Friday, April 7, 2017

নবীজীর কোন দাস ছিল না


নবীজির কোনো দাস ছিল না, ভৃত্য ছিল, খাদেম ছিল। কোর'আনে দাস বোঝাতে রাকাবাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়, ঘোড়ার রেকাব আর রাকাবাত একই রুট, অর্থ রশি দিয়ে বাধা। তিনি নবী হওয়ার আগেও দাস রাখেন নি, নবী হওয়ার পরে প্রশ্নই আসে না। যায়েদকে (রা.) তিনি ২৫ বছর বয়সেই আজাদ করে দেন এবং যায়েদ স্বেচ্ছায় আজীবন তার সঙ্গে থেকেছেন। তাকে তিনি কেবল মুক্তই করেন নি, আরবে দাসদের প্রতি যে নিচু দৃষ্টি দেওয়া হতো তার প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি যায়েদকে (রা.) তার সন্তান হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাকে বহু যুদ্ধে সেনানায়ক করেছেন এবং আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), খালেদ (রা.) এর মতো বড় বড় কোরেশ বংশীয় সাহাবীরাও তার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। যারা নেতৃত্ব মানতে চায় নি তাদের বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহ কঠিনভাবে তিরস্কার করেছেন।
আমি ইসলামবিদ্বেষী অনেক মানুষ দেখেছি যারা অন্ধভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং শত্রুর দৃষ্টিতে ইসলামের ইতিহাসকে দর্শন করছে। ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে লেখা হয় ঠিক যেমন কোল্ড ওয়ারের সময় সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে। ইসলামবিদ্বেষীরা ঐ সব লেখা থেকেই তাদের রেফারেন্স ও যুক্তিগুলো লাভ করে। ফলে তারা নিজেদের মুক্তমনা মনে করলেও কার্যত একটি মতবাদের দ্বারাই প্রভাবিত হয়। আমার পাঠকদের কাছে আশা যে তারা নির্মোহভাবে সত্যকে আবিষ্কারের জন্য আলোচনা চালাবেন। মানবজাতির আদর্শিক সংকটকালে পথ বেছে নিতে, ঐক্যবদ্ধ হতে হলে চশমা খুলে সাদা চোখে দেখার মানসিকতা অপরিহার্য।
রসুল বা রসুলের কোনো সাহাবী কি দাসব্যবসা করেছেন? করেন নি। কেন করেন নি? রসুলের সময় মদীনায় কি দাস কেনা বেচার ইতিহাস দেখাতে পারবেন? পারবেন না। দাসদের মুক্ত করার জন্য কোর'আনে বহুবার বলা আছে। সে সময় আরবের জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বড় অংশই ছিল দাস দাসী যাদের উপর সমাজব্যবস্থা নির্ভরশীল ছিল এবং তারাও তাদের মনিবদের উপর জীবিকা ও আশ্রয়ের জন্য নির্ভরশীল ছিল। পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই সমাজের বুনন। কিন্তু এই সম্পর্কের ভিত্তি কী হবে, চুক্তি কী হবে সেটাই ইসলাম পরিবর্তিত করে দিয়েছে। যদি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না এনে কেবল দাসদের মুক্ত করে দিতে বাধ্য করা হয় তার পরিণামে সৃষ্টি হয় আরেক ভারসাম্যহীনতা। যেমন আজও আমেরিকায় নিগ্রোদেরকে সাদারা হীন দৃষ্টিতে দেখে। এ সত্য যারা এড়াতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।
ইসলাম মনিবদেরকে এই ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছে যে, দাসরা তাদের ভাই। বিশ্বনী (স) বলেন: “তোমাদের দাসরা তোমাদের ভাই। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার অধীনে তার কোন ভাই থাকবে সে যেন তার জন্য সেইরূপ খাওয়া পরার ব্যবস্থা করে যেরূপ সে নিজের জন্যে করবে। এবং যে কাজ করার মত শক্তি তার নেই সে কাজ করার হুকুম যেন সে না দেয়। আর একান্তই যদি সে সেইরূপ কাজের হুকুম দেয় তাহলে সে নিজে যেন তার সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসে।” [আল বুখারী]
.
এখানেই শেষ নয়। ইসলাম দাসদের আশা-আকাংখা ও অনুভূতি উপলব্ধির প্রতিও যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেছে। বিশ্বনবী (সা.) বলেন: তোমাদের কেউ যেন (দাসদের সম্বন্ধে) এরূপ না বলে যে, আমার দাস এবং আমার দাসী; উহার পরিবর্তে বলতে হবে, ঐ আমার সেবক এ আমার সেবিকা।” [এ হাদীসের বর্ণনাকারী ছিলেন হযরত আবু হুরাইরা (রা)।]
.
হাদীসের এই শিক্ষা অনুযায়ীই হযরত আবু হুরাইরা (রা) যখন দেখতে পান যে, এক ব্যক্তি ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে এবং তার গোলাম তার পেছনে পায়ে হেটে যাচ্ছে, তখন তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন: তাকেও ঘোড়ার পিঠে তোমার পেছনে বসিয়ে দাও; কেননা সে তোমার ভাই; তোমার ন্যায় তারও প্রাণ আছে।”

No comments:

Post a Comment