
পৃথিবী আজ অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, খুন, ধর্ষণ, হানাহানি এক কথায় চরম অশান্তিতে নিমজ্জিত। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, শাসিতের উপর শাসকের যুলুম, সরলের উপর ধূর্তের প্রতারণা, আর দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনায় পৃথিবী আজ ভরপুর। দেশে দেশে চলছে সংঘাত, অস্থিরতা। অপরাধ বাড়ছে ধাঁই ধাঁই করে। অধিকার-বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের আর্ত চিৎকারে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কোটি কোটি মানুষ আজ উদ্বাস্তু। কোটি কোটি মানুষ মারা যায় কেবল খাদ্যের অভাবে। মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে ১৩ কোটি বনি-আদমের প্রাণ। তারপর থেকে গত ৬০ বছরে আরও বহু রক্তপাত, যুদ্ধ, সংঘাত হয়েছে, কত কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কত কোটি মানুষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে ধুকে ধুকে মরেছে, কত মানুষ নিঃস্ব হয়েছে তার হিসাব নেই। মানবজাতির তো এই হাল হবার কথা নয়। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে (বাকারা ৩০)। পৃথিবীর সমস্তকিছু তিনি তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের জন্য করেছেন। দেহ-আত্মার সমন্বয়ে মানুষ এমন এক অসাধারণ সৃষ্টি, যার মধ্যে স্বয়ং আল্লাহর রূহ আছে (হিজর ২৯)। অন্য সমস্ত কিছু আল্লাহ ‘কুন’ আদেশ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, অন্যদিকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজ হাতে। সেই মানুষের আজ এই করুণ পরিণতি কেন?
.
আরেকদিকে মুসলমান নামক জাতি আজকে ১৬০ কোটি। তাদের বিরাট ভূখণ্ড। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের সিংহভাগের মালিকানা তাদের হাতে। তাদের আছে বিরাট বিরাট কারুকার্যখচিত মসজিদ, অসংখ্য মাদ্রাসা। লক্ষ লক্ষ তাদের আলেম, মুফতি, মোহাদ্দেস, মুফাসসির। কিন্তু তা সত্ত্বেও পৃথিবীব্যাপী মুসলিম জাতি আজ সবচাইতে বেশি অত্যাচারিত, অবহেলিত, অপমানিত ও বঞ্চিত জনসংখ্যা। তাদের এই দুর্গতিই বা কেন?
.
এই সব ‘কেন’র জবাব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দান করেছেন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে। আল্লাহর অনুগ্রহে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন কেন আজ মানবজাতির এই করুণ হাল, কেন আজ মুসলিম নামক জাতিটি ধুকে ধুকে মরছে। মূল সমস্যা হচ্ছে- মুসলিম নামক জনসংখ্যাসহ সমগ্র মানবজাতি আজকে আল্লাহর দেয়া সঠিক পথ, হেদায়াহ থেকে সরে গেছে। ফলে ন্যায়-অন্যায়ের বাছবিচার নেই। মানুষ জেনে হোক না জেনে হোক অন্যায়কে-অসত্যকে আলিঙ্গন করে নিয়েছে, অন্যায়ের সামনে মাথা নত করে ফেলেছে। আর এটা জানা কথা যে, অন্যায় ও অসত্য থেকেই অশান্তির জন্ম হয়। অন্যায় হলে অশান্তি হবে- এটা প্রাকৃতিক নিয়ম।
.
বিশ্বনবী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন দাজ্জাল আসবে। যারা তাকে রব বলে মেনে নিবে তাদেরকে দাজ্জাল তার তৈরি জান্নাতে রাখবে যা হবে প্রকৃতপক্ষে জাহান্নাম। আজ সমগ্র বিশ্বের মানুষ দাজ্জাল তথা পাশ্চাত্যের আত্মাহীন বস্তুবাদী সভ্যতার বশ্যতা মেনে নিয়েছে, তাকে জাতীয় জীবনের প্রভু বলে স্বীকার করে নিয়েছে, ফলে দাজ্জালের জান্নাত নামক জাহান্নামের আগুন আজ তাদেরকে ঘিরে ধরেছে। এখন পুনরায় মানুষ যদি সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ছাড়া আর কারও সার্বভৌমত্ব মানবে না অর্থাৎ যাবতীয় ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে, তবেই মানুষের মুক্তি মিলবে, অন্যথা এইভাবেই তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে মানুষ কেবল দেহ নয়, তার একটি আত্মাও আছে। তেমনি ইহকালই সবকিছু নয়, পরকালও আছে। যারা তাদের ইহজীবনকে সত্য ও সুন্দরে সুশোভিত করে রাখবে, তাদের পরকালও হবে শান্তিময়। আর ইহকাল অন্যায়-অশান্তিপূর্ণ হলে পরকালও হবে অশান্তিপূর্ণ। কোন প্রক্রিয়ায় মানুষ তার ইহকাল ও পরকালকে সুন্দর করতে পারে, শান্তিপূর্ণ রাখতে পারে সে উপায়টিই তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ।
.
মুসলিম নামক জাতিটিও বহু পূর্বেই কলেমা থেকে সরে গেছে। এক আল্লাহ, এক রসুল, এক কোর’আনের অনুসারী হয়েও তারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে শিয়া-সুন্নিসহ শত শত ফেরকা-মাহজাব, দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেরা নিজেরা হানাহানি-রক্তারক্তিতে লিপ্ত রয়েছে। এই জাতিবিনাশী ফেরকাবাজী পরিহার করা ও এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বে ঐক্যবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই দুর্দশা ঘুঁচবে না। এমতাবস্থায় হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য হচ্ছে এই জাতিটিকে যাবতীয় ফেরকা-মাজহাবের দলাদলির বাইরে এনে পুনরায় আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা। এ লক্ষ্যেই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।
.
দৈনিক বজ্রশক্তি, ৩০/১২/২০১৬
No comments:
Post a Comment