Friday, April 7, 2017

..........দুনিয়া মু’মিনের জেলখানা, কাফেরের জন্য জান্নাত..........

এ হাদীসটিকে সামনে টেনে অনেকে পৃথিবীময় দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিমদের লজ্জা ঘোঁচানোর প্রয়াস পান। বোঝাতে চান যে, মুসলমানরা এই দুনিয়ায় যতই দুর্দশায় থাকুক পরকালে তারা পাবে জান্নাত। আর অমুসলিমরা এই দুনিয়াতেই সুখ-শান্তি-আরাম-আয়েশ ভোগ করে নিচ্ছে, পরকালে তারা থাকবে জাহান্নামে।


এটা কত বড় অপব্যাখ্যা একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায়। মুসলিমদের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস কে না জানে? আল্লাহর রসুলের ইন্তেকালের মাত্র কয়েক বছর পরেই এই জাতি সামরিক শক্তিবলে অর্ধপৃথিবীর শাসকে পরিণত হয়েছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা-দীক্ষা, সামরিক শক্তি, অর্থনৈতিক প্রাচুর্য, সবদিক দিয়ে তারা এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছিল। পড়ে পড়ে মার খাওয়াই যদি মো’মেনদের নিয়তি হত তবে ঐ জাতিটি কি মো’মেন ছিল না? আসলে বিষয়টা তা নয়।

মো’মেন কারা এ প্রশ্নের উত্তরে কোর’আনে বলা হচ্ছে- তারাই খাঁটি মো’মেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় (মানবতার কল্যাণে) সংগ্রাম করে (হুজরাত ১৫)।

এই আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে আল্লাহর দেওয়া শর্ত মোতাবেক প্রতিটি মো’মেন তার জীবন ও সম্পদ মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করতে দায়বদ্ধ থাকে। তারা অবারিত সুযোগ পেলেও কাফেরদের মত অমানবিক ভোগ-বিলাসিতা, আনন্দ-ফূর্তিতে মেতে উঠতে পারে না। ঈমানের কারণে তাদের হাত-পা এক প্রকার বাঁধা থাকে। পাহাড় পরিমাণ সম্পদও যদি একজন মো’মেন পায় সে ঐ সম্পদকে মানবতার কল্যাণে বিলিয়ে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

কিন্তু কাফেরদের বেলায় তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা নিশ্চিন্তে আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, চরম ভোগবাদী জীবনযাপন করতে পারে। তারা তাদের জীবনকে উদযাপন করতে গিয়ে নিজের সম্পদ তো বটেই, অপরের অধিকার কেড়ে নিতেও কার্পণ্য করে না। এ কারণেই বলা হয়েছে- ‘‘আদ্দুনিয়া সিজনুল মুমিনি অজান্নাতু লিল কাফিরিন।’’ দুনিয়া মো’মেনের জন্য কারাগার, কিন্তু কাফেদের জন্য বেহেশত। এটা ‘‘ব্যক্তি মো’মেন’’ ও ‘‘ব্যক্তি কাফেরের’’ ব্যাপার।

কিন্তু জাতিগতভাবে মো’মেনরা হবে পৃথিবীর কর্তৃত্বের অধিকারী, পৃথিবীর অভিভাবক। সমস্ত পৃথিবীতে ন্যায়, সুবিচার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব থাকবে তাদের কাঁধে। এখানে এসে দুনিয়া আর মো’মেনদের কারাগার থাকবে না, দুনিয়া কারাগার হয়ে যাবে অন্যায়কারী, অত্যাচারী শক্তির।

সুরা নুরের ৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন- ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও আমলে সালেহ (পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম) করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন, যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে ‘‘শান্তি’’ দান করবেন।’’

এই আয়াতে মো’মেনদেরকে আল্লাহ যে শাসনকর্তৃত্ব ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা কি পরকালের জন্য নাকি পৃথিবীর জন্য? আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন ‘পৃথিবীতে’। যারা ইসলামকে দুনিয়াবিমুখ প্রমাণ করতে চান এবং যারা মো’মেনদেরকে পার্থিব জীবনে ‘অসহায়’ প্রমাণ করতে চান তাদের কথা সঠিক হলে আল্লাহ মো’মেনদেরকে এই প্রতিশ্রুতিগুলো দিতেন না। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর কর্তৃত্ব মো’মেনদের হাতে থাকুক বা নমরুদের হাতে থাকুক- তাতে কিছু যায় আসত না। মো’মেনরা ভয়-ভীতির মধ্যে দিন কাটানোতেও কোনো সমস্যা ছিল না। আল্লাহ কেবল জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ইতি টানতেন।

No comments:

Post a Comment