর রক্তে ভিজেছে মরুর বালি, জঙ্গিরাও মরেছে লাখে লাখে, কিন্তু না, জঙ্গিবাদ বন্ধ হয় নি। যুদ্ধের আগুন আরও উসকে দিয়েছে জঙ্গিদেরকে, আরও বেপরোয়া করে তুলেছে তাদের আচরণ। যে যুদ্ধ সীমাবদ্ধ ছিল ছোট্ট একটি ভূ-খণ্ডে, কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের হাত ধরে তা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীময়।
.
কাজেই এ কথা মেনে নেবার সময় এসেছে যে, সামরিক শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য হলেও পশ্চিমারা জঙ্গিবাদ নির্মূল তো দূরের কথা, নিয়ন্ত্রণ করতেও কার্যত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আর ঐ সামরিক শক্তি ব্যর্থ হয়েছে বলেই এখন মতাদর্শিক লড়াইয়ের ব্যাপারটিকে সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- সেই মতাদর্শ কোনটা, যাকে পুঁজি করে জঙ্গিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির গোড়ায় আঘাত হানা যায়? সেটা কি বর্তমানের পুঁজিবাদী গণতন্ত্র? সেটা কি সেক্যুলারিজম? যদি তা-ই ভাবা হয় তবে এটা নিশ্চিত যে, আজ থেকে এক যুগ পরে আবারও তালাশ করতে হবে অন্য কোনো উপায়।
.
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মতাদর্শিক লড়াইকে বোঝাতে গিয়ে ব্রুস রিডেল কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে মতাদর্শিক লড়াইয়ের কথা বলেছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে- কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো মতাদর্শিক লড়াই-ই হয় নি। যেটা হয়েছে তাকে সোজা ভাষায় বলা যায়- ‘একচেটিয়া অপপ্রচার।’ কমিউনিজমের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদীরা বিজয়ী হয়েছে তাও আদর্শিক লড়াইতে নয়, মোটামুটি সামরিক পন্থাতেই। যে কারণে আজও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আছে। আর যে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও লিবারেল ডেমোক্রেসি’র ধুয়া তুলেছিল পুঁজিবাদীরা, তার বাস্তব চিত্রও আমরা দেখছি। আজ মাত্র ৬২ জন মানুষের হাতে জমা হয়েছে বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সম্পদ। আর গণতন্ত্র ক্রমশই পর্যবসিত হচ্ছে কেতাবী বস্তুতে, মাঠ দখল করে নিচ্ছে সেই স্বৈরতন্ত্রই। এভাবে আদর্শিক লড়াই হয়?
.
হেযবুত তওহীদের বক্তব্য এখানেই। জঙ্গিবাদকে যে শুধু অস্ত্রের বলে নির্মূল করা সম্ভব হবে না সে কথা আমরা বহু বছর আগে থেকে বলে আসছি এবং আজকের বৈশ্বিক ও আমাদের জাতীয় প্রেক্ষাপটে এ কথা দিনের আলোর মত সত্য প্রমাণিত হয়েছে। একই সাথে আমরা কিন্তু সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার রাস্তাও বলে আসছি বছরের পর বছর ধরে এবং এই মুহূর্তে জঙ্গিবাদ নামক সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের উপায় ঐ একটিই। সেটা হচ্ছে একটি নির্ভুল আদর্শ, যা একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে। সে আদর্শ আমরা যথাসম্ভব গণমানুষের সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং আশার কথা হচ্ছে- সাধারণ মানুষ সে আদর্শকে আলিঙ্গন করে নিয়ে যাবতীয় ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ঐক্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

No comments:

Post a Comment