হেযবুত তওহীদ যখন প্রচলিত ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, ধর্মব্যবসা ও ধর্মের নামে অপরাজনীতির অসারতা ধরিয়ে দিয়ে ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা তুলে ধরছে তখন অবাক হয়ে লক্ষ করি একদল ধর্মান্ধ কিছু না বুঝেই ‘ধর্ম গেল ধর্ম গেল’ জিগির তুলে দেয়। অথচ ধর্ম কী বস্তু তা তারা নিজেরাও জানে না, তাদের কথিত ধর্মগুরুরাও জানে না। ধর্ম বলতে তারা বোঝে বাপ-দাদার আমল থেকে যেটা পালন করে আসছে সেটা। আল্লাহ কী বলেছেন, রসুল কী করেছেন তা নয়, অমুক মাওলানা সাহেব যা বলেছেন সেটাই তাদের ধর্ম।
এই লোকগুলোকে যখন বলা হচ্ছে তোমরা যেটা করছো সেটা ইসলাম নয়, তোমরা আসলে আল্লাহর এবাদত করছ না, এবাদত করছ তোমাদের ধর্মগুরুদের, তখন তারা আগামাথা না ভেবেই ‘ইসলাম গেল’ ‘ইসলাম গেল’ রব তুলে দেয়। আরে ভাই ইসলাম থাকলে তো যাবে? নামাজ, রোজা, হজ্ব, সুন্নাতে খাৎনাকেই ইসলাম মনে করলে বিরাট ভুল হয়ে যাবে।
এগুলো ইসলামের আগেও ছিল। এগুলো পালন করা সত্ত্বেও কোরাইশরা আল্লাহর চোখে মুশরিক ছিল। আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা বলে বিশ্বাস তারাও করত। তা সত্ত্বেও তারা আল্লাহর রসুলের বিরোধিতায় লিপ্ত ছিল। ক্বাবাকে তারা এত শ্রদ্ধা করত যে, ক্বাবা পরিষ্কার করতে ঝাড়ু লাগাত না ক্বাবার অশ্রদ্ধা হবে ভেবে। দাড়ি দিয়ে ক্বাবা ঝাট দিত। আজকের অতি মুসলিমদের মতই তারা ধর্মকর্মে ছিল অনন্য। নিজেদেরকে ভাবত মিল্লাতে ইব্রাহীম। তবু ওরা মোশরেক, কাফের, আল্লাহদ্রোহী।
আল্লাহর রসুল যখন সত্য প্রচার শুরু করলেন আজকের ধর্মান্ধদের মত ওই কোরাইশরাও তখন ধর্ম গেল ধর্ম গেল জিগির তুলত। আজকে যেমন হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে খৃষ্টান, মুরতাদ বলে অপপ্রচার চালানো হয়, তেমনি আল্লাহর রসুলকে বলা হত মুরতাদ। বর্তমানের ধর্মান্ধদের মতই কোরাইশরা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ত এই ভেবে যে, মোহাম্মদ (সা.) না আবার তাদের ধর্ম নষ্ট করে ফেলে, ঈমান ধ্বংস করে ফেলে। সবচাইতে হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে- আল্লাহর রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করত কোরাইশরা।
হযরত ওমর (রা.) এর জীবনীর উপর নির্মিত একটি চলচ্চিত্র থেকে একটি ক্লিপ দিলাম। এতে দেখা যাচ্ছে খন্দকের যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে কোরাইশরা ক্বাবাঘর ছুঁয়ে শপথ নিচ্ছে যে, তাদের শেষ মানুষটি জীবিত থাকা পর্যন্ত তারা মোহাম্মদ (সা.) এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। বিষয়টা আজকের যুগে হাস্যকর মনে হলেও তৎকালীন আরবে ছিল ‘ফ্যাক্ট’। তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল, কেন নামাজ-রোজা-ক্বাবা তাওয়াফ ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও ও আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা বলে বিশ্বাস করার পরও আরবরা কাফের-মোশরেক ছিল, কেন আল্লাহর রসুলকে মুরতাদ ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল, কী কারণে কোরাইশ ধর্মগুরুরা আল্লাহর সত্য নবীকে ‘শত্রু’ বানিয়ে নিল, তা আমরা হেযবুত তওহীদ বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারছি।


No comments:
Post a Comment