Friday, April 7, 2017

...........ঈদে মিলাদুন্নবি: আরেক পরিহাসের নাম.............

আজ সময় এমন যে, আমাদের মুসলিম নামধারী জনগোষ্ঠীর পশ্চাদপদতা দেখে যে কেউ আমাদের মুখের উপরে তিক্ত ভাষায় বলে ফেলতে পারে- ‘‘তোমাদের ইসলাম তো একটি পশ্চাদপদ ধর্ম ।’’ কিন্তু আমরা তার যৌক্তিক প্রতিবাদ করতে পারি না। 


পারি না কারণ যদি বলি ইসলাম পশ্চাদপদ নয়, ইসলাম যুগোপযোগী ধর্ম, তাহলে আমরা ধরা খেয়ে যাই। এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, আমরা ভালো মুসলিম না বা আমরা ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছি, তাই আমাদের আজ এই অবস্থা। প্রকৃত ইসলামে থাকলে আমাদের এই পশ্চাদপদ অবস্থা হবার কথা ছিল না। কিন্তু এ কথা স্বীকার করে নেওয়ার মতো স্পর্ধা তো থাকতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে- আমরা তা স্বীকার করতে রাজী নই।

কেউ যদি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েও দ্যায় যে, দ্যাখো- আল্লাহর রসুলের ইসলাম ছিল এই এই, আর তোমরা এখন এই এই করে কার্যত ইসলাম থেকেই বহির্গত হয়ে গেছো, তোমরা নিজেদের মনগড়া অন্য একটি ইসলাম দাঁড় করিয়ে নিয়েছো, তখন আমাদের মাথা গরম হয়ে যায়। কী? আমরা কেউ ইসলামে নেই? এত বড় কথা? আমাদের লাখ লাখ মসজিদ, কোটি কোটি নামাজী। আমাদের কথা না হয় বাদই থাকল, সৌদির মুসলমানরাও সহিহ মুসলমান না এটা কেমন কথা?

জ্বি, আপনারা যদি মনে করেন আপনারা খুব ইসলামের মধ্যে আছেন এবং ইসলামের মধ্যে থাকার পরও আপনাদের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে- আপনারা সারা পৃথিবীর সবচাইতে পশ্চাদপদ, নির্যাতিত, নিগৃহীত, অপমানিত ও অসহায় জনসংখ্যা, পৃথিবীর সমস্ত জাতির লাত্থি খাওয়ার বিশ্বরেকর্ড এখন আপনাদের দখলে, তাহলে এটাই বলব যে, আপনাদের এই ইসলামে থাকায় আর যাই হোক বিশ্বনবীর কোনো লাভ হয় নি।

ইসলামের প্রাক্কালে মুসলিমদের সোনালী সভ্যতা অর্ধপৃথিবীর বুকে বিশ্বনবীর যে সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল, আজকের অবস্থা তার ঠিক বিপরীত। আজ আমাদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড দেখে মানুষ বিশ্বনবীকে জঙ্গি বলে, আমাদের সাম্প্রদায়িকতা দেখে লোকে বিশ্বনবীকে সাম্প্রদায়িক বলে, ধর্মের নামে আমাদের অপরাজনীতি দেখে তারা বিশ্বনবীকেও তেমনটাই মনে করে। আমাদের ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে আমরা বিশ্বনবীর পবিত্র সংগ্রামী জীবনকে খাটো করে ফেলেছি। আমরা নিজেদের হাতে বিশ্বনবীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছি। এটাই নির্মম বাস্তবতা। আসলে বিশ্বনবী আমাদের জন্য গর্বের হলেও, আমরা বিশ্বনবীর জন্য লজ্জার কারণ।

পৃথিবীতে আমরা মুসলমানরা এখন গোলাম জাতি। যার ইচ্ছা হয় আমাদের মারতে পারে, কাটতে পারে, নদীতে-সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে পারে, আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ করতে পারে, শিশুদের বুকে গুলি চালাতে পারে। এমন গোলাম জাতির যোগ্যতা থাকে না বিশ্বের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জন্মদিন পালন করার। আগে তো ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করুন, নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করুন, তারপর ঈদে মিলাদুন্নবি জায়েজ কি না-জায়েজ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন।

No comments:

Post a Comment