ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্বরোচিত ঘটনাটি নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। আমরা হেযবুত তওহীদ প্রথম থেকেই এ ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছি এবং থাকব। কেননা অন্যায় যার প্রতিই হোক, যে ধর্মের মানুষের প্রতিই হোক, আমরা তার প্রতিবাদ করতে কুণ্ঠিত হই না। কিন্তু এবারের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটিতে সরকার, প্রশাসন, মিডিয়াসহ সমাজের সর্বস্তরে যে সমালোচনা ও প্রতিবাদের জোয়ার উঠতে দেখলাম তা আমাদেরকে যতটা আশ্বস্ত করছে, ততটাই বিস্মিতও করেছে। বিস্মিত হবার সঙ্গত কারণটা বলি।

নাসিরনগরে হামলায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়।
হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম এর গ্রামের বাড়িতে এখনও রক্তের দাগ লেগে আছে। অনেকে হয়ত জানেই না চলতি বছরের ১৪ মার্চ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার পোরকরা গ্রামে ধর্মের নামে উন্মাদনার কী বিভৎস চিত্র অঙ্কিত হয়েছিল। ইসলাম এসেছে সমাজের কল্যাণের জন্য, মানবতার মুক্তির জন্য, তাই ইসলামের কাজ করতে হয় নিঃস্বার্থভাবে। ধান্দাবাজীর রাজনীতিতে যারা ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, ব্যবসার পণ্য হিসেবে যারা ধর্মকে ব্যবহার করে তারা আসলে ধার্মিক নয়, তারা ধর্মব্যবসায়ী। কোর’আন-হাদীস থেকে এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটির মুখোশ উন্মোচন করে দেওয়ায় প্রথম থেকেই আমরা অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ ধর্মব্যবসায়ীদের তোপের মুখে ছিলাম, এখনও আছি।

গত ২১ বছর যাবৎ ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে হেযবুত তওহীদ।

সম্প্রতি দেশে জঙ্গিবাদের প্রকোপ বেড়ে গেলে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সারা দেশব্যাপী ব্যাপক গণসংযোগ কর্মসূচি পরিচালনা করেন। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে সকল স্তরের মানুষকে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে বিশাল বিশাল জনসভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ছবিটি পান্থপথ জনসভার।

হেযবুত তওহীদ এভাবেই প্রতি বছর ঈদ উদযাপন করে।
ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর তোপের মুখেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের এমামের গ্রামের মাটিতে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয় হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণসচেতনতামূলক ঐ সমাবেশ শেষ হলে হেযবুত তওহীদের এমাম ঢাকায় চলে আসেন। এরই মধ্যে পরিবারের লোকদের সাথে আলোচনা করে বাড়ির সামনে একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হলে আশেপাশের জেলা থেকে হেযবুত তওহীদের কিছু ভাই-বোন সেখানে যান নির্মাণকাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে। কিন্তু ঐ মুহূর্তে পর্দার অন্তরালে স্থানীয় ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী যে ভয়াবহ অপতৎপরতা শুরু করবে তা কে জানত? তারা বেনামী হ্যান্ডবিল বিতরণ করে, জুমার খুৎবায় ও অনলাইনে ব্যাপক অপপ্রচার চালাতে থাকে যে, ‘‘হেযবুত তওহীদ খৃষ্টান, হেযবুত তওহীদ কুফরি সংগঠন, তারা গ্রামে গীর্জা নির্মাণ করছে। তাদেরকে কতল করতে হবে। তারা বেঁচে থাকলে কারও ঈমান থাকবে না ইত্যাদি।’’

হেযবুত তওহীদকে কুফরী সংগঠন বলার পেছনে অপপ্রচারকারীদের যুক্তিটি খেয়াল করুন। আমরা আন্তধর্মীয় ঐক্য চাই- এ কারণে নাকি আমরা কুফরী সংগঠন।
অথচ যখন এসব অপপ্রচার চলছে যে, আমরা খৃষ্টান হয়ে গেছি, তখন আমাদের মসজিদে নিয়মিত আজান দেওয়া হচ্ছিল, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হচ্ছিল। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি তাদের অপপ্রচারের জবাব দিতে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার চালায় সেগুলো যে মিথ্যা, তার উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে এলাকায় পোস্টারিং করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। এছাড়া প্রশাসনের কাছেও দফায় দফায় অনুরোধ করেছি যেন এই দাঙ্গাবাজ প্ররোচনাদাতাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।

আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারকৃত ষড়যন্ত্রমূলক লিফলেটের জবাব দিয়েছিলাম আমরা।

২০০৯ সালে পোরকরা গ্রামে এভাবেই আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুপপাট চালানো হয়েছিল। আবারও একই ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পেয়ে আমরা এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিলাম যাতে গ্রামবাসী এই ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- এ পোস্টার যখন প্রস্তুত করা হচ্ছিল, তখনই খবর পাওয়া যায় যে, ইতোমধ্যেই ষড়যন্ত্রকারী ধর্মব্যবসায়ীরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা শুরু করেছে।
১৪ মার্চ রৌদ্রজ্জ্বল সকালে হাজার হাজার মানুষে গ্রাম ভরে গেল। দূর দূরান্ত থেকে বাস ভর্তি করে মানুষ এসে হাজির হলো পোরকরায়। সবার মুখেই এক স্লোগান- ‘গীর্জা ভাঙ্গো, খৃষ্টান মার।’ তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। মসজিদের মাইকেও একই ঘোষণা ভেসে এল- ‘গীর্জা ভাঙ্গো, খৃষ্টান মার।’ চারদিক থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘিরে ধরল হেযবুত তওহীদের মুষ্ঠিমেয় কিছু সদস্যকে।

হামলার পূর্বপ্রস্তুতি চলছে। উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে হত্যা করার জন্য লোকজনকে সংগঠিত করছে এই ধর্মব্যবসায়ীরা।

হামলাকালীন সময়ে ফেসবুক প্রচারণা।

একদিকে চলছে পৈশাচিক বর্বরতা, অন্যদিকে মিথ্যা প্রচারণা।
হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী হেযবুত তওহীদের সদস্যদের কয়েকটি বাড়িকে অবরোধ করে রেখে অন্তত ৬ ঘণ্টা ধরে চলল তাদের উন্মত্ত তাণ্ডব। আমাদের দুইজন সদস্যকে এমামেরই বাড়ির সামনে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপাতে লাগল সন্ত্রাসীরা। তাদের হাত পায়ের রগ কেটে, চোখ উপড়ে ও জবাই করে হত্যা করে ফেলল। তাদের লাশটাও যাতে সৎকার করা না যায় সেজন্য লাশের উপর পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিল। দুইটি বাড়ি লুট করে আগুনে ভস্মিভূত করে দিল।

নির্মিতব্য মসজিদটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যেই।

ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা হন্যে হয়ে খুঁজছে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে।

দুইটি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

পৈশাচিকভাবে জবাই করে, চোখ উপড়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয় হেযবুত তওহীদের দুইজন সদস্যকে।

লাশের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
আশেপাশের কয়েকটি বাড়ি মিলে আমাদের ১১৪ জন সদস্য ছিল সেখানে। তাদের কাউকেই অক্ষত থাকতে দেয়া হয় নি। সন্ত্রাসী ধর্মোন্মাদদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাদের কারও হাতের আঙ্গুল কেটে পড়ে গেছে, কারও চোখ নষ্ট হয়েছে, কারও কবজি কেটে গেছে, কারও পা কেটে গেছে। ছয় ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডব চলছে কিন্তু পুলিশ নেই। পুলিশ নেই কারণ রাস্তায় গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছিল হামলার আগে থেকে। তাদের পরিকল্পনা ছিল পুলিশ-প্রশাসন আসতে না দিয়ে, চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখে অতি ঠান্ডা মাথায় যথেষ্ট সময় নিয়ে হেযবুত তওহীদের ১১৪ জন সদস্যকে বাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করে ফেলা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ-বিজিবি এসে পড়ায় তাদের চূড়ান্ত পরিকল্পনাটি ভেস্তে গেলে তারা এতই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, পুলিশের উপর আক্রমণ করে বসে। একজন পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়, কয়েকজন আহত হয়। হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে যেন থানায় নিতে না পারে সেজন্য রাতের অন্ধকারে পুলিশের ভ্যানে হামলা করা হয়। ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করা হয়। সবশেষে আক্রমণ করা হয় থানায়। উদ্দেশ্য আর কিছু নয়, থানা থেকে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করা।

হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে হত্যায় বাধা দিলে পুলিশ সদস্যদেরকে হত্যা করতে উদ্যত হয় ধর্মোন্মাদরা।

মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয় হেযবুত তওহীদের সদস্যদের।

রাস্তা অবরোধ।

থানায় হামলা।
সোনাইমুড়ির ঐ হত্যাযজ্ঞের দগদগে স্মৃতি নিয়েই আমরা সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্বরোচিত ও পৈশাচিক ঘটনাটি দেখলাম। হামলার ধরণ ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। সুতরাং ধর্মোন্মাদ সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে নিজেদের সর্বস্ব ধ্বংস হতে দেখার যে অন্তপীড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রতি মুহূর্তে অনুভব করছে, তা আর কেউ না বুঝলেও আমরা হেযবুত তওহীদ বুঝি। কিন্তু যে বিষয়টি বারবার আমাদেরকে বিস্মিত করেছে তা হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটিকে সবাই যতটা সিরিয়াসলি গ্রহণ করল, মিডিয়ায় যেভাবে প্রতিবাদের ঝড় উঠল, সোনাইমুড়ির ঘটনার বেলায় তেমনটা ঘটে নি; অথচ সোনাইমুড়ির ঘটনা ক্ষয়ক্ষতি ও পৈশাচিকতার মাত্রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চেয়ে বহুগুণ বেশি ভয়াবহ ছিল।

ধর্মের নামে ইতিহাসের বর্বরতম ঘটনা ঘটিয়ে সেটাকে আবার বীরত্বের সাথে প্রচারও করা হয়।
নাসিরনগরে হামলার দিন থেকেই দেশজুড়ে তোলপার শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা, রাজনৈতিক দল, মন্ত্রী-এমপি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ছুটে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। টিভিতে প্রতি ঘণ্টায় আপডেট পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে রীতিমত ঝড় উঠে গেছে। অন্যদিকে সোনাইমুড়িতে একইভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে এর চেয়েও বর্বরোচিত একটি ঘটনার পরও সেখানে না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেলেন, না কোনো মানবাধিকার সংগঠনের কেউ গেলেন, না কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল গেল। যে ঘটনাটিতে মিডিয়ায় ঝড় উঠে যেতে পারত, সারাদেশে আলোড়ন তুলতে পারত, ধর্মব্যবসায়ী প্ররোচনাদাতা গোষ্ঠীর প্রতি সর্বমহলে ধিক্কার উঠতে পারত, সেখানে বাস্তবতা হচ্ছে- নোয়াখালীর ঘটনাটি আজও দেশের অধিকাংশ মানুষ জানেই না! কেন এমন হলো? কারণ কি তবে এই যে, ভিক্টিমরা হেযবুত তওহীদের সদস্য?

এদেরকে ধরে আইনের আওতায় আনা কি খুব কঠিন কাজ ছিল?
আমাদের মিডিয়াগুলো এলাকাবাসীর সাক্ষাৎকার নেবার সময় ‘কারা হামলা করেছিল’ এই প্রশ্ন একবার করতে দশবার যে প্রশ্নটি করেছেন তা হচ্ছে- এরা (হেযবুত তওহীদ) সত্যিই খৃষ্টান কিনা? সাংবাদিকতার নীতিমালার সাথে এই প্রশ্নটি কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ তা পাঠকরাই বিবেচনা করবেন। হেযবুত তওহীদ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রচার করার মাধ্যমে ধর্মব্যবসা, ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই করে যাচ্ছে। আল্লাহর দেওয়া মো’মেনের সংজ্ঞা মোতাবেক আমরা আমাদের জীবন ও সম্পদ মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করে মানবসমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছি। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ আর যাই হোক হেযবুত তওহীদকে খৃষ্টান বলতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন সেখানে নয়। প্রশ্ন হচ্ছে - যদি ধরাও হয় যে, হেযবুত তওহীদ খৃষ্টান, তবু কি হামলা জায়েজ হয়ে যায়? খৃষ্টানদেরকে হামলা করে হত্যা করা ও বাড়িঘর লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করার বৈধতা কোথায় আছে?
হেযবুত তওহীদ খৃষ্টান নয় মানেই তো এই নয় যে, দেশে কোনো খৃষ্টান নেই। খৃষ্টান হুজুগ তুলে হেযবুত তওহীদের নিরাপরাধ সদস্যদেরকে জবাই করে হত্যা করার ঘটনায় যারা নিশ্চুপ ছিলেন তাদের কি এটা বোঝা উচিত ছিল না যে, যারা ‘‘খৃষ্টান মার গীর্জা ভাঙ্গো’’ স্লোগান দিয়ে দিনে দুপুরে ১১৪ জন মানুষকে আগুনে পোড়ানোর জিহাদে (?) নামতে পারে তারা যে কোনো দিন যে কোনো অজুহাতে কথিত ঈমানী দায়িত্ব পালনের জন্য দেশের যে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করবে না? আমাদের মিডিয়া, জনপ্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের প্রধান ব্যর্থতা হচ্ছে- তারা নোয়াখালীর ঘটনাটিকে ‘মতবাদগত সংঘাত’ বলে চালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ওটা তা ছিল না। যদিও হামলা হয়েছিল হেযবুত তওহীদের উপর, কিন্তু ভুললে চলবে না হামলাকারীদের দৃষ্টিতে হেযবুত তওহীদ ছিল ‘খৃষ্টান’। তারা সেদিন কার্যত হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে হত্যা করলেও, হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলেও, মসজিদ ভাঙচুর করলেও, তাদের বিশ্বাস ছিল যে, তারা খৃষ্টানদেরকে হত্যা করছে, গীর্জা ভাঙচুর করছে, এলাকা থেকে খৃষ্টান সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করছে, এবং এসব করে তাদের খুব নেকি হচ্ছে!

অনলাইনে উস্কানিমূলক প্রচারণা।
‘‘হেযবুত তওহীদকে মেরেছে’’ এই চিন্তা থেকে যারা সেদিন হামলকারীদেরকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন, আমরা বলব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় ‘হা হুতোশ’ করা তাদের সাজে না। আজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় সারাদেশে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, তা যদি নোয়াখালীর ঘটনায় হত, তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ভিটেয় হামলা চালানোর আগে ধর্মোন্মাদরা দশবার ভেবে দেখত! তা যেহেতু হয় নি, সত্যকে সত্য, আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার স্পর্ধা যেহেতু আমাদের নেই, যেহেতু আমাদের বিবেক কেবল নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে জাগ্রত হয় আর অন্যক্ষেত্রে ঘুমিয়ে থাকে, যেহেতু আমাদের রাজনীতিবিদরা পাবলিক সেন্টিমেন্ট ম্যানেজ করে চলতেই পছন্দ করেন, যেহেতু আমাদের মিডিয়া নিজেরাই বসে সিদ্ধান্ত নেয় কোন ঘটনাকে জাতীয় ইস্যু বানানো হবে আর কোনটা সমগুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও চেপে যাওয়া হবে- সেহেতু হাজারো কান্নাকাটি করেও সংখ্যালঘু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি নির্মূল করা সম্ভব হবে না। এ ধরনের ঘটনা ঘটবেই। সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালগুদের বাড়িঘর লুটপাট করবেই, প্রশাসনের গাফেলতি থাকবেই, আর সরকারের তোসামোদীও চলবেই। আপনার-আমার ক্ষণিকের কান্নাকাটি সংখ্যালঘুদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে না- এটা বাস্তবতা।
No comments:
Post a Comment